ধরার বুকে আমার যত হয়েছে সুনাম
সবই হয়েছে গেয়ে মদীনা ওয়ালার শান।
যখন আমি গাই নবীজির শান ভালোবেসে
জানিনা এত খুশি কোথা থেকে আসে
সেই খুশিতে জুড়াই যাই পরান। ঐ)
আমি জর্জ ব্যারিস্টার মন্ত্রী নয় মূল্য কতই আর
তবে যাহার শান গাই তিনি দো'জাহানের সরদার
তাহার প্রেমিক স্বয়ং আল্লাহ মহান। (ঐ)
হৃদয় থেকে শুনে যারা ঐ নবীজির শান
আমি নিশ্চিত তার ভালো লাগে না দুনিয়াবিগান
সে শান কেড়েছে অধম ইকবালেরই প্রাণ। (ঐ)
শায়ের মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন কাদেরী-এর রচিত এবং জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ওয়াহিদুল ইসলাম পারভেজ-এর সুরেলা কণ্ঠে পরিবেশিত না'ত "মদীনা ওয়ালার শান" নবীপ্রেমের এক অনন্য নিদর্শন। এই আধ্যাত্মিক গীতিকবিতাটি একদিকে যেমন শায়েরের আত্মনিবেদন প্রকাশ করে, তেমনই অন্যদিকে প্রিয় নবী (সাঃ)-এর মহিমা ঘোষণার এক শক্তিশালী দলিল। শিল্পী ওয়াহিদুল ইসলাম পারভেজের হৃদয়গ্রাহী পরিবেশনা শায়েরের এই গভীর ভাবকে কোটি শ্রোতার হৃদয়ে পৌঁছে দিয়েছে।
শায়েরের কলমে বিনম্র ঘোষণা
না'তের মূল ভাবটি শায়ের মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন কাদেরী-এর কলম থেকে উৎসারিত হয়েছে এক গভীর বিনম্রতার সঙ্গে। তিনি ঘোষণা করেন যে পার্থিব জগতে তাঁর যেটুকু পরিচিতি বা খ্যাতি, তা তাঁর ব্যক্তিগত কোনো অর্জন নয়। বরং তা একমাত্র "মদীনা ওয়ালার শান" বর্ণনা করার ফল। তাঁর লিরিক্সে সেই আত্ম-সমর্পণের আবেগ অত্যন্ত স্পষ্ট: "ধরার বুকে আমার যত হয়েছে সুনাম, সবই হয়েছে গেয়ে মদীনা ওয়ালার শান।" শায়ের যখন বিনয়ের সঙ্গে নিজেকে সাধারণ মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেন—'আমি জর্জ ব্যারিস্টার মন্ত্রী নয় মূল্য কতই আর'—তখনই তিনি তাঁর গুণগানের বিষয়বস্তুর মহত্ত্ব তুলে ধরেন। কারণ, সেই প্রিয় নবী (সাঃ) হলেন স্বয়ং 'দো'জাহানের সরদার'—যিনি দুই জগতেরও নেতা।
কণ্ঠের জাদুতে আধ্যাত্মিক আর্তি
শায়েরের এই গভীর আধ্যাত্মিক বাণীর শক্তি বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে কণ্ঠশিল্পী ওয়াহিদুল ইসলাম পারভেজ-এর পরিবেশনায়। তাঁর আন্তরিক গায়কী এই গজলটির মূল আবেদনকে শ্রোতার মনে সঞ্চারিত করে। লিরিকে শায়েরের যে অনাবিল আনন্দ ও আধ্যাত্মিক সন্তুষ্টির কথা বলা হয়েছে—"যখন আমি গাই নবীজির শান ভালোবেসে / জানিনা এত খুশি কোথা থেকে আসে / সেই খুশিতে জুড়াই যাই পরান"—তা পারভেজের সুরে যেন মূর্ত হয়ে ওঠে, যা প্রতিটি শ্রোতার হৃদয়ে এক ধরনের 'ইশক-এ-রাসূল' জাগিয়ে তোলে।
দুনিয়াবি মোহ থেকে মুক্তির বার্তা
এই না'তটি কেবল প্রশংসা নয়, এটি জাগতিক মোহ থেকে মুক্তির এক আহ্বান। শায়েরের বিশ্বাস, একবার যারা হৃদয় থেকে নবীজির শান শোনেন, তাদের কাছে আর কোনো 'দুনিয়াবিগান' ভালো লাগে না। কারণ, সেই পবিত্র শান শায়েরের 'প্রাণ কেড়েছে'। অর্থাৎ, নবীপ্রেমের কাছে জাগতিক সব আকর্ষণই তুচ্ছ হয়ে যায়। "মদীনা ওয়ালার শান" গজলটি তাই শায়ের এবং কণ্ঠশিল্পী—উভয়ের সার্থক সমন্বয়ে নবীপ্রেমের এক চিরায়ত বার্তাকে বহন করে চলেছে।