ওগো মাদীনা মনোয়ারা হে: কবি গোলাম মোস্তফার কালজয়ী সৃষ্টি বাংলা ইসলামিক সাহিত্যের ইতিহাসে যে কয়টি গজল মুসলিম হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করেছে, তার মধ্যে কবি গোলাম মোস্তফা রচিত "ওগো মাদীনা মনোয়ারা হে" অন্যতম। এই কালজয়ী গজলটি শুধুমাত্র একটি কবিতা নয়, বরং প্রতিটি আশেকে রাসুলের হৃদয়ের আকুতি। মদিনা শরীফের প্রতি ভালোবাসা এবং রাসুল (সাঃ)-এর রওজা মোবারকের প্রতি ভক্তি এই গজলের প্রতিটি চরণে ফুটে উঠেছে। এটিকে বাংলা নাতে রাসুল বা ইসলামিক সংগীতের একটি মাস্টারপিস বলা হয়।
ওগো মাদীনা মনোয়ারা হে (গজলটির লিরিক্স ও ভাবার্থ) - লেখক: কবি গোলাম মোস্তফা
ওগো মদিনা মনোয়ারাহে
ওগো মদিনা মনোয়ারা
কে বলে তুঁমি মরুভূমি
কে বলে তুঁমি মরুভূমি
কে বলে তুঁমি সর্বহারা।।
মরুভূমি নওগো তুঁমি তুঁমিযে ফুল বাগিচা
তোঁমার ফুলের খুশবু নইলে
দুনিয়ার সব ফুলযে মিছা
তোঁমার ফুলের খুশবু পেলে
ত্রিভূবন মাতোয়ারা।।
তোঁমার বুকে আসল কে
যাঁর নামেতে কা’বা ঝুঁকে
যাঁর আসাতে আরশ ঝুঁকে
একটি নামও পেল লোকে
আল্লাহ আল্লাহ সবার মুখে
রোজ হাশরের দুঃখ দেখে
তুঁমি মোদের সাহারা।।
আগুন ঢালা আকাশ হবে
রোজ কিয়ামত ময়দানে
নফসি নফসি করবে সবাই
খোঁজবে ছায়া কোনখানে
সেদিনতো ছায়া হবে
তোঁমার মরু সাহারা,
ওগো মদিনা মনোয়ারাহে
গজলের মূল ভাবার্থ: মরুভূমি নাকি জান্নাতি বাগান? সাধারণ দৃষ্টিতে মদিনা একটি মরুভূমি মনে হলেও, কবি গোলাম মোস্তফার আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে তা এক জান্নাতি ফুল বাগিচা। গজলটির বিখ্যাত পংক্তি— "কে বলে তুমি মরুভূমি, কে বলে তুমি সর্বহারা"—এর মাধ্যমে কবি বুঝাতে চেয়েছেন যে, যেখানে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) শায়িত আছেন, তা কখনো শুষ্ক মরুভূমি হতে পারে না। রাসুল (সাঃ)-এর উপস্থিতিতে মদিনা হয়ে উঠেছে বিশ্ববাসীকে পথ দেখানো এক আলোকবর্তিকা এবং শান্তির 'সাহারা' বা আশ্রয়স্থল।
বাংলা সাহিত্যে কবি গোলাম মোস্তফার অবদান বিখ্যাত কবি গোলাম মোস্তফা তার লেখনীর মাধ্যমে ইসলামী রেনেসাঁর জাগরণ ঘটিয়েছিলেন। তার রচিত "ওগো মাদীনা মনোয়ারা হে" গজলটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষের মুখে মুখে গীত হয়ে আসছে। এটি কেবল সুরের মূর্ছনা নয়, বরং মুমিনের হৃদয়ে মদিনার প্রেম জাগ্রত করার এক অনবদ্য মাধ্যম। বাংলাভাষী মুসলিমদের কাছে মদিনার আধ্যাত্মিক রূপ তুলে ধরতে এই গজলটি অসামান্য ভূমিকা পালন করে।
