প্রশ্ন: কেয়ামত সম্পর্কে ও কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার প্রাক্কালে বড় বড় আলামত সমূহ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী।
উত্তর: কেয়ামত সংঘটিত হওয়া অনিবার্য। তবে কখন সংঘটিত হবে তা আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ভালো জানেন। ক্বোরআন ও হাদীস শরীফে তা সংঘটিত হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোন বর্ণনা পাওয়া না গেলেও কেয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে এ বিশ্বাস প্রত্যেক মুসলিমকে অবশ্যই রাখতে হবে এবং তা ঈমানের অপরিহার্য দাবী। কেয়ামতের নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ না থাকলেও পবিত্র ক্বোরআন ও অসংখ্য হাদীস শরীফে এর বিভিন্ন আলামত বা নিদর্শনাবলী উল্লেখ রয়েছে। মুসলিম শরীফে হযরত হুযায়ফা ইবনে উসায়েদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কেয়ামতের বড় বড় আলামত সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন- একদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে আগমন করলেন, আমরা তখন কেয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বলেন, যতদিন তোমরা দশটি আলামত দেখবে না, ততদিন কেয়ামত হবে না। আলামতগুলো হলো-১. ধোয়া বের হওয়া, ২. দজ্জালের আগমন, ৩. দাব্বা (ভূগর্ভ থেকে নির্গত অদ্ভুত এক জানোয়ারের প্রকাশ), ৪. পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয়, ৫. হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ামের আসমান হতে আগমন, ৬. ইয়াজুয- মা’জুযের আবির্ভাব, ৭. তিনটি বড় ধরনের ভূমিধসের মধ্যে পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে ভূমিধস, ৮. পশ্চিমে ভূমিধস, ৯. আরব উপদ্বীপে ভূমিধস, ১০. সর্বশেষ ইয়ামেন থেকে একটি অগ্নিশিখা বের হয়ে মানুষকে সিরিয়া তথা মাহশরের ময়দানে দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে।
[সহীহ মুসলিম শরীফ, কিতাবুল ফিতান অধ্যায়] এছাড়া কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার অন্যতম বড় আলামত হলো হযরত ইমাম মাহদী আলায়হিস্ সালাম-এর আবির্ভাব, যিনি তখনকার মুসলিম মিল্লাতের একচ্ছত্র খলিফা হবেন এবং পৃথিবীর সব মানুষকে ইসলামের অধীনে আনায়ন করত: ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডয়ন করবেন। হাদীসে পাকে উল্লেখ রয়েছে প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
المَهْدِى مِنِّى أحلى الجبهة اَقْنَى اَلْاَنْفِ يَمَلَاُ الْاَرْضَ قِسْطًا وَعدَلًا كما مُلِئَتْ جُوْرًا وظُلْمًا يَمْلَكَ سَبعَ سِنِّيْنَ-(رواه ابو داؤد)
অর্থাৎ- হযরত মাহদী আসবে আমার বংশধর হতে, তাঁর কপাল উজ্জ্বল হবে এবং নাক হবে উঁচু, পৃথিবী হতে যুলুম-নির্যাতন দূর করে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দেবেন আর সাত বছর পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করবেন। [আবু দাঊদ শরীফ, কিতাবুল মাহদী অধ্যায়] এছাড়া কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে আরো বহু আলামাতে সুগরা বা ছোট ছোট আলামত রয়েছে। হাদীসে পাকে হক্কানী ওলামায়ে কেরামের ইন্তেকালের মাধ্যমে ইলমে দ্বীন দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেয়া হবে, মুর্খতা, ব্যভিচার ও মদ্যপান বৃদ্ধি পাবে, পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে, মহিলার সংখ্যা বাড়বে, এমনকি একজন পুরুষের অধীনে বা ভাগে পড়বে ৪০ জন বা ৫০ জন নারী। [সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ] আর কেয়ামত তো অবশ্যই সংঘটিত হবে- এপ্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
وَاَنَّ الساعة اٰتِيَةُ لّارَيْبَ فِيْهَا وَاِنَّ الله يَبْعَثُ مَنْ فِى القبور- (سورة الحج)
অর্থাৎ অবশ্যই কেয়ামত আগমনকারী এতে কোন সন্দেহ নেই এবং নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা কবরবাসীদের সেদিন জিন্দা করে কবর হতে হাশরের ময়দানে উঠাবেন। [সূরা হজ্ব: আয়াত ৭]