সত্য পথের পথিকগণই কেবল নির্ভুল গন্তব্যে পৌছাতে সক্ষম। এই পথেই লাভ হয় সর্বোচ্চ সম্পদ‘আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি’।
এই পথ ইসলামের পথ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এই পথের পরিচিতি বিস্তারিতভাবে তাঁর তেইশ বছরের পয়গম্বরী জীবনে বর্ননা করে গিয়েছেন।
তিনি অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সর্বকালের মানুষের নবী। নবীদের নবী। জিন ফেরেশতা সমস্ত মাখলুকের নবী।
তিনি আল্লাহ্পাকের হাবীব-প্রেমাষ্পদ। তাঁর অনুসরণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবী। তাঁর প্রবর্তিত পথ ব্যতিরেকে আল্লাহ্ প্রাপ্তির আর কোন পথ নেই। ঐ ব্যক্তিই প্রকৃত জ্ঞানী, যিনি তাঁর সফল অনুসরণের সাধনায় আমৃত্যু নিয়োজিত রয়েছেন।
ইসলাম পূর্ন দ্বীন—-পূর্নাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এই পূর্নতা এমনই যে, তাঁর মধ্যে সংযোজন ও বিয়োজনের অবকাশ নেই। এই দ্বীন পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং পরিবর্জনের প্রয়োজন থেকে মুক্তও। হযরত আদম (আঃ) এর মাধ্যমে যে দ্বীনের বীজ বপন করা হয়েছিল, সেই দ্বীনই বিভিন্ন নবীগণের মাধ্যমে কালক্রমে পত্র-পুষ্পে পল্লবিত হয়ে পূর্নতা প্রাপ্ত হয়েছে মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর নিকটে এসে। আল্লাহ্পাক সঃ কথাই এরশাদ করেছেন এভাবে, ‘আজকে আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ন করে দিলাম’।
এই দ্বীন আমাদের জীবনে পূর্নরূপে প্রতিফলিত করাই আমাদের প্রধান কর্তব্যকর্ম। আল্লাহ্পাকের হুকুমও এই রকম। তাই এরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পূর্নরূপে ইসলামে দাখিল হয়ে যাও’।
মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তাঁর অন্তিম ভাষণে জানিয়ে দিয়েছেন, আমার পরে তোমরা দুটি জিনিসকে আঁকড়ে ধরবে- তবেই তোমরা ভ্রষ্টতা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। সে দুটি জিনিস হচ্ছে, কোরআন ও হাদিস।
আল কোরআন এবং আল হাদিসের মধ্যেই আমাদেরকে পূর্ন দ্বীনের স্বরূপ তালাশ করতে হবে। এর বাইরে আমাদের চিন্তা চেতনাকে পরিচালিত করার কোনই অবকাশ নেই। আবার কোরআন হাদিসের ঐরূপ অর্থই গ্রহণ করতে হবে, যেরূপ অর্থ উদ্ধার করেছেন আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সম্মানিত ইমামগণ। কারন শিয়া, মোতালিজা, খারেজী, কাদিয়ানী, মওদুদী প্রভৃতি পথভ্রষ্ট দলও কোরআন ও হাদিস থেকেই দলিল প্রমাণাদি পেশ করে থাকে। তাঁদের প্রদত্ত কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যা প্রবৃত্তিপ্রসূত এবং সত্যবিচ্যুত। একমাত্র আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামাতের আলেমগণই কোরআন হাদিসের সঠিক অর্থ হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁদের শিক্ষাধারা সম্মানিত সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এবং সলফে সালেহীনের অনুসরণের দীপ্তিতে সমুজ্জ্বল। এই জামাতই আল্লাহ্পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের পথের পথিকৃৎ। এই জামাতই নাজাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণের জামাত।
তাই প্রতিটি মুসলমানের জন্য প্রথম ফরজ কাজ, এই জামাতের আকিদা বিশ্বাস অনুযায়ী নিজেদের আকিদা বিশ্বাস বিশুদ্ধ করা।
আকিদা বিশ্বাস বিষয়ক সংক্ষিপ্ত বিবরণ এরকমঃ
১) আল্লাহ্পাকই অস্তিত্বও। আর যাবতীয় বস্তুকে আল্লাহ্পাকই অস্তিত্ব প্রদান করেছেন ।
২) আল্লাহ্পাকের জাত (অস্তিত্ব) এক, সেফাত (গুণাবলী) এক এবং আফআলও (কার্যাবলী) এক। কোন ব্যাপারেই তাঁর সংগে কারও কোন শেরকত (অংশ) নেই।
৩) আল্লাহ্পাকের জাতের মতো তাঁর সেফাত এবং আফআলও বেমেছাল (আনুরূপ্যবিহীন) ।
যেমন — এলেম (জ্ঞান) সেফাত—এই গুন আদিঅন্তবিহীন, অবিভাজ্য এবং আনুরূপ্যবিহীন। সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার জ্ঞাতব্য বিষয় এলেম সেফাত কর্তৃক বিকশিত হয়েছে। আল্লাহ্তায়ালা সমস্ত বস্তুকে তাঁদের অনুকূল প্রতিকূল অবস্থায় আংশিক ও সমষ্টিগতভাবে প্রত্যকের বিশিষ্ট সময় সহ এক অবিভাজ্য মুহূর্তেই জেনেছেন।
আল্লাহ্পাকের এলেম খন্ড-বিখন্ড হওয়া এবং অন্য কারো মতো হওয়া থেকে পবিত্রও। আল্লাহ্পাকের অন্যান্য সেফাতকেও এইরূপ ধারনা করতে হবে ।
যেমন কালাম (বাক্য) সেফাত। এই সেফাতও অবিভাজ্য, অতুলনীয় এবং এক। আল্লাহ্পাক আদি থকে অন্ত পর্যন্ত ঐ একটি বাক্য দ্বারাই বক্তা। আদেশ, নিষেধ, বিজ্ঞপ্তি অথবা যে কোন বিষয়ের বর্ননাই হোক না কেন, তা ঐ বাক্য থেকে উৎসারিত। তওরাত, ইঞ্জিল, যবুর অথবা কোরআন—সবই ঐ এক কালাম (বাক্য) সেফাত থেকে এসেছে। আল্লাহ্তায়ালার অন্যান্য সেফাতও তাঁর জাতের মতোই এক, অবিভাজ্য এবং তুলনাবিহীন।
এরকম আল্লাহ্পাকের আফআলও (কার্যকলাপও) এক, অবিভাজ্য এবং আনুরূপ্যবিহীন। সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাবতীয় কার্যকলাপ (সৃষ্টি, ধ্বংস, জীবন, মৃত্যু, উত্থান, পতন ইত্যাদি) ঐ এক ও অতুলনীয় কার্যেরই বিকাশ।
৪) আল্লাহ্তায়ালা কোন বস্তুর মধ্যে প্রবেশ করেন না এবং কোন বস্তুও তাঁর মধ্যে প্রবেশ করে না । তিনি যাবতীয় বস্তুকে ঘিরে আছেন, যাবতীয় বস্তুর সঙ্গে আছেন; কিন্তু এই ঘিরে থাকা ও সঙ্গে থাকা সম্পর্কে আমাদের ধারনায় যা আসে সেরকম অবশ্যই নয়। তিনি ধারনার অতীত ।
৫) আল্লাহ্পাকের জাত (স্বত্তা), সেফাত (গুন) ও আফআলের (কার্যাবলী) মধ্যে কোন পরিবর্তন হয় না ।
৬) আল্লাহ্তায়ালা গনি অর্থাৎ শর্তবিহীন, অভাবশুন্য। তাঁর জাত সেফাত আফআল কোন বিষয়েই তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। অস্তিত্বে, গুণাবলীতে, কার্যাবলীতে সর্ব বিষয়েই তিনি অমুখাপেক্ষী।
৭) আল্লাহ্পাক যাবতীয় ক্ষতি এবং নতুনত্বের কালিমা থেকে মুক্তও। তিনি দেহবিশিষ্ট নন—স্থান কাল সম্ভূতও নন। সমস্ত প্রকার পূর্নতা একমাত্র তাঁহারই মধ্যে বর্তমান।
৮) আল্লাহ্তায়ালা আদিঅন্তশুন্য। তিনি ব্যতীত কেউই আদিঅন্তশূন্য নয় ।
৯) আল্লাহ্তায়ালা সর্বশক্তিমান ও ইচ্ছাময়য়। তিনি ইচ্ছা এবং শক্তি প্রয়োগের ব্যাপারে সম্পূর্ন স্বাধীন। তিনি বাধ্যতা থেকে পবিত্র। যাবতীয় সৃষ্টি সর্বশক্তিমান ও ইচ্ছাময়ের সৃষ্টির প্রতি নির্ভরশীল । তিনিই সমস্ত সৃষ্টিকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এনেছেন। অতএব, সৃষ্ট বস্তুসমূহের অস্তিত্ব যেমন অস্তিত্ব প্রাপ্তি হিসেবে তাঁর মুখাপেক্ষী, তেমনি স্থায়িত্ব লাভের জন্যও তাঁরই মুখাপেক্ষী ।
১০) সৃষ্ট বস্তুসমূহ যেমন আল্লাহ্পাকের সৃষ্টি, তেমনি তাঁদের মধ্যে দৃশ্যমান তাছিরও (প্রতিক্রিয়া সমূহ) তাঁরই সৃষ্টি। যেমন, আগুনের প্রজ্বলন শক্তি, ওষুধের রোগ নিরাময় ক্ষমতা ইত্যাদি । সাধারণভাবে বস্তুসমূহের তাছির স্বীকার করতে হবে। কিন্তু সেই সঙ্গে এইরূপ ধারনা রাখতে হবে যে, আল্লাহ্তায়ালার ইচ্ছা না হলে কোন বস্তুর তাছির তো দূরের কথা, সেই বস্তুর অস্তিত্বও বিলুপ্ত হতে বাধ্য ।
১১) সৃষ্টি বস্তুর তাছির থেকে উপকার গ্রহণ তাওয়াক্কোল (আল্লাহ্র প্রতি নির্ভরতা) বিরোধী নয়, বরং এরকম করাই প্রকৃত জ্ঞানীর স্বভাব। যেমন রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ সেবন, যুদ্ধবিজয়ের জন্য অস্ত্রসম্ভার বৃদ্ধির প্রচেষ্টা, পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য অর্থ উপার্জনের প্রচেষ্টা ইত্যাদি।
১২) আল্লাহ্ তায়ালা ভাল মন্দ উভয় কার্যের স্রষ্টা। কিন্তু ভাল কাজে তিনি সন্তুষ্ট এবং মন্দ কাজে অসন্তুষ্ট। বান্দাগণের কেবল মাত্র ইচ্ছা করবার অধিকার আছে। বান্দাগণ ভাল অথবা মন্দ কাজের ইচ্ছা করলে আল্লাহ্পাকই তা সৃষ্টি করে দেন। তাই সৃষ্টি করনের কাজ আল্লাহ্তায়ালার সঙ্গে এবং এরাদা (ইচ্ছা) করবার স্বাধীনতার কারণে অর্জন করা বান্দাগণের সঙ্গে সম্বন্ধিত ।
১৩) তকদীরের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। তাকদীর অর্থ ভাগ্যলিপি। আল্লাহ্পাক যেহেতু আদি-অন্তের জ্ঞানসম্পন্ন, তাই তিনি প্রত্যকের কর্মফল সম্পর্কে অবশ্যই জানেন। তাঁর জ্ঞাতব্য বিষয় পূর্বাহ্নে লিপিবদ্ধ করা আছে। তাঁর নামই তকদীর ।
১৪) বেহেস্ত ও দোযখ বর্তমান আছে। বেহেস্ত লাভকারী ব্যক্তিগণকে অবশ্যই ইমানদার হতে হবে। প্রকৃতপক্ষে বেহেস্তে প্রবেশ আল্লাহ্পাকের মেহেরবানীর উপর নির্ভর করে। আর ঈমান হচ্ছে আল্লাহ্পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ মেহেরবানী ।
১৫) দোযখে প্রবেশের কারন কুফরি (অবিশ্বাস)। ইমানদার মানুষ কোন গুনাহ্র কাজে লিপ্ত হলে পার্থিব বিপদ আপদের মাধ্যমে তাঁর ক্ষতিপূরণ হয় অথবা আল্লাহ্পাক মৃত্যুর সময় কষ্ট দিয়ে তাকে পাপমুক্ত করে নেন। এর পরেও গুনাহ্ থাকলে কবরের আজাব তাঁর ক্ষতিপূরণের কারন হয় । তাঁর পরেও গুনাহ্ থাকলে কিয়ামতে ভয়াবহ আজাবের মাধ্যমে তাঁর গুনাহ্ মাফ করা হবে। এর পরেও কারো গুনাহ্ অবশিষ্ট থাকলে সাময়িকভাবে দোযখের শাস্তি ভোগের পর তাকে বেহেস্তে প্রবেশ করান হবে। কিন্তু যে প্রকৃতই কাফের বা অংশীবাদী অথবা আহলে কিতাব (যেমন মুর্তিপূজক, ইহুদী, খ্রিষ্টান, কাফের ইত্যাদি) সে অনন্তকাল ধরে দোযখের শাস্তি ভোগ করবে ।
১৬) ইমানদারগণ আখিরাতে আল্লাহ্তায়ালার দিদার লাভ করবেন। কিন্তু তা হবে দিক, প্রকার এবং উদাহরণ রহিত অবস্থায়। আমাদের ধারনায় দীদারের যে রকম অর্থ আসে সেরকম নয়। কারন, আল্লাহ্পাক যেমন ধারণাতীত, তেমনি তাঁর দীদারও হবে ধারণাতীত অবস্থায় ।
১৭) নবী ও রাসূল প্রেরণ আল্লাহ্পাকের রহমত। তাঁদের দ্বারাই মানুষ সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে সক্ষম হয়েছে। তাঁদের প্রতি ‘অহি’ (প্রত্যাদেশ) সত্য। অহির প্রতিকুল যা কিছু, সবই মিথ্যা ।
১৮) নবী ও রাসূলগণ নিষ্পাপ। তারা আল্লাহ্পাকের নির্বাচিত ব্যক্তি। আল্লাহ্পাকই তাদেরকে সর্ব অবস্থায় হেফাজত করেন বলে তারা গুনাহ্ থেকে সুরক্ষিত থাকতে সক্ষম হন। ঘটনাক্রমে তাঁদের দ্বারা কোন ভুল হলে আল্লাহ্পাকই তা সংশোধন করে দেন। ভুলের মধ্যে তারা স্থায়ীভাবে আবদ্ধ থাকেন না ।
১৯) হযরত মোহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) শেষ নবী। তাঁর পরে আর কোন নবী নেই ।
২০) কবর আজাব সত্য। কবরে মুনকির নকির নামক ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্ন করা সত্য ।
২১) কিয়ামত সত্য। হযরত ইস্রাফিল (আলাইহিস সালাম) এর শিঙ্গার এক ফুঁৎকারে যাবতীয় সৃষ্টবস্তু ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এক ফুঁৎকারে সবাই পুনর্জীবন লাভ করে হাশরের ময়দানে সমবেত হবে ।
২২) হাশরের ময়দানে আল্লাহ্পাক বান্দাগণের হিসাব গ্রহণ করবেন। মীযানেও (তুলাদণ্ডে) নেকি বদি ওজন করা হবে। সবাইকে পুলসিরাত অতিক্রম করার হুকুম দেওয়া হবে ।
২৩) ফেরেশতাগণ আল্লাহ্পাকের বান্দা। তারা নিষ্পাপ এবং ভুল-ভ্রান্তি থেকে পবিত্রও । তাঁদের পানাহার নেই। তারা স্ত্রীও নন, পুরুষও নন। বেলায়েতের (নৈকট্যের) দিক থেকে তারাই অগ্রগামী। নবুয়তের দিক থেকে নয়। আর নবুওত বেলায়েতের তুলনায় শ্রেষ্ঠ। বেলায়েতে সোগরা (অলিগণের বেলায়েত), বেলায়েতে কোবরা (নবীগণের বেলায়েত), বেলায়েতে উলিয়া (ফেরেশতাগনের বেলায়েত) যে কোন বেলায়েতই হোক না কেন, নবুওতের মোকাবেলায় তা মহাসমুদ্রের একবিন্দু পানির; বরং তাঁর চেয়ে কম। যেহেতু নবুয়তের সম্মান মানুষকে দেয়া হয়েছে, তাই বিশিষ্ট মানুষই বিশিষ্ট ফেরেশতার তুলনায় শ্রেষ্ঠ ।
২৪) ইমানের অর্থ দ্বীনের বিষয়ে যা কিছু আমাদের নিকট সঠিকভাবে পৌঁছেছে, তাঁর প্রতি কলব বা অন্তর দ্বারা বিশ্বাস করা, বাক্য দ্বারা সাক্ষী দেয়া এবং কার্য দ্বারা তা প্রমান করা ।
২৫) আকৃতিগত ভাবে ঈমান বাড়ে না, কমেও না। কিন্তু এর উজ্জ্বলতা বাড়ে বা কমে। যেমন সাধারণ মুমিনের ইমানের ঔজ্জ্বল্য অপেক্ষা নবী অলিগণের ইমানের ঔজ্জ্বল্য অনেক বেশী। ইমানদারগনের দৃঢ়ভাবে বলা উচিত, ‘আমি সত্য ইমানদার’। ইমামে আজম এরূপ বলতেন ।
২৬) নবীগণের মোজেজা এবং অলিগণের কারামত সত্য। মোজেজা নবুওতের দাবির শামিল। কারামত দাবির বিষয় নয়। বরং কারামত মোজেজার অনুসরণে সম্পাদিত হয় ।
২৭) খোলাফায়ে রাশেদীনের শ্রেষ্ঠত্বের ক্রম তাঁদের খেলাফতের ক্রমানুযায়ী। যেমন, হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদিয়াল্লাহু তালাআনহু) হযরত ওমর ফারুক (রাদিয়াল্লাহু তালাআনহু) অপেক্ষা , তিনি হযরত ওসমান (রাদিয়াল্লাহু তালাআনহু) অপেক্ষা এবং তিনি হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু তালাআনহু) অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ।
২৮) সম্মানিত সাহাবীগণের মধ্য যেসমস্ত কলহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, তাঁর উৎকৃষ্ট অর্থ গ্রহণ করতে হবে। ঐ সমস্ত কলহ প্রবৃত্তিপ্রসূত ছিল না। বুঝবার ভুলের কারনে ঐ সমস্ত ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। মাসআলা উদ্ধার করতে গিয়ে ভুল মাসআলা উদ্ধারকারী একগুণ সওয়াব এবং সঠিক মাসআলা উদ্ধারকারী দ্বিগুণ সওয়াব পান। রাসূলে পাক ( সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর সহবতের ফলে তারা কুপ্রবৃত্তির প্রভাব থেকে চিরদিনের জন্য মুক্তিলাভ করেছিলেন। সর্বশ্রেষ্ঠ অলিআল্লাহ্ও কখনো সর্বনিম্ন মর্যাদাধারী সাহাবীর মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হন না। কলুষ অন্তর বিশিষ্ট লোকেরাই কেবল সম্মানিত সাহাবীগনের সমালোচনায় লিপ্ত হয়ে পড়ে ।