ভাব-সম্প্রসারণ : বাংলা ২য় পত্র - নবম ও দশম শ্রেণি, এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা (৪র্থ পর্ব)

ভাব-সম্প্রসারণ : বাংলা ২য় পত্র - নবম ও দশম শ্রেণি, এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা (৪র্থ পর্ব)
Join Telegram for More Books
Table of Contents

 ভাব-সম্প্রসারণ : বাংলা ২য় পত্র - নবম ও দশম শ্রেণি, এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা (৪র্থ পর্ব)

ভাব-সম্প্রসারণ : বাংলা ২য় পত্র - নবম ও দশম শ্রেণি, এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা (৪র্থ পর্ব)

কবি-সাহিত্যিকদের লেখায় কখনো কোনো একটি বাক্যে বা কবিতার এক বা একাধিক চরণে গভীর কোনো ভাব নিহিত থাকে। সেই ভাবকে বিস্তারিতভাবে লেখা, বিশ্লেষণ করাকে ভাব-সম্প্রসারণ বলে। যে ভাবটি কবিতার চরণে বা বাক্যে প্রচ্ছন্নভাবে থাকে, তাকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করতে হয়। সাধারণত সমাজ বা মানবজীবনের মহৎ কোনো আদর্শ বা বৈশিষ্ট্য, নীতি-নৈতিকতা, প্রেরণামূলক কোনো বিষয় যে পাঠে বা বাক্যে বা চরণে থাকে, তার ভাব-সম্প্রসারণ করা হয়। ভাবসম্প্রসারিত ক্ষেত্রে রূপকের আড়ালে বা প্রতীকের ভেতর দিয়ে যে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়, তাকে যুক্তি, উপমা, উদাহরণ ইত্যাদির সাহায্যে বিশ্লেষণ করতে হয়।

ভাব-সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে যেসব দিক বিশেষভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন : 

  • উদ্ধৃত অংশটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
  • অন্তর্নিহিত ভাবটি বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
  • অন্তর্নিহিত ভাবটি কোনো উপমা-রূপকের আড়ালে নিহিত আছে কি না, তা চিন্তা করতে হবে। 
  • সহজ-সরলভাবে মূল ভাবটিকে ফুটিয়ে তুলতে হবে।
  • মূল বক্তব্যকে প্রকাশরূপ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে যুক্তি উপস্থাপন করতে হবে। 
  • বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • বক্তব্য সাধারণত বিশ থেকে পঁচিশ লাইনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। 

(toc)

মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাস ধন নহে

মূলভাব : বিলাস ব্যসন নয়, মানবকল্যাণে ব্যয়িত অর্থই প্রকৃত ধন। বস্তুগত অর্থের যত উপযোগিতাই থাক না কেন, তা দ্বারা মানবসমাজের যত পরিবর্তন হোক না কেন, মানুষ যতটুকুই তৃপ্তি লাভ করুক না কেন, মনের উদারতা ও মানব মঙ্গলের চেয়ে মূল্যবান ধন আর নেই। 
সম্প্রসারিত ভাব : মানব সমাজ আজন্ম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এর একটি দিক হচ্ছে কিভাবে, কতটুকু অর্থের পাহাড় গড়ে তোলা যায় এবং তা নিজের কিংবা মানবসমাজের হিতকর উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যায়। অর্জিত কিংবা প্রাপ্য ধন-সম্পদের সার্থকতা নির্ভর করে এর যথার্থ ব্যবহারের ওপর। অর্জিত অর্থ চরম ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে পারে। তা ব্যক্তিকে তৃপ্ত করতে পারে, কিন্তু পূর্ণতা দিতে পারে না। কেননা এ অর্থে মানবকল্যাণ সাধিত হয়নি। ব্যক্তিক প্রয়োজনে ব্যয়িত অর্থে ব্যক্তির প্রয়োজন শুধু মেটে না, অনেক সময় অতি অর্থের সমাগমে সে সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করেই ক্ষান্ত হয় না; সমাজ এমনকি নিজের জন্যও মহাক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব অর্থ ধন নয় এবং তা কখনোই জাতীয় শক্তির উৎস হতে পারে না। ধনীর ধন তা উপার্জিতই হোক কিংবা দানের মাধ্যমেই অর্জিত হোক, তাতে সমাজের সাধারণ মানুষেরও অল্পবিস্তর অধিকার রয়েছে। সমাজ, সমাজের মানুষ এবং নিরন্নদের বঞ্চিত করে কেবল নিজস্ব ভোগ-বিলাসে যে অর্থ মানুষ ব্যয় করছে তা ধন নয়। মহামানবদের দৃষ্টান্তথেকে দেখা যায় যে, এদের অনেকেই ধন-সম্পদের অধিকারী ছিলেন না। তাদের যতটুকু সম্পদ ছিল তা মানবকল্যাণে ব্যয় করেছেন। ধনের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যই হচ্ছে মানবমঙ্গলের জন্য তা উৎসর্গ করা। বিলাসিতায় ব্যয়িত অর্থ অপব্যয় মাত্র; ধন নয়। সহজ কথায় অর্থের কোনো স্থায়িত্ব নেই। সুতরাং একে ধন বলা যাবে না। মানবমঙ্গল ভাবনা মানব চরিত্রের মহান বৈশিষ্ট্য। এ প্রবণতা মানবজীবনে সম্পদ বলে বিবেচিত হতে পারে। 
মন্তব্য : প্রকৃত ‘ধন' তাই যার দ্বারা মানবতা উপকৃত হয়; মানবমঙ্গল বিধান করা যায়। সৎপ্রেরণা থেকে উৎসারিত কর্ম ও অর্থ ব্যয়ই প্রকৃত ধন। 
 

দ্বার রুদ্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি
সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি? 

মূলভাব : সত্য মানবজীবন অমৃতের মতো, কিন্তুু এটি সহজলভ্য নয়। ভুল-ভ্রান্তিকে বাদ দিয়ে নিছক সত্যানুসন্ধান করলে দুর্লভ সত্যকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেননা, সত্য অবিমিশ্র নয়; মিথ্যার পাশেই তার অবস্থান।
সম্প্রসারিত ভাব : সত্যের অনুসন্ধান এবং তা লাভ করা মানবজীবনের পরম এবং একমাত্র লক্ষ্য হলেও তা অর্জন করা কঠিন। কারণ মানবজীবন মাটির কলসে তোলা কোনো পবিত্র পানি নয়, তা নদীর প্রবহমান জলধারা এবং সেখানে থাকে অনেক আবিলতা। এর মধ্যে থেকে মানুষকে পানের যোগ্য পানিটুকু ছেঁকে নিতে হয়। সত্যও নদীর জলধারার মতো। তার সঙ্গে মিশে থাকে অনেক মিথ্যা এবং ছলনা। সত্য ও মিথ্যা পাশাপাশি অবস্থান করে। এ দুটি এমন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত যে একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি উদ্ঘাটন করা সম্ভব নয়। আলোর সঙ্গে অন্ধকার যেমন জড়িত, তেমনি সত্যও মিথ্যা দ্বারা আবৃত। জীবনের কণ্টকিত পথে চলতে চলতে মানুষ সকল ভুল-ভ্রান্তি ও মিথ্যাকে অতিক্রম করে একসময় সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ায়; জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা অর্জন করে পরম সত্যকে। যারা ভুল-ভ্রান্তিগুলোকে অতিক্রম না করে শুধু সত্য লাভ করতে চায়, তারা দুর্লভ সত্যের সন্ধান কখনো পায় না। সত্যকে আবিষ্কারের জন্য রূঢ় বাস্তবের দৃপ্ত পদচারণ প্রয়োজন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিষধর সাপের মস্তক থেকে যেমন উদ্ধার করতে হয় মূল্যবান মানিক, তেমনি ভুল-ভ্রান্তি এবং পঙ্কিলতা থেকে উদ্ঘাটন করতে হয় হিরণয় সত্যকে। শিশু যেমন আছাড় খেতে খেতে হাঁটতে শেখে, মানুষও তেমনি ভুল-ভ্রান্তির মধ্য দিয়ে সত্যকে চিনে নেয়। মিথ্যা ছাড়া সত্যের অস্তিত্ব অকল্পনীয়। অন্তত মানবজীবনে এটি সত্য। মানুষের ভুল হবেই। তবে সে ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন। দিনকে যেমন রাতের সঙ্গে তুলনা করেই চেনা যায়, তাপকে যেমন শৈত্যের সঙ্গে তুলনা করে অনুভব করা যায় সত্যকেও তেমনি মিথ্যার পাশাপাশি রেখেই নির্ণয় করতে হয়। এজন্য প্রয়োজন মুক্তবুদ্ধির চর্চা করা। উদারনৈতিক মনোভাব ও অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টির মাধ্যমে মানুষ সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে; কেবল মিথ্যা, পঙ্কিলতা থেকে নিজেকে দূরে রাখার মধ্য দিয়ে নয়। মন্দের ভয়ে যদি কেউ মনের দ্বারই বন্ধ করে রাখে তাহলে তিনি প্রার্থিত বস্তুটি লাভ করতে পারেন না।
মন্তব্য : সত্য কিংবা মিথ্যাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে উদ্ঘাটন করা সম্ভব নয়। একটি আরেকটির সাথে এমনভাবে জড়িয়ে আছে যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
 

জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর

মূলভাব : স্রষ্টার সৃষ্ট জীবকে ভালোবাসলেই স্রষ্টার সেবা করা হয়। স্রষ্টাকে পাওয়ার উত্তম পথ হচ্ছে তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসা। স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করেছেন। তাই তাঁকে খুশি করতে হলে তাঁর সৃষ্টিকুলকে খুশি করতে হবে। 
সম্প্রসারিত ভাব : শুধু ঈশ্বরের প্রার্থনা করলেই তাঁকে পাওয়া যায় না বা নির্জনে বসে আল্লাহর ধ্যানে মত্ত থাকলেও ধর্ম পালন করা হয় না। তাঁর সৃষ্ট জীবের প্রতি সদয় হলেই তাঁকে ভালোবাসা হয়। কোনো মানুষ যদি ঈশ্বরকে পেতে চায় তবে ঈশ্বরের সৃষ্টি অন্য জীবকুলের প্রতি তাকে দয়া প্রদর্শন করতে হবে। সকল ধর্মেই সৃষ্টকুলকে ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে। কোনো ধর্মেই বলা হয়নি যে, মানুষ মানুষকে বা অন্য কোনো প্রাণীকে ঘৃণা করবে। তাই সকল জীবকে ভালোবাসার মাধ্যমেই আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসতে পারি। পবিত্র ধর্মগ্রন্থেও বলা হয়েছে যে, তোমরা যদি আমাকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার সৃষ্টিকুলকে ভালোবাস। এতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, সৃষ্টিকুলকে ভালোবাসার মাধ্যমে তাঁর সান্নিধ্য লাভ করা যায়। পবিত্র বৌদ্ধধর্মে বলা হয় ‘পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক।' মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষকে জ্ঞান, বিবেক ও বুদ্ধি দিয়ে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তাই শ্রেষ্ঠ জীব হয়ে জন্মগ্রহণ করেও যদি অন্য প্রাণীর প্রতি যত্নবান না হওয়া যায় তবে মনুষ্যত্ব লাভ করা যায় না। মনুষ্যত্ব মানুষকে দান করে হিরণয় দ্যুতি। যার আলোয় মানুষ পথ চলতে পারে। পৃথিবীতে অসংখ্য দীন-দরিদ্র মানুষ ও ঐশ্বর্যশালী মানুষের সাহায্য ও ভালোবাসা প্রত্যাশা করে। আর এসব দুস্থ, কাঙাল, অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতি দেখালে স্রষ্টার সন্তুষ্টি বিধান করা হয়। শুধু আর্তমানবকে নয়; পশুপাখির মতো মূক ও অসহায় প্রাণীকেও ভালোবাসতে হয়। আজকের পৃথিবীতে যে নৈরাজ্য তার মূলে রয়েছে জীবের প্রতি জীবের ভালোবাসার অভাব। আর তাই আমরা যদি মানুষের প্রতি মানুষ, জীবের প্রতি জীব, প্রাণীর প্রতি প্রাণী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই তবেই পৃথিবী হবে সুন্দর, সুশৃঙ্খল। 
মন্তব্য : স্রষ্টাকে পাওয়ার উত্তম পথ হচ্ছে তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসা। যদি তার সৃষ্টিকে ভালোবাসা যায় তবেই হবে ঈশ্বরকে ভালোবাসা, তবেই জীবন হবে অর্থপূর্ণ।

গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন

মূলভাব : ধন-সম্পদের সার্থকতা সদ্ভাবে ব্যয়ে আর বিদ্যার সার্থকতা মানসিক বিকাশ ও জগতের কল্যাণ সাধনে। কিন্তু বিদ্যা যদি বইয়ের পাতায় আবদ্ধ থাকে, চর্চা ও অনুশীলনের অভাবে কর্মক্ষেত্রে তার ব্যবহার না হয় তবে বাস্তবজীবনে সে বিদ্যার কোনো মূল্য নেই।
সম্প্রসারিত ভাব : বই হচ্ছে জ্ঞানের ধারক ও বাহক। বই পাঠ করে মানুষ তার জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে পারে। কিন্তু বিদ্যাকে আয়ত্ত না করে কেবল গ্রন্থগত করে রেখে দিলে বা বইয়ের তাকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখলে তা অর্থহীন হয়ে পড়ে। কারণ গ্রন্থগত বিদ্যা মানুষের প্রয়োজনের সময় কোনো কাজেই আসতে পারে না। অনুরূপ প্রয়োজনের সময় অর্থ-সম্পদ অপরের কাছে রেখে তা নিজের মনে করাটাও বোকামির শামিল। প্রয়োজনের সময় সে অর্থ কোনো কাজে আসে না। গ্রন্থকে সুসজ্জিত বইয়ের তাকে সাজিয়ে রেখে অনেকেই নিজেকে মহাজ্ঞানী ভাবেন। কিন্তু সেটা বোকামিরই পরিচয় বহন করে। আমাদের দেশের অনেক ছাত্রই বইপত্র কিনে টেবিল ভর্তি করে রাখে বা মুখস্থ করে পরীক্ষায় পাস করে বটে; কিন্তু তাতে তাদের প্রকৃত জ্ঞান আহরণ হয় না। আর তাই পরক্ষণেই সব কিছু ভুলে যায়। ধনসম্পদ বলতে বোঝায় যা মানুষের জীবনকে সুন্দর ও
জগতের সমস্ত কল্যাণ। উভয়ের দানে পুষ্ট হয়েছে আমাদের পৃথিবী। মানবসভ্যতা বিকাশে নারী ও পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই গড়ে উঠেছে আমাদের সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি।
মন্তব্য : প্রকৃতপক্ষে পুরুষের শৌর্য-বীর্য আর নারীহৃদয়ের সৌন্দর্য, প্রেম ও ভালোবাসা এ দুয়ের সমন্বয়েই বিশ্বের সকল উন্নতি সাধিত হয়েছে। তাই নারীর অবদানকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই।

স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।

মূলভাব : অনেক ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করা একটি পরাধীন জাতির জন্য অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু স্বাধীনতার যথার্থ মূল্য দিয়ে তাকে রক্ষা করা আরো বেশি কঠিন কাজ। এ কারণে অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা ও সুসংহত করার জন্য প্রত্যেকটি নাগরিকের অতন্দ্রপ্রহরীর মতো সদা সতর্ক থাকা প্রয়োজন। 
সম্প্রসারিত ভাব : ‘স্বাধীনতা' মানুষের হৃদয়ে কাক্সিক্ষত শব্দ। স্বাধীনতা প্রতিটি মানুষের জন্মগত অধিকার। আর মানুষ মাত্রই স্বাধীনতাকামী। পরাধীন জীবন কারো কাম্য নয়। জীবনের পরিপূর্ণ আস্বাদ গ্রহণের জন্য মানুষ চায় স্বাধীনতা। কবি তা উচ্চারণ করেছেন ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে কে বাঁচিতে চায়?' তাই প্রত্যেক মানুষের প্রধান আকাক্সক্ষা স্বাধীনতা। কিন্তু স্বাধীনতা ছাড়া কোনো মানুষই অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে না। স্বাধীনতা কথাটি যতই মধুর হোক না কেন, এটা অর্জন করা অনেক কঠিন। এটা অর্জন করতে অত্যন্ত বেদনাদায়ক, অনেক মূল্যের বিনিময়ে কিনতে হয়। বিদেশি শাসন-শোষণের নিষ্পেষণ থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন হয় কঠিন সংগ্রামের। প্রায়ই ক্ষেত্রে বিদেশি শাসক শক্তি হয় পরাক্রমশালী। তাদের থাকে সুশৃঙ্খল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। সেই সঙ্গে বিপুল রণসম্ভার। তাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে প্রয়োজন হয় জাতীয় ঐক্য, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, বিপুল সাংগঠনিক শক্তি এবং দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি। স্বাধীনতা সংগ্রামে সংগ্রাম হয় প্রত্যক্ষ, শত্রু থাকে প্রকাশ্য এবং লক্ষ্য হয় একমুখী। স্বাধীনতার দুর্বার আকাক্সক্ষায় জনগণ অগ্রসর হয় ত্যাগী মনোভাব নিয়ে। স্বার্থবুদ্ধি বা বিভেদের শক্তি তখন বড় হয়ে উঠতে পারে না। তার অস্তিত্ব থাকলে তা হয় অদৃশ্য। কিন্তু পদে পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় স্বাধীনতা-উত্তরকালে দেশ গঠনপর্বে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দেশের যাত্রা শুরু হয়। একদিকে থাকে পরাজিত শক্তি ও তাদের এদেশীয় অনুচরদের জিজ্ঞাসা ও মরণ কামড়ের জ্বালা, অন্যদিকে স্বাধীনতা পক্ষের শক্তির অভ্যন্তরীণ রেষারেষি। এ পরিস্থিতিতে নব অর্জিত স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার চক্রান্ত মোকাবিলা করা সহজ নয়।  ভৌগোলিক ও পতাকার স্বাধীনতা নিয়ে বেঁচে থাকা তখন দুরূহ কাজ হয়ে দাঁড়ায়। সে কারণে অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা করা অনেক কঠিন কাজ। এ কারণে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে চাই সঠিক নেতৃত্ব। অর্থনৈতিক মুক্তির স্বাধীনতাই আমাদের কাম্য। তা না হলে জীবনে উন্নতি ও প্রগতি হবে না। স্বাধীনতা অর্থবহ হবে না। তাই আমাদের দরকার দায়িত্ব ও কর্তব্যের সঙ্গে কাজ করা। 
মন্তব্য : বলিষ্ঠ ও আত্মপ্রত্যয়ী জাতি হিসেবে আমাদের স্বাধীনতাকে অটুট রাখতে সচেষ্ট থাকতে হবে। তবেই অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব। নতুবা অর্জিত স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়বে। আপন কর্মপ্রেরণা, চিন্তাধারা ও শৃঙ্খলাবোধের দ্বারাই প্রমাণ করতে হবে কাক্সিক্ষত স্বাধীনতার আদর্শ।
  

দুঃখের মতো এত বড় পরশপাথর আর নেই।

মূলভাব : প্রত্যেক মানুষের জীবনে রয়েছে সুখ-দুঃখের সহাবস্থান। একটিকে ছাড়া অন্যটি মানুষ সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। দুঃখের সংস্পর্শে না এলে মানুষের স্বীয় সত্তা ও অন্তরশক্তি সঠিকভাবে জাগ্রত হয় না। দুঃখের পরশেই মানুষের বিবেক জাগ্রত হয়, মানুষের জীবন হয় মানবিক বোধে আলোকিত, মানুষ হয়ে ওঠে মহানুভব ও মহীয়ান। 
সম্প্রসারিত ভাব : স্রষ্টার বিচিত্র রূপ। তিনি কখনও করুণা ধারায় তাঁর সব সুধা ঢেলে দেন, কখনও তিনি দুঃখের রুদ্রমূর্তি ধারণ করে আমাদের পরীক্ষায় ফেলেন। সুখবিলাসী মানুষ জীবনের সারবত্তা পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারে না। দুঃখে পতিত হলে মানুষ সুখের যথার্থ মর্ম বুঝতে পারে। দুঃখের দারুণ দহন শেষে মানুষের জীবনে যে সুখ আসে, তা অনাবিল ও অতুলনীয়। দুঃখই পারে মানুষের অন্তর্নিহিত মনুষ্যত্ব ও বিবেককে জাগ্রত করতে এবং মানুষকে খাঁটি মানুষে পরিণত করতে। দুঃখ মোকাবিলা করার শক্তি দিয়েই মানুষ আপন শক্তির পরিচয় দিতে পারে। পৃথিবীতে মহৎ কিছু অর্জন করতে হলে দুঃখ সইতে হয়। কষ্ট ছাড়া কেষ্ট পাওয়া যায় না বলেই পৃথিবীতে মহামনীষীরা দুঃখকে তুলনা করেছেন পরশপাথরের সঙ্গে। পরশপাথরের ছোঁয়ায় লোহা যেমন স্বর্ণপিণ্ডে পরিণত হয়, দুঃখও তেমনি মানুষের জীবনকে নতুন রূপ দেয়; দুঃখ, কষ্ট ও ত্যাগ-তিতিক্ষা ছাড়া জীবনের স্বর্ণশিখরে আরোহণ সম্ভব নয়। পৃথিবীর বহু মনীষী দুঃখকে অন্তর দিয়ে অনুভব করেছিলেন। দুঃখকে বরণ করে নিয়েছিলেন বলেই আজও তারা স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.), যিশুখ্রিস্ট, গৌতম বুদ্ধ প্রমুখ মহান ধর্মবেত্তা দুঃখকে জয় করে খাঁটি মানুষে পরিণত হয়েছিলেন; কাজ করেছিলেন মানবজাতির কল্যাণে।
মন্তব্য : বস্তুত, মানুষের মনুষ্যত্ব ও অন্তর্নিহিত গুণাবলির জাগরণের জন্য দুঃখ মানুষের জীবনে পরশপাথরের মতোই কাজ করে।
  

বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। 

মূলভাব : সৃষ্টিকর্তা নারী ও পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে। তাই নারী ও পুরুষ চিরকালের সার্থক সঙ্গী।
সম্প্রসারিত ভাব : জগতে চিরকালই পুরুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সকল ক্ষেত্রে নারী ছায়ার মতো পাশে থেকেছে। নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াস ছাড়া এই বিশ্বসংসার, সমাজ, সভ্যতা সবকিছুই অন্ধকারেই থেকে যেত। নারী ও পুরুষ পাশাপাশি থেকেছে বলেই সভ্যতার অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়েছে। তাই নারী ও পুরুষ একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সৃষ্টির আদিমকাল থেকে নারী পুরুষকে জুগিয়েছে প্রেরণা, শক্তি ও সাহস। আর পুরুষ বীরের মতো সব কাজে অর্জন করেছে সাফল্য। আজ পর্যন্ত বিশ্বে যত অভিযান সংঘটিত হয়েছে, তার অন্তরালে নারীর ভূমিকাই মুখ্য। যুদ্ধক্ষেত্রে বীর যেমন জীবন দান করেছে তেমনি নারীও তার সিঁথির সিঁদুর হারিয়েছে। আবার ইতিহাসে পুরুষের পাশাপাশি অনেক বীরাঙ্গনাও রয়েছে যারা যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধ করেছে। সংগত কারণেই নারী ও পুরুষের কার্যক্ষেত্রে ভিন্নতা আছে। তবুও নারী যেমন পুরুষের ওপর নির্ভরশীল, পুরুষও তেমনি নারীর মুখাপেক্ষী। তাই নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের জীবন অসম্পূর্ণ, অর্থহীন। নারী ও পুরুষের মিলনের মধ্যেই রয়েছে জগতের সমস্ত কল্যাণ। উভয়ের দানে পুষ্ট হয়েছে আমাদের পৃথিবী। মানবসভ্যতা বিকাশে নারী ও পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই গড়ে উঠেছে আমাদের সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি।
মন্তব্য : প্রকৃতপক্ষে পুরুষের শৌর্য-বীর্য আর নারীহৃদয়ের সৌন্দর্য, প্রেম ও ভালোবাসা এ দুয়ের সমন্বয়েই বিশ্বের সকল উন্নতি সাধিত হয়েছে। তাই নারীর অবদানকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই


সঙ্গদোষে লোহা ভাসে।

মূলভাব : মানুষের স্বভাব-চরিত্রের বিকাশের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে সঙ্গী নির্বাচন।
সম্প্রসারিত ভাব : প্রত্যেক মানুষই তার জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন সত্তা বহন করে। সে একাই তার বিবেককে নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এক্ষেত্রে তার সঙ্গের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ভবিষ্যতের সুন্দর বা খারাপের বিষয়টি নির্ভর করে ব্যক্তির ইচ্ছা বা সঙ্গ নির্বাচনের ওপর। যেসব মানুষ উন্নত চরিত্র বা সৎ-স্বভাবের লোকের সঙ্গে মেলামেশা করে, তাদের স্বভাব-চরিত্রও সুন্দর ও বিকশিত হয়ে ওঠে। অন্যদিকে যারা কুসঙ্গে বা কুসংসর্গে এসেছে তাদের চরিত্রের অধঃপতন ঘটেছে। চরিত্রের গঠনে ভালো মন্দ উভয় দিকই নির্ভর করে সঙ্গী নির্বাচনের ওপর। যারা খারাপ সঙ্গীর সংস্পর্শে থেকে নিজেদের চরিত্রের অধঃপতন ঘটিয়েছে, সমাজে তাদের বিপর্যয় অনিবার্য। তাই মানবজীবনে সঙ্গ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রকৃতিতেও যেসব বস্তু সুন্দর ও রমণীয়, সেগুলোর সংস্পর্শে যেসব বস্তু থাকে তারাও সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। খারাপ বস্তুটি সুন্দর বস্তুটির গুণ নিজের মধ্যে ধারণ করে অন্যের কাছে নিজেকে মর্যাদাবান ও গ্রহণযোগ্য করে তোলে। প্রকৃতপক্ষে, সঙ্গই সৃষ্টিকে মহিমান্বিত করে তোলে। আর এজন্য সঙ্গই হলো সবকিছুর সাফল্য ও বিফলতার চাবিকাঠি। ব্যক্তি যতই মনে করুক সে ভালো চরিত্রের অধিকারী হবে সে তা কখনোই হতে পারবে না যদি খারাপ সঙ্গীর সংস্পর্শে থাকে। কেননা খারাপের সঙ্গে থাকতে থাকতে একসময় প্রভাবিত হয়ে ব্যক্তি খারাপকে গ্রহণ করবে। তাই ভালো চরিত্র লাভ করতে ভালো সঙ্গী নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য : ব্যক্তির চরিত্র গঠনে সঙ্গই ভালো মন্দের নির্ণায়ক।
 

লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।

মূলভাব : লোভের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। লোভ মানুষের পরম শত্রু। লোভ মানুষকে অন্ধ করে; তার বিবেক বিসর্জন দিয়ে তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
সম্প্রসারিত ভাব : লোভের বশবর্তী হয়েই মানুষ জীবনের সর্বনাশ ডেকে আনে। মানুষ নিজের ভোগের জন্য যখন কোনো কিছু পাওয়ার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করে তাকে লোভ বলে। তখন যা নিজের নয়, যা পাওয়ার অধিকার তার নেই, তা পাওয়ার জন্য মানুষ লোভী হয়ে ওঠে। সে তার ইচ্ছাকে সার্থক করে তুলতে চায়। লোভের মোহে সে সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ সব বিসর্জন দেয়। তার ন্যায়-অন্যায় বোধ লোপ পায়। সে পাপের পথে ধাবিত হয়। নিজের স্বার্থের জন্য অন্যের সর্বনাশ করে। এভাবে লোভ মানুষকে পশুতে পরিণত করে। ডেকে আনে মৃত্যুর মতো ভয়াবহ পরিণাম। লোভের মোহে পড়লে মানুষের ব্যক্তিত্ববোধ লোপ পায়। ফলে লোভ ব্যক্তি তার হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সচেষ্ট থাকে। এতে তারচাহিদা তো পূরণ হয়ই না বরং আরও পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলে একসময় লোভের কারণে তার পতন আসন্ন হয়ে ওঠে।
মন্তব্য : লোভের কারণে অন্তরের সুখ হারিয়ে যায়। ফলে এটি ব্যক্তির পতনের কারণ হয়। তাই সার্থক জীবনের জন্য লোভ পরিহার করা প্রয়োজন।
 

জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান।

মূলভাব : জ্ঞান বা বিবেক না থাকলে মানুষ ও পশুর মধ্যে কোনো তফাৎ থাকে না।
সম্প্রসারিত ভাব : সৃষ্টির অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষকে আলাদা করেছে তার বিবেক বা জ্ঞান, যা অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে নেই। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই জ্ঞান বা বিবেক সুপ্ত অবস্থায় থাকে। অনুশীলনের মাধ্যমে তাকে জাগিয়ে তুলতে হয়। জ্ঞান মানুষকে যোগ্যতা দান করে। নানা বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলে। জ্ঞানের আলোকেই মানুষের জীবন বিকশিত হয়ে ওঠে। তাই মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের জন্য জ্ঞানের সহায়তা অপরিহার্য। অন্য প্রাণীর সঙ্গে মানুষের পার্থক্য এখানেই। জ্ঞানবান মানুষ কখনো খারাপ কাজ করতে পারে না। তার বিবেক তাকে খারাপ আচরণ করতে বাধা দেয়। অন্যদিকে জ্ঞানহীন মানুষ পশুর মতো নির্বোধ। পশুর যেমন জ্ঞান নেই। সে ন্যায়-অন্যায় বোঝে না। আপন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে না। জ্ঞানহীন ব্যক্তিরও তেমনি কোনো বিবেক নেই। জ্ঞানের অভাবে তারা আধুনিক জীবনের সম্পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করতে পারে না।  তাদের জীবনের সঙ্গে পশুর জীবনের কোনো পার্থক্য নেই। জ্ঞানই মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্যের সীমারেখা টেনে দেয়। জ্ঞান রয়েছে বলেই মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। এটি মানুষের জীবনে হিরন্ময় শিখার মতো অনন্য মানবীয় গুণ। জ্ঞানই একজন মানুষকে পরিপূর্ণ মানুষরূপে গড়ে তোলে। পশু যেমন নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ধুকে ধুকে মৃত্যুবরণ করে তেমনি জ্ঞানহীন মানুষের ক্ষেত্রেও একই ঘটে। ফলে জ্ঞান নামক মানবীয় গুণের উপস্থিতিই মানুষকে পশু থেকে উন্নত করে তুলেছে।
মন্তব্য : পশুর বিবেক নেই বলেই সে বেঁচে থাকাকেই জীবনের ধর্ম মনে করে। আর বিবেকহীন মানুষেরাও পশুর মতো কুপ্রবৃত্তির দাসত্তে নিমগ্ন থাকে। তাই জ্ঞানহীন মানুষ এবং পশুর মধ্যে কোনো প্রভেদ নেই।

আপনার পছন্দের আর পোস্ট
WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

Post a Comment

Assalamu Alaikum Wa Rahmatullah
Greetings!
Provide your feedback.