আমাদের সাইটের নতুন আপডেট পেতে এ্যাপ্স ইন্সটল করে রাখুন Install Now!

কুরআনী আয়াত দ্বারা ইলমে গায়েবের প্রমাণ (Evidence of the unseen in knowledge by Quranic verses)

কুরআনী আয়াত দ্বারা ইলমে গায়েবের প্রমাণ (Evidence of the unseen in knowledge by Quranic verses)
Join our Telegram Channel!

 
কুরআনী আয়াত দ্বারা ইলমে গায়েবের প্রমাণ

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

(১) وَعَلَّمَ ادَمَالْاَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلَائِكَةِ

(এবং আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত কিছুর নাম শিখিয়ে দিলেন । অতঃপর সে সমস্ত বস্তু ফিরিশতাদের কাছে উপস্থাপন  করলেন ।)
তাফসীরে মাদারেকে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ

وَمَعْنَى تَعْلِيْمِه اَسْمَاءِ الْمُسَمِّيَاتِ انَّهُ تَعَالَى اَرَاهُ الاَجْنَاسَ الَّتِىْ خَلَقَهَا وَعَلَّمَهُ اَنَّ هذَا اِسْمُه‘ فَرَسٌ وَهذَا اِسْمُه‘ بَعِيْرٌ وَهذَا اِسْمُهَ كَذَا وَعَنْ اِبْنِ عَبَّسٍ عَلَّمَهُ اِسْمَ كُلِّ شَئْىٍ حَتّ الْقَصْعَةَ وَالْمَغْرَ فَةَ

(হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত বস্তুর নাম শিক্ষা দেয়ার অর্থ হচ্ছে-আল্লাহ তাআলা তাঁকে তাঁর সৃষ্ট সব কিছু দেখিয়েছেন এবং বলে দিয়েছিন যে এটার নাম ঘোড়া ঐটার নাম উট এবং ওটার নাম অমুক । হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে যে তাঁকে প্রত্যেক কিছুর নাম, শিখিয়ে দিয়েছেন এমন কি পেয়ালা ও কাঠের চামচের নাম পর্যন্ত ।
তাফসীরে খাযেনে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় একই কথা বলা হয়েছে তবে এতটুকু বাড়িয়ে বলা হয়েছে যে-

وَقِيْلَ عَلَّمَ ادَمَ اَسْمَاءَ الْمَلَئِكَةِ وَقِيْلَ اَسْمَاءَ ذُرِّيَّتِه وَقِيْلَ عَلَمَّهُ اللَّغَاتَ كُلَّهُا

(কারো মতে আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত ফিরিশতাদের নাম কারো মতে তার সন্তান সন্ততিদের নাম আবার কারো মতে সমস্ত ভাষা শিখানো হয়েছিল)
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে কবীরে লিখা হয়েছেঃ-

قَوْلُه اَىْ عَلَّمَهُ صفَاتَ الْاَشْيَاءِ وَنَعُوْ تَهَا وَهُوَ الْمَشْهُوْرُ اَنَّ الْمُرَالدَ اَسْمَاءُ كُلِّشَئْىِ مِنْ خَلْفٍ مِنْ اَجْنَاسِ الْمُحَدَثَاتِ مِنْ جَمِيْعِ اللُّغَاتِ الْمُخْتَلِفَةِ الَّتِىْ يَتَكَلَّمُ بِهَا وَلَدُ ادَمَ الْيَوْمَ مِنَ الْعَرَبِيَّةِ وَالْفَارِسِيَّةِ وَالرُّوْ مِيَّةِ وَغَيْرِهَا

(আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত বস্তুর বৈশিষ্ট্য ও অবস্থাদি শিক্ষা দিয়েছেন । এ কথাই প্রসিদ্ধ লাভ করেছে যে সৃষ্টবস্তু দ্বারা বোঝানো হয়েছে অচিরন্তন প্রত্যেক বস্তুর নাম সমূহ যেগুলো বিভিন্ন ভাষায় প্রচলিত হবে ও যে নামগুলো আজ পর্যন্ত আদম সন্তান সন্ততিগণ আরবী ফার্সী রুমী ইত্যাদি ভাষায় ব্যবহার করে আসছে ।
তাফসীরে আবুস সাউদে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ

وَفِيْلَ اَسْمَاءَ مَاكَانَ وَمَا يَكُوْنُ وُقِيْلَ اَسْمَاءِ خَلْقِه مِنَ الْمَعْقُوْ لاَتِ وَالْمَحْسُوْسَاتِ وَالْمُتَخَيَّلَاتِ وَالمَوْهُوْ مَاتِ وَالْهَمَهُ مَعْرَفَةَ ذَوَاتِ الْاَشْيَاءِ وَاَسْمَءَ هَاخَوَ الصَهَا وَمَعَارِ فَهَا اُصُوْلَ الْعِلْمِ وَقَوَانِيْنَ الصَّنْعَاتِ وَتَفَاصِيْلَ لْاَتِهَا وَكُيْفِيَةَ اِسْتِعْمَالَاتِهَ

(কারো মতে আদম (আলাইহিস সালাম) কে অতীত ও ভবিষ্যতের সমস্ত বিষয়ের নাম শিখিয়েছিলেন। ইন্দ্রিয়াতীত ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য কাল্পনিক ও খেয়ালী সবকিছুই শিক্ষা দিয়েছিলেন সব কিছুর সত্ত্বা নাম বৈশিষ্ট্য পরিচিতি জ্ঞান বা বিদ্যার নিয়মাবলী পেশা ও কারিগরী নীতিমালা এবং সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি ও সাজসর ক্রোমের বিস্তারিত বর্ণনা ও সেগুলোর ব্যবহার প্রণালী আদম (আলাইহিস সালাম) কে অবহিত করেছিলেন।)
তাফসীরে রুহুল বয়ানে আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছেঃ-

وَعَلَّمَه‘ اَحْوَالَهَا وَمَا يَتَعَلَّقَ بِهَا مِنَالْمَنَافِعِ الدِّيْنِيَّهِ وَالدُّنْيَوِيَّةِ وَعَلَّمَ اَسْمَاءَ الْمَلَا ئِكَةِ وَاَسْمَاءِ ذُرِّيَّتِهِ وَاَسْمَاءَ الْحَيْوَانَاتِ وَالْجَمَادَاتِ وَصَنْعَةَ كُلِّ شَئْىٍ وَاَسْمَاءَ الْمُدْنِ وَالْقُرَى وَاَسْمَاءَ الطَّيْرِ وَالشَّجَرِ وَمَا يَكُوْنُ وَاَسْمَاَءِ كُلِّ شَئْىٍ يَخْلُقُهَا اِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَاَسْمَاءَ الْمَطْعُوْ مَاتِ وَالْمَشْرُوْبَاتِ وَكُلِّ نَعِيْمِ فِى الْجَنَّةِ وَاَسْمَاءَ كُلِّ شَيْئٍ وَفِى الْخَبْرِ عَلَّمَهُ سَبْعَ مِاَئةِ اَلْفِ لُغَاتٍ

(হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) সমস্ত জিনিসের অবস্থাদি শিখিয়েছেন এবং এগুলোর অন্তর্নিহিত ধর্মীয়-পার্থিব উপকারিতার কথা বলে দিয়েছেন। তাকে ফিরিশতাদের নাম তার বংশধর জীব জন্তু ও প্রাণীবাচক বস্তু সমূহের নাম শিক্ষা দিয়েছেন প্রত্যেক জিনিস তৈরী করার পদ্ধতি সমস্ত শহর ও গ্রামের নাম সমস্ত পাখী বৃক্ষ রাজির নাম যা হয়েছে এবং যা হবে সবকিছুর নাম কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছুসৃষ্টি হবে সবকিছুর নাম যাবতীয় আহর্য দ্রব্য সামগ্রীর নাম বেহেশতের প্রত্যেক নিয়ামতের নাম মোট কথা প্রত্যেক কিছুর নাম শিখিয়ে দিয়েছিলেন । হাদীছ শরীফে আছে যে আদম (আলাইহিস সালাম) কে সাত লাখ ভাষা শিখিয়েছেন ।
উপরোক্ত তাফসীর সমূহ থেকে এতটুকু বোঝা গেল যে যা কিছু হয়েছে ও যা কিছু হবে সমস্ত কিছুর সম্পূর্ণ জ্ঞান হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে দান করা হয়েছে। তাকে বিভিন্ন ভাষাজ্ঞান দান করেছেন বিভিন্ন জিনিসের উপকারিতা ও অপকারিতা তৈরী করার পদ্ধতি যন্ত্রপাতির ব্যবহার সবকিছু দেখিয়ে দিয়েছেন । এখন আমাদের আকা মওলা সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জ্ঞান ভাণ্ডার দেখুন। সত্যি কথা এই যে হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) এর এ ব্যাপক জ্ঞান নবী করিম আলাইহিস সালামের জ্ঞান সমুদ্রের এক ফোটা তুল্য বা ময়দানের এক কণা সদৃশ।
শাইখ ইবনে আরবী তদ্বীয় ফুতুহাতে মক্কীয়া গ্রন্থে দশম অধ্যায়ে বলেছেনঃ-

اَوَّلُ نَائِبٍ كَانَ لَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخَلِيْفَتُهَ اَدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ

(অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালামের প্রথম খলীফা ও প্রতিনিধি হলেন হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) । এতে বোঝা গেল যে, হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) হলেন হুযুর আলাইহিস সালামের খলীফা । খলীফা হচ্ছেন তিনিই, যিনি আসমান বা প্রকৃত মালিকের অনুপস্থিতিতে তাঁর স্থলাভিশিক্ত হয়ে কাজ করেন। হুযুর আলাইহিস সালামের জন্মের আগেকার সমস্ত নবী (আলাইহিস সালাম) তারই প্রতিনিধি ছিলেন । এ কথাটি মৌলভী কাসেম ছাহেরও তদীয় তাহজীরুন নাস গ্রন্থে লিখেছেন যার বর্ণনা পরে করা হবে । এ হলো প্রতিনিধির ব্যাপক জ্ঞানের অবস্থা ।
কাযী আয়ায (রহমতুল্লাহে আলাইহে) এর শেফা শরীফ এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ নসিমুর রিয়ায এ উল্লেখিত আছেঃ-

اِنَّهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَرْضَتْ عَلَيْهِ الْخلَائِقُ مِنْ لَّدْنِ اَدَمَ اِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ فَعَرَفَهُمْ كُلُّهُمْ كَمَا عَلَّمَ اَدَمَ الْاَلسْمَاءَ كُلَّهَا

অর্থাৎ হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে আরম্ভ করে রোজ কিয়ামত পর্যন্ত তার বংশজাত আওলাদকে হুযুর আলাইহিস সালামের সম্মুখে উপস্থাপিত করা হয়েছিল। তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাদের সবাইকে চিনেছিলেন যেমনিভাবে হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে সবকিছুর নাম শিখানো হয়েছিল।
এ ভাষ্য থেকে বোঝা গেল যে হুযুর (আলাইহিস সালাম) সবাইকে জানেন সকলকে চিনেন ।

(২)  وَيَكُوْنَ لرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا

(এ রসুল তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণকারী ও সাক্ষী হবেন ।) এ আয়াতির ব্যাখ্যায় তাফসীরে আযীযীতে লিখা হয়েছে- হুযুর (আলাইহিস সালাম) স্বীয় নবুয়তের আলোকে প্রত্যেক ধর্ম পরায়ণ ব্যাক্তির ধর্মের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন । কোন ব্যক্তি ধর্মের কোন স্তরে পৌছেছেন তার ঈমানের হাকীকত কি এবং তার পরলৌকিক উন্নতির পথে অন্তরায় কি এসব কিছুইতিনি জানেন। সুতরাং হুযুর (আলাইহিস সালাম) তোমাদের বিশুদ্ধ চিত্ততা ও কপটতা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল । এ জন্যই তো পৃথিবীতে উম্মতের পক্ষে বা বিপক্ষে তার সাক্ষ্য শরীয়তের বিধানমতে গ্রহণীয় এবং অবশ্যই পালনীয় ।
তাফসীরে রূহুল বয়ানে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ-

هَذَا مَبْنِىّ عَلَى  تَضْمِيْنِ الشَّهِيْدِ مَعْنَى الرَّقِيْبِ وَالْمُطَلِّعِ وَالْوَجْهُ فِىْ اِعْتِبَارِ تَضْمِيْنِ الشَّهِيْدِ الْاِشَارَةُ اِلَى اَنَّ التَّعْدِيْلَ وَالتَّزْكِيَّةَ اِنَّمَا يَكُوْنُ عَنْ خُبْرَةِ وَمَرَاقَبَةٍ بِحَالِ الشَّاهِدِ وَمَعْنَى شَهَادَةِ الرَّسُوْلِ عَلَيْهِمْ اِطَّلَاعُهَ رُتَبَةَ كُلَّ مُتَدَينٍ بَدِيْنِه فَهُوَ يضعْرِفُ دَنَوْبَهُمْ وَحَقِيْقَةَ اِيْمَانِهِمْ وَاَعْمَالِهُمْ وَحَسَنَاتِهمْ وَسَيْئَاتِهِمْ وَاِخْلَاصِهُمْ وَنِفَاقِهُمْ وَغَيْرِ ذَالِكَ بِنُوْرِالْحَقِّ وَاُمَّتُهَ يَعْرِفُوْنَ ذَالِكَ مِنْ سَائِرِ الْاُمَمِ بِنُوْرِه عَلَيْهِ السَّلَامُ

অর্থাৎ এটা এ কারণেই যে আয়াতে উল্লেখিত شهيد শব্দটি রক্ষণাবেক্ষণাকারী ও ওয়াকিফহাল কথাটাও অন্তর্ভুক্ত করে এবং এ অর্থ দ্বারা একথারই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে কোন ব্যক্তির যথার্থতা ও দূষণীয় সাক্ষ্য প্রদান তখনই সম্ভবপর হবে, যখনই সাক্ষী উক্ত ব্যক্তির যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে  সম্যকরূপে ওয়াকিফহাল হয়। হুযুর আলাহিস সালামের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার অর্থ হচ্ছে তিনি প্রত্যেক ধর্মপরায়ণ  ব্যক্তির ধর্মীয় অবস্থা সম্পর্কে অবগত। সুতরাং বোঝা যায় যে হুযুর (আলাইহিস সালাম) মুসলমাদের গুনাহ সমূহ তাদের ইসলামের হাকীকত, তাদের ভালমন্দ কার্যাবলী তাদের আন্তরিকতা ও কপটতা ইত্যাদিকে সত্যের আলোর বদৌলতে অবলোকন করেন । হুযুর (আলাইহিস সালাম)  এর নিকট ও তার  নুরের ওসীলায় অন্যাণ্য সমস্ত উম্মতের অবস্থা ও কিয়ামতেন ময়দানে সস্পর্ণরূপে উদ্ভাসিত হবে।
তাফসীরে খাযেনে এ আয়াতেন ব্যাখায় লিখা হয়েছে

ثُمَّ يُؤْتَى بِمُحَمَّدٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَيُسْئَلُهُ عَنْ حَالِ اُمَّتِه فَيُزَ كِّيْهِمْ وَيَشْهَدُ بِصِدْقِهِمْ

(অতঃপর কিয়ামতের দিন হুযুর আলাইহিস সালামকে আহবান করা হবে। এর পর আল্লাহ তাআলা তাকে তার   উম্মতের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। তখন তিনি তাদের পবিত্রতা ও সত্যতার সাক্ষ্য দিবেন )
(
তাফসীরে মাদারেকে ২য় পারার সূরায়ে বাকারার এ আয়াতের তাফসীরে লিখা হইয়াছেঃ-

فَيُؤْتَى بِمُحَمَّدٍ فَيُسْئَلُ عَنْ حَالِ اُمَّتِه فَيُزَ كِّيْهِمْ وَيَشْهَدُ بِعَدَ الَتِهِمْ وَيُزَ كِّيْهِمْ وَيَعْلَمُبِعَدَا لَتِكُمْ

অর্থাৎ অতঃপর হুযুর (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) আহবান করা হবে তার উম্মতের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। তখন তিনি স্বীয় উম্মতের সাফাই বর্ণনা করবেন এবং তাদের ন্যায় পরায়ণ ও যথার্থ হওয়া সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবেন। সুতরাং হুযুর আলাইহিস সালাম আপনাদের যথার্থতা সম্পর্কে অবগত আছেন ।
এ আয়াত ও তাফসীর সমূহে এটাই বলা হয়েছে যে কিয়ামতের দিন অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরামের (আলাইহিস সালাম) উম্মতগণ আল্লাহর দরবারে আরয করবে হে আল্লাহ! আমাদের কাছে তোমার কোন নবী আগমন করেননি। পক্ষান্তরে ঐ সমস্ত উম্মতের নবীগণ আরয করবেনঃ হে খোদা আমরা তাদের কাছে গিয়েছি তোমার নির্দেশাবলী তাদের কাছে পৌঁছিয়েছি কিন্তু তারা গ্রহণ করেনি । আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নবীগণকে বলা হবে যেহেতু তোমরা বাদী সেহেতু তোমাদের দাবীর সমর্থনে কোন সাক্ষী উপস্থাপন কর । তারা তখন তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে হুযুর  (আলাইহিস সালামের উম্মতকে পেশ করবেন। তারা সাক্ষ্য দেবেন হে আল্লাহ । তোমার নবীগণ সত্যবাদী তারা তোমার নির্দেশাবলী স্ব স্ব উম্মতের কাছে পৌছিয়েছিলেন ।
এখানে দুটি বিষয়ের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা দরকার।
প্রথমতঃ- মুসলমানগণ সাক্ষ্য দেয়ার উপযুক্ত কিনা। (ফাসিক, ফাজির ও কাফিরদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। একমাত্র পরহেযগার মুসলমানদের সাক্ষ্যই গ্রহণযোগ্য।) দ্বিতীয়তঃ- এ সমস্ত লোকগণ তাদের পূর্বেকার নবীগণের জামানা দেখেননি । তবুও তারা  কিভাবে সাক্ষ্য  দিচ্ছেন । মুসলমানরা আরয করবেন ‘হে খোদা! আমাদেরকে তোমার হাবীব মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন যে, আগেকার নবীগণ ধর্ম প্রচার করেছিলেন। এটা শুনেই আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি। তখন হুযুর আলাইহিস সালামকে আহবান করা হবে ।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) দুটি বিষয়ের সাক্ষ্য দিবেন। একটি হলো এ সমস্ত লোকগণ এমন পাপিষ্ট বা কাফির নয় যে তাঁতের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং তাঁরা পরহেযগার মুসলমান। অন্যটি হলো তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলবেন-হ্যাঁ, আমিই তাদেরকে বলেছিলাম যে আগেকার নবীগণ নিজ নিজ উম্মতের কাছে খোদার ফরমান পৌঁছিয়েছিলেন ।
অতঃপর ঐ সব নবীগণের পক্ষে রায়  দেয়া হবে ।
এ বর্ণনা থেকে নিম্নোল্লেখিত কয়েকটি বিষয় জানা গেল ।
একঃ- হুযুর আলাইহিস সালাম কিয়ামত পর্যন্ত ভূ-পৃষ্ঠে  আগমণকারী মুসলমানদের ঈমান, আমল, রোযা, নামায ও নিয়ত সম্পর্কে সম্যকরূপে অবগত । নচেৎ তাদের সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয়া কিভাবে সম্ভবকোন মুসলমানের অবস্থা তার  দৃষ্টি বহির্ভূত হতেই পারে না । হযরত নূহ (আলাইহিস সালাম)  তাঁর কওমের ভবিষ্যৎ বংশধরদের অবস্থা জেনে আবেদন করেছিলেন- হে খোদা! এদের বংশোদ্ভূত  লোকগণও পাপিষ্ট ও কাফির হবে । সুতরাং, তুমি তাদেরকে ডুবিয়ে দাও। হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) যে শিশুটিকে হত্যা করেছিলেন, তার ভবিষ্যৎ অবস্থা  সম্পর্কে অবগতি লাভ করে বুঝতে পেরে ছিলেন যে, যদি সে জীবিত থাকে তবে আবাধ্য হবে তাহলে হুযুর আলাইহিস সালামের কাছে কারো অবস্থা কিভাবে গোপন থাকতে পারে?
দুইঃ- পূর্ববর্তী নবীগণ ও তাঁদের উম্মতগনের অবস্থা হুযুর আলাইহিস সালাম নূরে নবুয়তের বদৌলতে অবলোকন করেছিলেন এবং তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে সাল্লাম) সাক্ষ্যটা ছিল একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য। যদি তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সাক্ষ্য শ্রুত বিষয়ের সাক্ষ্য হতো, তাহলে এ ধরনের সাক্ষ্য মুসলমানরা তো আগেই দিয়েছে ।  শ্রুত বিষয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের সর্বশেষ পর্যায়ে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেয়া হয় ।
তিনঃ- এ থেকে আরও বোঝা গেল যে, আল্লাহ তাআলা-নবী যে সত্যবাদী, তা জানা সত্ত্বেও সাক্ষ্য প্রমাণ নিয়ে রায় দেন অনুরুপ যদি হুযুর আলাহিস সালাম, বিচার কার্য তদন্ত করেন এবং সাক্ষ্য প্রমাণ করেন, তখন এ কথা বলা যাবেনা যে, হুযুর আলাইহিস সালাম সে বিষয়ে অবগত নন। দায়েরকৃত মুকাদ্দমায় এটায় নিয়ম। (এ ব্যাপারে আর ও বিস্তারিত জানতে হলে আমার রচিত কিতাব শানে হাবীবুর রহমান-দেখুন) এ সাক্ষ্যের উল্লেখ পরবর্তী আয়াতের মধ্যেও রয়েছে।

৩) وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلَاءِ شَهِيْدًا

অর্থাৎ যে মাহাবুব (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমি আপনাকে এদের রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে আনব ।
তাফসীরে নিশাপুরীতে” এ আয়াতের  তাফসীরে উল্লেখিত আছে ।

لِاَنَّ رُوْحَهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ شَاهِدٌ عَلَى جَمِيْعِ الْاَرْوَاحِ وَالْقُلُوْبِ وِالنَّفُوْسِ بِقَوْلِه عَلَيْهِ السَّلَامُ اَوَّلُ مَاخَلَقَ اللهُ نُوْرِىْ

অর্থাৎ এটা এ কারনে যে হুজুর আলাইহিস সালামের রুহ মোবারক সমস্ত রুহ দিল ও সত্তা সমুহকে দেখতে পান । কেননা তিনিই বলেছেন- আল্লাহ তাআলা সর্ব প্রথম যা সৃষ্টি করেছেন’ তা হলো আমার নূর ।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রুহুল বয়ানে আছেঃ-

وَاعْلَمْ اَنَّهُ يُعْرَضُ عَلَى النَّبِىْ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَعْمَالُ اُمَّتِهِ غَدَوْةً وَعَشِيَّةً فَيَعْرِ فُهمْ بِسِيْمَاهُمْ اَعْمَالَهُمْ فَلِذَالِكَ يَشْهَدُ عَلَيْهِمْ

হুজুর আলাইহিস সালামের কাছে তার উম্মতের আমলসমূহ সকাল বিকাল পেশ করা হয়। তাই তিনি উম্মকতকে তাদের চিহ্ন দৃষ্টে চিনেন ও তাদের কার্যাবলী সম্পর্কে অবগত হন। এজন্য তিনি রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাদের ব্যপারে সাক্ষ্য দিবেন ।
তাফসীরে মাদারেকে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছেঃ

اَىْ شَاهِدً عَلَى مَنْ اَمَنَ بِالْاِيْمَانِ وَعَلَى مَنْ كُفُرَ بِالْكُفْرِ وَعَلَى مَنْ نَافَقَ بِالنِّفَاقِ

অর্থাৎঃ হুজুর আলাইহিস সালাম মুমিনদের জন্য তাদের ঈমানের’ কাফেরদের জন্য তাদের কুফরীর জন্য ও মুনাফিকদের জন্য মুনাফেকীর সাক্ষী।
এ আয়াত ও তাফসীর সসূহ দ্বারা বোঝা গেল যে, হুযুর আলাইহিস সালাম সৃষ্টির আদিকাল থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত লোকের কুফর, ঈমান, কপটতা, আমল ইত্যাদি সব কিছুই জানেন। এ জন্যইতো তিনি সকলের জন্য সাক্ষী। একেইতো বলে ‘ঈলমে গায়ব’ বা অদৃশ্য জ্ঞান।

৪) مَنْ ذَالَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ اِلَّبِاِذْنِه يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ

(কে সে, যে তার কাছে তার অনুমতি ব্যতীত সুপারিশ করবে? তিনি তাদের পূর্বাপর সবকিছুই জানেন।)
তাফসীরে নিসশাপুরেীতে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখ হয়েছেঃ-

يَعْلَمُ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَابَيْنَ اَيْدِيْهِمْ مِنْ اَوَّلِيَّابِ الْاَمْرِ قَبْلَ الْخَلَائِقِ وَمَا خَلْفَهُمْ مِنْ اَحْوَالِ الْقِيَامَةِ

অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালাম সৃষ্টির আগেকার অবস্থাদি জানেন এবং সৃষ্টির পরে কিয়ামতের যে ভয়াবহ অবস্থাদি সংঘটিত হবে, তা’ও তিনি জানেন।
এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে রূহুল বয়ানে আছঃ-

يَعْلَمُ مُحَمَّدٌ عَلَيْهِ السَّلَمُ مَابَيْنَ اَيْدِيْهِمْ مِنَالْاُمُوْرِ الْاَوَّلِيَّاتِ قَبْلَ الْخَلَائِقِ وَمَاخَلْفَهُمْ مِنْ اَحْوَالِ الْقِيَامَةِ وَفَزَعِ الْحَلَقِ وَغَضَبِ الرَّبِّ

অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালাম সৃষ্টির আগের অবস্থা জানেন। সৃষ্টির পূর্বাপর যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে অবগত। কিয়ামতের অবস্থা, সৃষ্টিকুলের ভয়ভীত, আল্লাহর গজব ইত্যাদির প্রকৃতি সম্পর্কেও সম্যকরূপে অবগত। এ আয়াত ও তাফসীর সমূহ দ্বারা বোঝা গেল, আয়াতুল কুরসীর মধ্যে  مَنْ ذَالَّذِىْ থেকে  اِلَّابِمَا شَاءَ পর্যন্ত হুযুর আলাইহসি সালামের তিনটি গুণের কথাই বিধৃত হয়েছে। বাকী অবশিষ্ট গুণাবলী আল্লাহ সহিত সম্পৃক্ত। এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর নিকট  বিনা অনুমতিতে কেউ সুপারিশ করতে পারে না। যিনি সুপারিশ করার অনুমতি পাপ্ত, তিনি হলেন প্রিয় নবী হুযুর আলাইহিস সালাম। সুপারিশকারীকে পাপীগণের পরিণাম ও অবস্থা সম্পর্কে অবশ্যই অবগত হতে হয়, যাতে অনুপযুক্তদের জন্য সুপারিশ করা না হয়, আর সুপারিশের উপযুক্ত ব্যক্তিগণ যেন ‍সুপারিশ থেকে বঞ্চিত না হয়। যেমন কোন ডাক্তারের আরোগ্য ও দুরারোগ্য ব্যাধি সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থকা একান্ত দরকার। এজন্য বলা হয়েছে-يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ
যাকে আমি (আল্লাহ) সুপারিশকারী মোতায়েন করেছি, তাকে সব কিছুর জ্ঞানও দান করছি, কেননা শাফায়াতের কুবরা বা সুমহান সুপারিশের জন্য অদৃশ্য জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
এ থেকে বোঝা গেল যে, যারা বলে যে হুযুর আলাইহিস সালাম কিয়ামতের মাঠে মুনাফিকদেরকে চিনবেন না, বা হুযুর আলাইহিস সালাম নিজেই জানেন না তাঁর কি পরিণতি হবে ইহা তাদের নিছক ভুল ধারণা ও ধর্মহীনতা মাত্র। এ সম্পর্কে সামনে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

৫) وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَئْىٍ مِّنْ عِلْمِه اِلَّا بِمَاشَاءَ

অর্থাৎ তারা তাঁর জ্ঞান ভান্ডার থেকে কিছুই পায় না, তবে তিনি যতটুকু ইচ্ছে করেন।
তাফসীরে রূহুল বয়ানে এ আয়াতের প্রেক্ষাপটে উল্লেখ আছেঃ-
(
এও হতে পারে যে উক্ত আয়তের আরবী শব্দের হা (হি) সর্বনাম দ্বারা হুযুর আলাইহিস সালামের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালাম মানুষের অবস্থা অবলোকন করেন তাদের ভবিষ্যৎ তাদের চরিত্র তাদের আচরণ তাদের ঘটনা প্রবাহ ও তাদের বিগত অবস্থা ও তিনি জানেন। পরকালের হাল-হাকিকত ও বেহেশতী জাহান্নামী লোকদের অবস্থা সম্পর্কে ও তিনি ওয়াকিফহাল । ওই সমস্ত লোক হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান ভাণ্ডারের কিছুই জানতে পারেন না তবে ততটুকু জানতে পারেন যতটুকু তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সল্লাম) চান। আম্বিয়া কিরামের (আলাইহিস সালাম) জ্ঞানের সামনে আল্লাহর ওলীগণের জ্ঞান হলো সাত সমুদ্রের এক ফোটার সমতুল্য, আর হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানের সমনে অন্যান্য আম্বিয়া কিরামের (আলাইহিস সালাম) জ্ঞানও তদ্রূপ। আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় আমাদের হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানও তদ্রূপ। অতএব প্রত্যেক নবী রাসূল ও ওলী নিজ নিজ ধারণ ক্ষমতা ও যোগ্যতা অনুসারে হুযুর আলাইহিস সালামের নিকট থেকে আহরণ করেন । হুযুর অলাইহিস সালামকে ডিঙিয়ে যাওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়।)
তাফসীরে খাযেনে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে যে, আল্লাহ তাআলা যাদেরকে তার জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত করেন তারা হচ্ছেন নবী ও রাসুল যাতে তাঁদের অদৃশ্য জ্ঞান নবুয়তের দলীলরূপে পরিগণিত হয় । যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন তার বিশেষ অদৃশ্য বিষয় কারও নিকট প্রকাশ করেন না একমাত্র তার সে রসুলের নিকট প্রকাশ করেন যার উপর তিনি (আল্লাহ) সন্তুষ্ট ।
তাফসীরে মা আলিমুত তানযীলে উক্ত আয়াতের পেক্ষাপটে উল্লেখিত আছেঃ-

يَعْنِىْ لَا يُحِيْطُوْنَ بِشَئٍ مِنْ عِلْمِ الْغَيْبِ اِلَّا بِمَاشَاءَمِمَّا اَخْبَرَ اِلرُّسُلُ

অর্থাৎ এ সকল লোক অদৃশ্য জ্ঞানকে বেষ্টন বা আয়ত্ত্ব করতে পারে না । শুধু ততটুকুই তারা লাভ করে যতটুকু রসুলগণ তাদের নিকট পরিবেশন করেছেন ।
এ আয়াত ও ব্যাখ্যাসমূহ থেকে এতটুকু বোঝা গেল যে উল্লেখিত আয়াতে হয়তো আল্লাহর জ্ঞানের কথা বলা হয়েছে । অর্থাৎ আল্লাহর জ্ঞান কারো কাছে নেই, তবে তিনি যাকে জ্ঞান দানের ইচ্ছে করেন, তিনিই অদৃশ্য জ্ঞান অর্জন করে থাকেন । আল্লাহ তাআলা নবীগন (আলাইহিস সালাম)কে ইলমে গায়েব দান করেছেন  এবং তাদের  ওসীলায় কোন কোন মুমিন বান্দাকেও দিয়েছেন। অতএব মুমিন বান্দাগনও খোদা প্রদত্ত ইলমে গায়ব লাভ করেছেন। কি পরিমান (ইলমে গায়ব) দেয়া হয়েছে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সামনে করা হবে।
অথবা উল্লেখিত আয়াতে হুজুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান এর কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ হুজুর আলইহিস সালামের জ্ঞান কেউ লাভকরতে পারে না অবশ্য তিনি যাকে দিতে চান দান করেন। অতএব আদম (আলাইহিস সালামের)থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যতটুকু জ্ঞান অর্জিত হয়েছে বা হবে উহা হুযুর আলাইহিস  সালামের জ্ঞানসমূহের এক ফোটার সমতুল্য। যার মধ্যে হযরত আদম (আলাইহিস সালাম), ফিরিশতা ও অন্যান্য সৃষ্ট জীবের জ্ঞানও অন্তর্ভুক্ত। হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) এর জ্ঞনের পরিদি সম্পর্কে عَلَّمَ ادَمَ الْاَسْمَاءَ বিশেষ ভাবে আলোচনা করেছি।

(৬) مَاكَانَ اللهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللهُ

অর্থাৎ হে সাধারন লোকগন এটা আল্লাহর শান নয় তোমাদেরকে ইলমে গায়ব দান করবেন। তবে হ্যাঁ রসুলগনের মধ্যে যাকে তিনি ইচ্ছা করে তাকে এ অদৃশ্য জ্ঞান দানের জন্য মনোনিত করেন ।
তাফসীরে বায়যাবী তে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হযেছেঃ- আল্লাহ তাআলা তোমাদের মধ্যে কাউকে এমন ইলমে গায়ব প্রদান করেন না যাতে তোমরা ঈমান কুফর যা মনে মনে পোষন করা হয়ে থাকে, সে সম্পর্কে অবগত হতে পার। কিন্তু তিনি তার রসুলগনের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছে করেন তাদেরকে মনোনীত করেন, তাঁদের উপর প্রত্যাদেশ করেন, তাঁদেরকেই আংশিক গায়ব সম্পর্কে অবহিত করেন, অথবা তাঁদের জন্য এমন কিছু প্রমানাদি উপস্থাপন করেন যা গায়বের পথ নির্দেশ করে থাকে।
তাফসীরে খাযেনে আছে

لَكِنَّ اللهَ يَصْطَفِىْ وَبَخْتَارُ مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يُّشَاءُ فَيُطْلِعُه‘ عَلَى بَعْضِ عِلْمِ الْغَيْبِ

অর্থাৎঃ কিন্ত আল্লাহ রসূলগণের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছে করেন, মনোনীত করেন, আংশিক ইলমে সম্পর্কে তাঁদেরকে অবহিত করেন।
তাফসীরে কাবীরে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে- খোদা প্রদত্ত অদৃশ্য জ্ঞানের ফলশ্রুতি স্বরুপ সে সমস্ত অদৃশ্যা বিষয়াদি জেনে নেয়া নবীগন (আলাহিস সালাম) এরই বৈশিষ্ট্য। জুমুলে উল্লেখিত আছে

اَلْمَعْنَى لَكِنَّ اللهَ يَجْتَبِىْ اَنْ يَصْطَفِىَ مِنْ رُسُلِه مَنْيَّشَاءُ فَيُطْلِعُه‘ عَلَى الْغَيْبِ

অর্থাৎঃ আয়াতের অর্থ হলো- আল্লাহ তাআলা রসুলগনের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করেন তাকে মনোনীত করেন। অতপর তাকে গায়ব সম্পর্কে জ্ঞান দান করেন।
জালালাইনে উল্লেখ আছেঃ

وَمَاكَانَ اللهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ فَتَعْرِفُوْا الْمُنَافِقَ قَبْلَ التَمَيِّزُ وَلَكِنَّ اللهَ يَجْتَبِىْ وَيَخْتَارُ مَنْ يَّشَاءُ فَيُطْلِعُ عَلى غَيْبِه كَمَا اَطْلَعَ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلى حَالِ الْمُنَافِقِيْنَ

অর্থাৎঃ আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে গায়ব সম্পর্কে অবহিত করবেন না যাতে মুনাফিকদেরকে আল্লাহ কর্তৃক পৃথকীকরণের পূর্বেই তোমরা চিনতে না পার, কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছে করেন তাকে মনোনীত করেন তার অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেন যেমন নবী করীম আলাইহিস সালামকে মুনাফিকদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন।
তাফসীরে রুহুল বয়ানে আছেঃ

فَاِنَّ غَيْبَ الْحَقَائِقِ وَالْاَحْوَالِ لَا يَنْكَشِفُ بِلَا وَالسِطَةِ الرَّسُوْلِ

(অর্থাৎঃ কেননা রসুল আলাইহিস সালামের মাধ্যম ব্যাতিত কারো নিকট অদৃশ্য ও রহস্যাবৃত অবস্থা ও মৌলতত্ত প্রকাশ করা হয় না ।
এ আয়াত ও ব্যাখ্যাসমুহ দ্বারা বোঝা গেল যে খোদার খাস ইলমে গায়ব রসূলের নিকট প্রকাশিত হয়। কোন কোন তাফসীরকারক, যে ইলমে গায়বের কিয়দংশের কথা বলেছেন, এ ‘কিয়দংশ’ কথাটি দ্বারা আল্লাহর অসীম জ্ঞানের তুলনায় নবীর অদৃশ্য জ্ঞানকে ‘কিঞ্চিত পরিমাণ’ বলা হয়েছে। কেননা সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকে যা কিছু ঘটছে ও যা ঘটবে-এর সম্পূর্ণ জ্ঞানও আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় আংশিক বা যৎসামান্যই বটে ।

(৭) وَعَلَّمَكَ مَالَمْ تَكُنْ تَعْلَمْ وَكَانَ فَضْلُ اللهِ عَلَيْكَ عَظِيْمًا

(এবং আপনাকে  শিখিয়ে দিয়েছেন যা আপনি জানতেন না। আপনার উপর আল্লাহর এটি বড় মেহেরবাণী)
তাফসীরে জালালাইন এ আয়াতের তাফসীরে লিখা হয়েছেঃ اَىْ مِنَ الْاَحْكَامِ وَالْغَيْبِ যা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) জানতেন না ,তা হচ্ছে ধর্মের অনুশাসন ও অদৃশ্য বিষয়াদি -(জালালাইন)
তাফসীরে কাবীরে আছেঃ

اَنْزَلَ اللهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَاطْلَعَكَ عَلى اَسْرَارِهِمَا وَوَافَقَكَ عَلى حَقَائِقِهِمَا

অথাৎঃ আল্লাহ তা’আলা আপনার উপর কুরআন ও হিকমত (জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শন) অবতীর্ণ করেছেন, উহাদের গুপ্ত ভেদসমূহ উদ্ভাসিত করেছেন এবং উহাদের হাকীকত  সমুহ সম্পর্কে ও আপনাকে অবহিত করেছেন ।
তাফসীরে খাযেনে’উল্লেখিত আছেঃ- শরীয়তের আহকাম ও ধর্মীয় বিষয়াদি আপনাকে শিখিয়েছেন । বলা হয়েছে যে, আপনাকে ইলমে গায়বের আওতাভূক্ত সে সমস্ত বিষয়াদিও শিখিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না । আরও বলা হয়েছে যে, এর অর্থ হলো আপনাকে রহস্যবৃত, গোপণীয় বিষয়সমূহ শিখিয়েছেন অন্তরের লুকায়িত বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেছেন মুনাফিকদের ধোকাবাজি ও বাওতাবাজি সম্পর্কে অবহিত করেছেন ।
তাফসীরে মাদারেকে আছেঃ-

مِنْ اُمَوْرُ الدِّيْنِ وَالشَّرَ ائِعِ اَوْمِنْ خَفِيَّاتِ الْاُمُوْرِ وَضَمَائِرِ الْقُلُوْبِ

(দ্বীন ও শরীয়তের বিষয়সমূহ শিখিয়েছেন আপনাকে  এবং গোপণীয় বিষয়াদি ও মানুষের অন্তরের গোপণীয় ভেদ ইত্যাদিও শিখিয়ে দিয়েছেন)
তাফসীরে হুসাইনী এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বাহরুল হাকায়েক এ উদ্ধৃতি দিয়ে বলছে- এটা হচ্ছে পূর্ববর্তী যাবতীয বিষয়ের জ্ঞান যা আল্লাহ তাআলা হুযুর আলাহিস সালামকে পবিত্র মেরাজ রজনীতে দান করেছিলেন । এ মর্মে মেরাজের হাদীছে উল্লেখিত আছে আমি আরশের নিচে ছিলাম তখন একটি ফোটা আমার কণ্ঠনালীতে ঢেলে দেওয়া হল এর পর আমি অতীত ও ভবিষ্যতের সমস্ত ঘটনাবলীর জ্ঞান লাভ করলাম ।)
জামেউল বয়ান তাফসীর গ্রন্থে আছেقَبْلَ فُزُوْلِ ذلِكَ مِنْ حَفِّيِتِ الْاُمُوْرِ অর্থাৎ আপনাকে সে সমস্ত বিষয় আল্লাহ বলে দিয়েছেন যা কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার আগে আপনার জানা ছিল না ।
এ আয়াত ও বর্ণিত ব্যাখ্যা সমূহ থেকে বোঝা গেল যে হুযুর আলাহিস সালামকে আতীত ও ভবিষ্যতের সমস্ত ঘটনাবলী সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল । আরবী ভাষায় مَا শব্দটি ব্যাপকতা প্রকাশের নিমিত্তে ব্যবহৃত হয় । তাই উক্ত আয়াত থেকে বোঝা গেল যে শরীয়তের বিধি বিধান দুনিয়ার সমস্ত ঘটনাবলী মানুষের ঈমানী অবস্থা ইত্যাদি,যা কিছু তার জানা ছিল  না তাকে  সম্যকরূপে অবগত করান হয় । কেবলমাত্র ‘ধর্মীয় বিধানাবলীর’ জ্ঞান দান করা হয়েছিল” আয়াতের এরুপ সীমিত অর্থ গ্রহণ করা মনগড়া ভাবার্থ গ্রহণ করার নামান্তর যা কুরআন হাদীছ ও উম্মতের আকীদার পরিপন্থী । এ সম্বন্ধে সামনে আলোচনা হবে ।

(৮) مَافَرَّطْنَا فِى الْكِتَابِ مِنْ شَئْ اِنَّ الْقُرْانَ مُشْتَمِلٌ عَلى جَمِيْعِ الْاَحْوَالِ

আমি এ কিতাবে (কুরআনে) কিছু বাদ দিইনি কুরআন করীমে সমস্ত অবস্থার বিবরণ রয়েছে ।
তাফসীরে আনওয়ারুত তনযীলে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ- কিতাব শব্দ দ্বার লওহে মাহফুজকেই নির্দেশ করা হয়েছে । কেননা এ লওহে মহফুজে জগতের সমস্ত কিছুই উল্লেখিত, প্রত্যেক প্রকাশ্য, সুক্ষ্ম বিষয় বা বস্তু এমনকি কোন জীব জন্তু বা জড় পদার্থের কথাও বাদ দেয়া হয়নি ।
তাফসীরে আরায়েসুল বয়ানে এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসংগে বলা হয়েছেঃ- কিতাবে সৃষ্টিকুলের কোন কিছুরই কথা বাদ রাখা হয়নি কিন্তু মারেফতের আলোকে মদদপুষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়া তা কারো দৃষ্টি গোচর হয় না ।
প্রখ্যাত ইমাম শারানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তবকাতে কুবরার মধ্যে লিখেছেন (ইদখালুস সেনান গ্রন্থের ৫৫পৃঃ হতে সংগৃহীত ।)
(
যদি আল্লাহ তা’আলা তোমাদের হৃদয়ের তালাবদ্ধ প্রকোষ্টের তালা খুলে দেন তাহলে তোমরা কুরআনের জ্ঞানভাণ্ডারের সন্ধান পাবে এবং কুরাআন ভিন্ন অন্য কিছুর মুখাপেক্ষী হতে হবে না । কেননা কুরআনের মধ্যে অস্তিত্ববান সব কিছুই বিধৃত আছে। আল্লাহ তা’আলা ফরমান এমন কিছু নেই যা আমি কুরআনে বর্ণনা করিনি ।)
এ আয়াতেও এর বর্ণিত তাফসীর সমূহ থেকে বোঝা  গেল যে কিতাবের মধ্যে দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত অবস্থার কথা বিদ্যমান আছে। কিতাব বলতে কুরআন বা লওহে মাহফুজকে বোঝানো হয়েছে। কুরআন হোক বা লওহে মাহফুজ হোক উভয়ের জ্ঞান হুযুর আলইহিস সলামের আছে। এ সম্পর্কে সামনে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ফলস্বরূপ দুনিয়াও আখিরাতের যাবতীয় বিষয় হুযুর আলইহিস সলামের জানা আছে । কেননা কুরআন ও লওহে মাহফুজ সমস্ত জ্ঞানের আধার উভয়টি সম্পর্কে হুযুর পুরনুর (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) ওয়াকিবহাল ।

(৯) وَلَا رَطَبٍ وَّلَا يَابِسٍ اِلَّا فِىْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ

(এবং শুষ্ক ও আর্দ্র এমন কিছুই নেই, যা উজ্জ্বল কিতাবে লিপিবদ্ধ হয়নি ।)
তাফসীরে রূহুল বয়ানে উক্ত আয়াতের তাফসীর এভাবে করা হয়েছেঃ- উজ্জ্বল কিতাব দ্বারা লওহে মাহফুজের কথাই বলা হয়েছে এতে আল্লাহ তাআলা বান্দার কল্যাণার্থে সম্ভাব্য সকল বিষয় একত্রিত করেছেন। উলামায়ে রব্বানীই এসব বিষয়ে অবগত।
তাফসীরে কাবীরে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে- (লওহে মহফুজে) এ ধরনের লিখার পিছনে কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে।
প্রথমতঃ আল্লাহ তাআলা ওই সমস্ত বিষয়াদি লওহে মাহফুজে এ জন্য লিখেছেন যাতে ফিরিশতাগণ সর্বাবস্থায় খোদার ইলম জার হওয়া সম্পর্কে অবগত হন। সুতরাং এটা লওহে মাহফুজের দায়িত্বে নিয়োজিত ফিরিশতাগণের জন্য পুরোপুরি শিক্ষা গ্রহণের বিষয়ে পরিণত হয়। কেননা তাঁরা জগতে নিয়ত ঘটমান নতুন নতুন বিষয়কে ওই লিখার সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন ও লওহে মাহফুজের লিখার অনুরূপ সবকিছু সংঘটিত হতে দেখতে পান ।
তাফসীরে খাযেনে এ আয়াতের ব্যখ্যা প্রসঙ্গে লিখা হয়েছে-(দ্বিতীয় অর্থে كِتبٌ مُّبِيْن বলতে লওহে মাহফুজকে বোঝানো হয়েছে। কেননা যা কিছু হবে এবং আসমান যমীন সৃষ্টির পূর্বে যা কিছু হয়েছে আল্লাহ তাআলা সব কিছুর বিবরণ এতে লিখে দিয়েছেন। এসব কিছু লিখার উপকারিতা হলো ফিরিশতাগণ তার আল্লাহর জ্ঞান জারী করার বিষয়ে অবগতি লাভ করতে সক্ষম হন ।)
তাফসীরে মাদারেকে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে وَهُوَعِلْمُ اللهِ اَوِ الْلَوْحِ অর্থাৎ আয়াতে উল্লেখিত উজ্জ্বল কিতাব  দ্বারা খোদার জ্ঞান বা লওহে মাহফুজকে নির্দেশ করা হয়েছে । তাফসীরে তানভীরুল মিকিয়াস ফি তাফসীরে ইবনে আব্বাসে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে- (এসব বিষয় লওহে মাহফুজে উল্লেখিত আছে- সে সব কিছুর পরিমাণ ও সময় উল্লেখিত আছে ।)
উল্লেখিত আয়াত ও এর তাফসীর সমূহ থেকে প্রতীয়মান হলো যে লওহে মাহফুজে কঠিন তরল উৎকৃষ্ট প্রত্যেক কিছুর কথা উল্লেখিত আছে। এ লওহে মাহফুজ সম্পর্কে ফিরিশতা ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ সম্যকরূপে অবগত। যেহেতু এসব হুযুর আলইহিস সলামের জ্ঞানের আন্তর্ভুক্ত সেহেতু এ সমস্ত জ্ঞান হুযুর আলইহিস সলামের জ্ঞান সমুদ্রের কয়েক ফোঁটা মাত্র ।
(
১০) نَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًالِكُلِّ شَئْىٍ
(
হে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি ‍যা প্রত্যেক কিছুর সুস্পষ্ট বিবরণ সম্বলিত ।)
তাফসীরে হুসাইনীতে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে- (আমি আপনার কছে দ্বীন দুনিয়ার প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় ভরপুর কুরআন অবতীর্ণ করেছি।)
তাফসীরে রূহুল বয়ানে এ আয়াতের তাফসীরে উল্লেখিত আছে- ধর্মীয় বিষয় সমূহের সহিত সম্পৃক্ত বিবরণের জন্য (কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে)। এতে উম্মত ও তাদের নবীগণের অবস্থা ও  অন্তর্ভুক্ত ।
তাফসীরে ইতকানে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে-একদিন হযরত মুজাহিদ (রহমতুল্লাহে আলাইহে)  বলেছিলেন জগতে এমন কোন জিনিস নেই যার উল্লেখ কুরআনে নেই। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ সরাইখানা সমূহের উল্লেখ কোথায় আছে? তখন তিনি বললেন لَيْسَ عَلَيْكُم جُناحٌ اَنْ تَدْخُلُو بُيُوْتً غَيْرَ مَسْكُوْنَةٍ আয়াতেই উহাদের উল্লেখ আছে। আয়াতটির অর্থ হলোঃ যেসব ঘরে কেউ থাকে না অথচ যেখানে তোমাদের আসবাবপত্র সাজসরঞ্জাম রাখা হয় সে সমস্ত ঘরে প্রবেশ করলে তোমাদের কোন গুনাহ হবে না ।
এ আয়াত ও এর ব্যাখ্যা সমূহ থেকে এ কথাই বোঝা গেল যে কুরআনের মধ্যে উৎকৃষ্ট-নিকৃষ্ট প্রত্যেক কিছুর উল্লেখ আছে। আল্লাহ তাআলা তার মাহবুব আলইহিস সলামকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন ।
সুতরং সমস্ত কিছুই হযরত মুস্তাফা আলইহিস সলামের  জ্ঞানের আওতাধীন ।
(
১১)  وَتَفْصِيْلَ الْكِتَابِ لَارَيْبَ فِيْهِ
(
এবং লওহে মাহফুজে যা কিছু লিখা আছে কুরআনে তার বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে । এতে কোন সন্দেহ নেই ।)
তাফসীরে জালালাইনে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে- এ কুরআন হচ্ছে শরীয়ত ও হাকীকতের প্রমাণিত বিষয়সমূহের বিশ্লেষণ। তাবীলাতে নজমিয়া তে উল্লেখিত আছে যে, কুরআনে সে সমস্ত বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে, যা অদৃষ্টে আছে, এবং যা সেই কিতাবে (লওহ মাহফুজ) লিপিবদ্ধ রয়েছে, যেখানে কোনরূপ রদবলের অবকাশ নেই। কেননা এটা অনাদি ও অনন্ত।
উপরোক্ত আয়াত ও ব্যাখ্যা সমূহ থেকে প্রমাণিত হলো যে, কুরআন শরীফে শরীয়তের অনুশাসন সমূহ ও সমস্ত জ্ঞান মওজুদ আছে। এ আয়াতে থেকে আরও বোঝা গেল যে, কুরআন শরীফে পুরা লওহ মাহফুজের বিস্তারিত বিবরণ আছে আর লওহে মাহফুজ হচ্ছে সমস্ত জ্ঞানের আকর। কুরআনেই উল্লেখিত আছে-
وَلَارَطَبٍ وَّلَايَابِسٍ الَّفِىْ كِتَابٍ مُّبِيْن এবং কুরআনে আরও এরশাদ করা হয়েছে- اَلرَّحْمنُ عَلَّمَ الْقُرْاَنْ সুতরাং, লওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ সমস্ত কিছুর জ্ঞান হুযুর পুর নুর আলাইহিস সালামের রয়েছে। কেননা, কুরআন হচ্ছে লওহ মাহফুজেরই বিবরণ সম্বলিত গ্রন্থ।

১২) مَاكَانَ حَدِيْثًا يُفْتَرى وَلكِنَّ تَصْدِيْقَ الَّذِىْ بَيْنَ

(এ কোন বানোওয়াট কথা নয়, এতে রয়েছে আল্লাহর আগের উক্তি সমূহের সত্যায়ন ও প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা।)
তাফসীরে খাযেনে এ আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে-
হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম! আপনার নিকট অবতীর্ণ এ কুরআনে রয়েছে সবকিছুর বিশদ বিবরণ, হালাল-হারাম, শাস্তি বিধান, আহকাম, কাহিনী সমূহ, উপদেশাবলী ও উদাহরণসমূহ, মোট কথা, যা কিছু আপনার প্রয়োজন হয় আর এগুলো ছাড়াও ধর্মীয় ও পার্থিব কর্মকান্ডের  বান্দাদের যে সমস্ত বিষয়াদি প্রয়োজন হয় সবকিছুর বিবরণ ওই কুরআনেই পাওয়া যাবে। )
তাফসীরে হুসাইনীতে আছে- দ্বীন-দুনিয়ার প্রয়োজনীয় সবকিছুর বর্ণনা এ কুরআনের মধ্যে আছে। ইবনে সুরাকা প্রণীত কিতাবুল ইজাযে আছে- জগতে এমন কোন কিছু নেই, যা কুরআনের মধ্যে নেই।

১৩)  اَلرَّحْمنُ عَلَّمَالْقُرْ اَنْ خَلَقَ الْاِنْسَانَ عَلَّمَهُ الْبَيَانَ

দয়াবান আল্লাহ তাআলা স্বীয় মাহবুবকে কুরআন শিখিয়েছেন মানবতার প্রাণতুল্য হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে সৃষ্টির পূর্বাপর সব কিছুর তাৎপর্য বাতলে দিয়েছেন।)
তাফসীরে মাআলেমুত তানযীল ও হুসাইনীতে এ আয়াতে ব্যাখা করা হয়েছে নিম্নরূপ-
আল্লাহ তাআলা মানবজাতি তথা মুহাম্মদ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে পূর্ববতী ও পরবর্তী সমস্ত  বিষয়ের বর্ণনা শিক্ষা দিয়েছেন।
তাফসীরে খাযেনে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ
বলা হয়েছে যে, উক্ত আয়াতে ইনসান বলতে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে বোঝানো হয়েছে তাঁকে পুর্ববর্তী ও পরবর্তী সব বিষয়ের বিবরণ শিক্ষা দেয়া হয়েছে।  কেননা, তাঁকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের ও কিয়ামতের দিন সম্পর্কে অবহিত করা হেয়েছে-
তাফসীরে রূহুল বয়ানে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা  হয়েছে- আল্লাহ তাআলা আমাদের নবী আলাইহিস সালামকে কুরআন ও স্বীয় প্রভুত্বের রহস্যাবলীর জ্ঞান দান করেছেন, যেমন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ফরমাচ্ছেন- وَعَلَّمَكَ مَالَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ সে সব বিষয় আপনাকে শিখিয়েছেন যা আপনি জানতে না।
তাফসীরে মাদারেকে এ আয়াতে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- ইনসাল বলতে মানবজাতি বা আদম (আলাইহিস সালাম) বা হুযুর আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে।)
মায়ালেমুত তানযীলে  এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বল হয়েছে-
বলা হয়েছে যে, এ আয়াতে الِنْسَانُ ইনসান বলতে হুযুর আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে এবং بَيَانُ বয়ান বলতে একথাই বোঝানো হয়েছে যে, তাঁকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ঐ সমস্ত বিষয়ের জ্ঞান দান করা হয়েছে, যা তিনি জানতেন না।)
তাফসীরে হুসাইনীতে এ আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে- অথবা এ কথা বোঝানো হয়েছে, যে, মহান আল্লাহ হুযুর আলাইহিস সালামের সত্ত্বাকে সৃষ্টি করেছেন, এবং তাঁকে যা কিছু হয়েছে বা হবে সেসমস্ত বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন।
উল্লেখিত আয়াত ও উহাদের তাফসীর সমূহ থেকে বোঝা গেল যে, কুরআনের মধ্যে সবকিছু আছে এবং এর পরিপূর্ণ জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামকে প্রদান করা হয়েছে।

১৪) مَااَنْتَ بِنِعْمَةِ رَبِّكَ بِمَجْنُوْنٍ

(আপনি আপনার প্রভুর মেহেরবাণীতে উম্মাদ নন)
তাফসীর রূহুল বয়ানে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে- আপনার দৃষ্টি থেকে সে সমস্ত বিষয় লুকায়িত নয়, যা সৃষ্টির আদিকালে ছিল, ও যা কিছু অনন্তকাল পর্যন্ত হতে থাকবে। কেননা جُن শব্দের অর্থ হলো লুকায়িত থাকা। সুতরাং সারমর্ম হচ্ছে যা কিছু হয়েছে সে সব কিছু সম্পর্ক তো আপনি জানেনই, যা কিছু আনাগত ভবিষ্যতে হবে সে ব্যাপারেও আপনি অবগত আছেন।
এ আয়াত ও তাফসীর থেকে হুযুর  (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লমা) এর সামগ্রিক ও অনন্তকাল পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত ইলমে গায়বের বিষয়টি প্রমাণিত হলো।

১৫) وَلَئِنْ سَأَلَتْهُمْ لَيَقُوْلُنَّ اِنَّمَا كُنَّا نَخُوْضُ وَنَلْعَبُ

এবং হে মাহবুব আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, তারা বলবে আমরাতো কৌতুক ও খেলা-তামাশা করছিলাম)
তাফসীরে দুররে মনসুর ও তাবরীতে এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লেখিত আছেঃ
হযরত ইবনে আব্বস রাদিআল্লাহ আনহু থেকে এ আয়াত  وَلَئِنْ سَالتَهُمْ الخ অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপটে বর্ণিত আছে যে, জনৈক মুনাফিক বলেছিল যে, হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংবাদ দিচ্ছেন অমুক ব্যক্তির উষ্ট্রী অমুক জঙ্গলে আটকা পড়েছে। অদৃশ্য বিষয় তাঁর কীই বা জানা আছে?)
এ আয়াত ও তাফসরি থেকে একথাই জানা গেল যে, হুযুর আলাইহিস সালামের অদৃশ্য জ্ঞানকে অস্বীকার করা মুনাফিকদেরই কাজ। সেটাকে কুরআন কুফর বলে আখ্যায়িত করেছে।

১৬)  فَلَا يُظْهِرُ عَلى غَيْبِه اَحَدًا اِلَّمَنِ ارْتَضى مِنْرَّسُوْلٍ

অর্থাৎ (আল্লাহ পাক) তাঁর মনোনীত রসুলগন ছাড়া কউকেও তাঁর অদৃশ বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেন না।
তাফসীরে কবীর এ আয়াতে ব্যাখ্যায় লিখ হয়েছে-কিয়ামত  সংঘটিত হওয়ার সুনির্দিষ্ট সময়েরে প্রশ্নটি ঐ সমস্ত অদৃশ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ তাআলা কারো কাছে প্রকাশ করেননি। যদি কেউ প্রশ্ন করেন আপনি এখানে গায়বকে  কিয়ামত অর্থে ব্যবহার করেছেন, যদি তাই হয় তাহলে আল্লাহ তাআলা কিভাবে ইরশাদ করলেন-اِلَّامَنِ ارْتَصى مِنْرَّسُوْلٍ (কিন্তু মনোনীত রসুলগণের নিকট ব্যক্ত করেন) অথচ আপনার কথা মত এ গায়বটি কারো কাছে প্রকাশ করা হয় না এর উত্তরে আমি বলবো যে, আয়াতের মর্মকথা হচ্ছ কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে আল্লাহ পাক উক্ত অদৃশ্য বিষয়টি প্রকাশ করবেন।)
তাফসীরে আযীযীর ১৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে- যে বিষয় সৃষ্টিকুলের অজ্ঞাত বা দৃষ্টি বহির্ভুত, উহা গায়ব মতলাক নামে পরিচিত। যেমন কিয়ামতের সঠিক সময়, প্রত্যেক শরীয়তের বিধিসমূহ সৃষ্টিকুলের দৈনন্দিন শৃংখলা বিধানের রহস্যময় বিষয়সমূহ, আল্লাহ তাআলা ‘খাস গায়ব’ বলা হয়, তিনি তাঁর খাস গায়ব কারো কাছে প্রকাশ করেন না, তবে তিনি রসুলগণের মধ্যে যাকে পছন্দ করেন, (তিনি ফিরিশতার রসুল হোন বা মানবজাতির রসুল হোন) তাঁকে অবহিত করে থাকেন। যেমন হযরত মুহাম্মদ সুস্তাফা আলাইহিস সালামের কাছে তার বিশেষ অদৃশ্য বিষয়াদির কিয়দংশ প্রকাশ করে থাকেন।
তাফসীরে খাযেনে এ আয়াতের ব্যাখ্যা করা হয়েছে- যাদেরকে (আল্লাহ পাক) নবুয়াত বা  রিসালতের জন্য মনোনীত করেন, তাঁদের মধ্যে হেত যাকে উচ্ছা করেন, তাঁর কাছে এ অদৃশ্য বিষয় ব্যক্ত করেন, যাতে তাঁর অদৃশ্য বিষয়াদির সংবাদ প্রদান তাঁর নবুয়তের সমর্থনে সর্ব সাধারনের নিকট প্রমাণ স্বরূপ গৃহীত হয়। এটাই তাঁর মুজিযারূপে পরিণত হয়।
উক্ত আয়তের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রূহুল বয়ানে আছে- ইবন শাইখ বলেছেন- আল্লাহ তাআলা তার পছন্দনীয় রসুল ছাড়া কাউকে তাঁর খাস গায়ব সম্পর্কে অবহিত করেন না । তবে তার বিশেষ অদৃশ্য বিষয়াদি ছাড়া অন্যান্য অদৃশ্য বিষয়াদি রসুল নন এমন ব্যক্তিদেরকেও অবহিত কেরন। িএ আয়াত ও এর তাফসীরসমূহ থেকে প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ তাআলার খাসইলমে গায়ব, একন কি কিয়ামত কখন হবে সে জ্ঞানও হুযুর পুরনুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দান করা হয়েছে এখন এমন কি জিনিষ আছে, যা হযরত মুস্তফা আলাইহিস সালামের জানার বাকী রইল?

১৭) فَاَوْ حى اِلى عَبْدِه مَااَوْحى

(তিনি (আল্লাহ) তাঁর প্রিয় বান্দার প্রতি যা কিছু ওহী করার ছিল তা ওহী করলেন)
সবিখ্যাত মাদারিজন নবুয়ত গ্রন্থের প্রথম খন্ডে ‘আল্লাহর দর্শন’ শীর্ষক পরিচ্ছেদ উল্লেখিত আছে-
মহা প্রভু আল্লাহ হুযুর আলাইহিস সালামের প্রবিত্র মিরাজের রজনীতে যে সমস্ত জ্ঞান মারিফাত শুভ সংবাদ ইঙ্গিত বিবিধ তথ্য বুযুর্গী, মান সম্মান, পূর্ণতা ইত্যাদি ওহী করেছিলেন সবই এ অস্পষ্ট বর্ণনায় (যা আয়াতের مااوحاى বাক্যাংশে বর্ণিত হয়েছে) অন্তর্ভুক্ত আছে। ঐ সমস্ত বিষয়াদির অথ্যধিক ও মাহাত্ন্যের করণে সেগুলোকে অস্পষ্টরূপে উল্লেখ করেছেন; ‍সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীনভাবে ব্যক্ত করেননি। এতে এ কথার প্রতিও ইঙ্গি দেয়া হয়েছে, যে সমস্ত অদৃশ্য জ্ঞান সমূহ খোদা তাআলা ও তার মাহবুব আলাইহিস সালাম ব্যতীত অন্য কেউ পরিবেষ্টন করতে পারে না। তবে হ্যাঁ যা যতটুকু হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) প্রকাশ করেছেন, ততটুকু জানা গেছে।
এ আয়াত এর ব্যাখ্যা থেকে বোঝা গেল যে, মিরাজে হুযুর আলাইহিস সালামকে সে সমস্ত জ্ঞান দান করা হয়েছিল, যা, যে কারো জন্যে বর্ণনাতীত ও কল্পনাতীত। ماكَانَ وَمَايَكُوْنَ (যা কিছু হয়েছে ও হবে) এ কথাটি শুধু বর্ণনার সুবিধার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ এর  চেয়ে ঢের বেশী জ্ঞান তাঁকে দান করা হয়েছে।

১৮) وَمَاهُوَعَلَى الْغَيْبِ بِضَنِيْنٍ

(এ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) গায়ব প্রকাশের ক্ষেত্রে কৃপণ নন।)
এ কথা বলা তখনই সম্ভবপর, যখন হুযুর আলাইহিস সালাম গায়বী ইলমের অধিকারী হয়ে জনগণের কাছে তা ব্যক্ত করেন।
মা’ আলিমুত তানযীল নামক তাফসীর গ্রন্থে এ আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে- হুযুর আলাইহিস সালাম অদৃশ্য বিষয়, আসমাণী খবর, ও কাহিনী সমূহ প্রকাশ করার ব্যাপারে কৃপণ নন। অর্থাৎ হুযুর আলাইহস সালাম অদৃশ বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন, তবে উহা তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে কোনরূপ কাপূর্ণ করেন না, বরং তোমাদেরকে জানিয়ে দেন ও উহাদের সংবাদ  দেন । গণক ও ভবিষ্যতবেত্তারা যেরূপ খবর গোপণ করে রাখে, সেরূপ তিনি গোপন করেন না।)
তাফসীরে খাযেনে এ আয়াতের তাফসীরে উল্লেখিত আছে-
এ আয়াতে একথাই বোঝানে হয়েছে যে, হুযুর আলাইহিস সালামের কাছে অদৃশ্য বিষয়ের সংবাদ আসে। তিনি উহা তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে কাপূর্ণ করেন না, বরং তোমাদেরকে জানিয়ে দেন।
এ আয়াত ও এর তাফসীরের ভাষ্য থেকে বোঝা গেল যে, হুযুর আলাইহিস সালাম লোকদেরকে ইলমে গায়ব শিক্ষা দেন। বলা বাহুল্য যে, তিনি জানেন, তিনিতো শিখিয়ে থাকেন।

১৯) وَعَلَّمْنهُ مِنْ لَّدُنَّا عِلْمًا

আমি (আল্লাহ) তাঁকে (হযরত খিযির আলাইহিস সালামকে) আমার ইলমে লদুনী দান করেছি)।
তাফসীরে বয়যাবীতে এ আয়াতে ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে-
হযরত খিযির আলাইহিস সালামকে এমন বিষয়াদির জ্ঞান দান করেছি, যেগুলো সম্পর্কে শুধু আমিই অবগত, যা আমি না বললে কেউ জানতে পারে না। এটাইতো ইলমে গায়ব।
তাফসীরে ইবনে জারীরে সায়্যেদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে- (হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) হযরত মুসা (আলাইহিস সালাম) কে বলেছিলেন আপনি আমার সঙ্গে অবস্থান করলে ধৈর্যধারণ করতে পরবেন না। হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) ইলকে গায়বের অধিকারী ছিলেন বলেই এ কথাটি পূর্বেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।)
তাফসীরে রূহুল বয়নে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ- (হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) কে যে ইলমে লদুনী শিখানো হয়েছিল উহাই ইলমে গায়ব। এবং গায়বের খবর পরিবেশন খোদার ইচ্ছানুযায়ী হয়ে থাকে । হযরত ইবনে আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) এ মতই পোষণ করেছেন।)
তাফসীরে মাদারেকে এ আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছেঃ-

يَعْنِى الْاِخْبَارُ بِالْغَيُوْبِ وَقِيَلَ الْعِلْمُ اللَّدُنِىْ مَاحَصَلَ لِلْعَبْدِ بِطَرِيْقِ الْاِلْهَامِ

অর্থাৎ হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) কে অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। কেউ বলেছেন ইলমে লদুনী হলো এমন এক বিশেষ জ্ঞান যা বান্দা ইলহামের মাধ্যমে অর্জন করেন।)
তাফসীরে খযেনে আছেঃ- اَىْ عِلْمَ الْبَاطِنِ اِلْهَامًا
অর্থাৎঃ হযরত খিযির আলাইহিস সালামকে আমি ইলহামের মাধ্যমে বাতেনী ইলম দান করেছি।
এ আয়াত ও তাফসীরের ইবারত সমূহ থেকে বোঝা গেল যে আল্লাহ তআলা হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) কে ইলমে গায়ব দান করেছিলেন। এ থেকে হুযুর আলাইহিস সালামকে ইলমে গায়ব দান করার বিষয়টি অপরিহার্যরূপে স্বীকৃত হয়। কেননা খোদার সৃষ্টিকূলের মধ্যে তিনিই সর্বাধিক জ্ঞানী আর হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) ও সৃষ্টিকূলের অন্তর্ভুক্ত।

(২০) وَكَذَلِكَ نُرِىَ اِبْرَ اهِيْمَ مَلَكُوْت السَّموتِ وَالْاَرْضِ

(আমি এ রূপেই হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালামকে  ভূ মণ্ডল ও নভোমন্ডলে পরিব্যাপ্ত আমার বাদশাহী অবলোকন করাই।
তাফসীরে খযেনে এ আয়াতের ব্যাখ্যা করা হয়েছে এ রূপ- (হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালামকে একটি প্রস্তর খণ্ডের উপর দাড় করানো হয়েছিল এবং তার জন্য আসমান খুলে দেয়া হয়েছিল। তখন তিনি আসমান সমূহে বিরাজমান সবকিছুই এমনকি আরশ ও কুরসি পর্যন্ত অবলোকন করেছিলেন। অনুরূপভাবে যমীনকেও তার দৃষ্টিসীমায় নিয়ে আসা হয়েছিল তখন তিনি যমীনের সর্বনিম্নস্তর পর্যন্ত ও যমীনের স্তর সমূহে বিদ্যমান বিস্ময়কর সবকিছুই স্বচক্ষে দেখেছিলেন ।
তাফসীরে মদারেকে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে-(হযরত মুজাহিদ (রদিআল্লাহু আনহু) বলেছেনঃ হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালামের নিকট সপ্ত আসমান উন্মুক্ত করা হয়েছিল । তখন তিনি আসমান সমূহের মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছুই দেখতে পান এমনকি আরশ পর্যন্ত তার দৃষ্টিগোচর হয়েছিল। অনুরূপভাবে তার নিকট সপ্ত যমীন উন্মুক্ত করা হয়। তখন তিনি যমীনের স্তর সমূহে বিদ্যমান সবকিছুই দেখতে পান।)
তাফসীরে হুসাইনীতে আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- আমি হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালামকে আসমান যমীনের অদ্ভুত ও বিস্ময়কর সবকিছুই দেখিয়ে দিয়েছি। তার নিকট আরশের সুউচ্চ স্তর থেকে তাখত- আছ-ছরা পর্যন্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছি।
তাফসীরে ইবন জারীর ইবন আবী হাতেমে- এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখা হয়েছেঃ-( হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালামের কাছে প্রকাশ্য ও গোপনীয় সবকিছুই উদ্ভাসিত হয়েছিল। সুতরাং, সে সময় সৃষ্টিকূলের কোন আমলই তাঁর নিকট গোপন ছিল না।)
তাফসীরে কাবীরে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে- (আল্লাহ তাআলা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের জন্য আসমান সমূহকের বিদীর্ণ করে দিয়েছিলেন। ফলে তিনি আরশ-কুরসী, এমনকি স্থূল জগতের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত দখেছিলেন। আসমান সমূহে বিরাজমান সব কিছুই তার দৃষ্টিগোচর হয়েছিল, যমীনের তলদেশে বিদ্যমান উদ্ভূত ও বিষ্ময় উদ্রেককর সবকিছুই সুস্পষ্টরূপে তাঁর নিকট প্রতিভাত হয়েছিল।)
এ আয়াত ও উল্লেখিত তাফসীরের ইবারত সমূহ থেকে বোঝা গেল যে, আরশ থেকে ‘তাখত-অছ-ছরা’ পর্যন্ত সমস্ত কিছুই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে দেখানো হয়েছিল, এবং সৃষ্টিকূলের বিবিধ আমল সম্পর্কেও তাঁকে অবগত করানো হয়েছিল। হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান তাঁর তুলনায় অনেক বেশী বিধায় একথা বিনা দ্বিধায় স্বীকার করতে হয় যে, এ ব্যাপক জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালাকেও দান করা হয়েছে।
স্মরণ রাখ দরকার যে, আরশের জ্ঞান বলতে লওহে মাহফুজও তাঁর আওতাভুক্ত হয়ে পড়ে। আর লওহে মাহফুজের কি  কি লিখা আছে সে সম্পের্কে আমি আগে আলোচনা করেছিল সুতরাং, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবকিছুর জ্ঞান হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) এরও ছিল, আর হযরত ইব্রাহীম ও হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) এর জ্ঞান হচ্ছে হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান সমুদ্রের এক ফোঁটার সমতুল্য।
হযরত ইউসুফ (আঃ) বলেছিলেন-

২১) لَا يَا تِيْكُمَا طَعَامٌ تُرْزَقَانِه اِلَّا نَبَّئْتُكُمَا بِتَاوِيْلِه

অর্থাৎ তোমাদের কাছে কাবার আসার আগে এর বিবরণ বলে দিতে পারবো।
তাফসীরে রূহুল বয়ান ‘কবীর’ ও ‘খাযেনে’এর তাফসীরে উল্লেখিত আছে আমি তোমাদেরকে বিগত ও আনাগত দনেরর খাওয়া-দাওয়ার যাবতীয় অবস্থা বলে দিতে পারি। বলতে পারি খাদ্যশস্য কোথা হতে আসলো এবং এখন কোথায় যাবে। তাফসীরে কাবীরে আরও উল্লেখ করেছে আমি বলতে পারি, এ খাবার গ্রহণের ফলে উপকার হবে, না ক্ষতি হবে। এ সমস্ত বিষয়ে সম্পর্কে তিনিই বলতে পারেন, যিনি প্রতিটি অনু-পরমানুর খবর রাখেন।
তিনি (হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম) আরও বলেন ذلِكُمَا مِمَّا عَلَّمَنِىْ رَبِّىْ এটা আমার জ্ঞানের কিয়দাংশ মাত্র। তাহলে এখন বলুন হুযুর আলাইহসি সালামের জ্ঞনের পরিধি কতটুকু বিস্তৃত। হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর জ্ঞান হচ্ছে হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান সমূ্দ্রের  এক বিন্দু মাত্র।
হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) ফরমান- وَاُنَبِّئُكُ بِمَا تَأكُلُوْنَ وَمَاتَدَّخِرُوْنَ فِىْ بُيُوْتِكُمْ  তোমরা নিজ নিজ ঘরে যা কিছু খাও এবং যা কিছু সঞ্চিত রাখ, আমি তোমাদেরকে বলে দিতে পারি।)
দেখুন, ঘরের মধ্যে আহার করা হল, ঘরের মধ্যে জমা করা হল, সেখানে হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু বাহির থেকে তিনি এ সংবাদ দিচ্ছেন। একেই বলে ইলমে গায়ব।
শেষকাথাঃ বিরুদ্ধবাদীগণ এসব দলীল প্রমাণাদির কোন উত্তর দিতে পারেন না। তারা কেবল প্রত্যুত্তরে এর কথাই বলেন যে যেই সব আয়াতে كُلُّ شَيْئٍ  উল্লেখিত আছে বা مَالَمْ تكن تَعْلَمْ বলা হয়েছে, সে সকল ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধি বিধানের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে, অন্য কোন কিছুর জ্ঞান বোঝানো হয়নি। এর সমর্থনে তারা নিম্নলিখিত দলীলাদি উপস্থাপন করেন-
১) كُلُّ شَىْئٍ বলতে সীমাহীনতা বোঝায় এবং সীমাহীন বিষয়ের জ্ঞান খোদা ছাড়া অন্য কারো আয়ত্ত্বে থাকা তর্কশাস্ত্রের শৃংখল পরস্পরের অসীমতা অনুসারে সম্পূর্ণরূপে বাতিল বলে গণ্য । (যুক্তিশাস্ত্রের ‘তাসালসুল’ নামক দলীল দ্রষ্টব্য।)
২) অনেক তাফসীরকারকগণ كُلُّ شَيْئٍ এর ব্যাখ্যা করেছেনঃ আরবী (অর্থৎ ধর্মীয় বিষয়াদ) যেমন তাফসীরে জালালাইনে ও অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থে এরূপ ব্যাখ্যাই প্রদান করা হয়েছে।
(
৩) কুরআন শরীফের অনেক জায়গায় كُلُّ شَيْئٍ বলা হয়েছে । কিন্তু উহার দ্বারা কিয়দাংশ বা কিয়ৎ পরিমাণ ই বোঝানো হয়েছে। যেমন রাণী বিলকিস সম্পর্কে  وَاُوْتِيَتْ مِنْ كُلِّ شَيْئٍ  (অর্থাৎ বিলকিসকে সব কিছুই দেয়া হয়েছে) বলা হয়েছে অথচ বিলকিসকে প্রদত্ত বস্তু বা বিষয়ের কিছু বা কিঞ্চত পরিমাণই দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু এগুলো কোন দলীলই নয়।  নিছক ভুল ধারণা ও ধোকা  মাত্র । এগুলোর উত্তর নিম্নে দেয়া গেল ।
আরবী ভাষায় كُلّمَا    শব্দদ্বয় ব্যাপকতা বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। কুরআন শরীফের প্রত্যেকটি শব্দ অকাট্য। এতে মনগড়া কোন শর্ত জুড়ে দিয়ে শব্দকে সীমিত অর্থে প্রয়োগ করা জায়েয নয়। কুরআন শরফের ব্যাপকতা নির্দেশক শব্দগুলোকে হাদীছে আহাদ দ্বারা ও সীমিত অর্থে গ্রহণ করা যায় না । এমতাবস্থায় নিজস্ব কোন যুক্তি বা রায়ের ভিত্তিতে সীমিত অর্থে প্রয়োগের প্রশ্নই উঠে না।
(
১) كُلُّ شَيْئٍ বলতে সীমাহীনতা বোঝা যায় না বরং এ দ্বারা সীমাবদ্ধতাই বোঝা যায় । তাফসীরে কবীরে এর ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে- অর্থাৎ এতে কোন সন্দেহ নেই যে সংখ্যা দ্বারা ণনার বিষয়াটি সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রেই সম্ভবপর । কিন্তু كُلُّ  شَيْئٍ (প্রত্যেক জিনিস) শব্দ দ্বারা ঐ বস্তুর সীমাহীনতার অর্থ প্রকাশ পায় না। কেননা আমাদের মতে شَيْئ  (জিনিস)  বলতে যা কিছুর অস্তিত্ব আছে, শুধু তাই বোঝায় এবং যাবতীয় অস্তিত্ববান বস্তু সীমাবদ্ধতার গন্ডীতে আবদ্ধ।
তাফসীরে রূহুল বয়ানে একই আয়াতে ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিপিবদ্ধ আছে- এ আয়াত দ্বারা এ কথাটির বড় প্রমাণ মিলে যে যা কিছু অস্তিত্বহীন উহা  شَيْئ  বস্তু বলে গণ্য নয়।  কেননা যদি এটা বস্তু (অস্তিত্ববান) বলে গণ্য হয়, তাহলে অস্তিত্ববান সবকিছুই সীমাহীন হয়ে যায়। অথচ বস্তুসমূহ গণনা বা শুমারীর আওতাভুক্ত এবং যা কিছু গণনার আওতায় আসে, উহা কেবল সীমাবদ্ধতার পর্যায়ভুক্ত হতে  পারে।
২) তাফসীরকারকদের মধ্যে অনেকেই كُلُّ شَىْئٍ বলতে কেবল শরীয়তের আহাকামকে ধরে নিয়ছেন বটে, কিন্তু আবার অনেকেই সম্পুরণীয় বা সামগ্রীক ইলমে গায়েবের প্রতি নির্দেশ করেছেন। চিরাচরিত নিয়ামানুযায়ী যখন কিছু প্রমাণ ইতবাচক ও আর কিছু নেতিবাচক হয়, তখন ইতবাচক প্রমাণগুলিই গৃহীত হয়।
সুবিখ্যাত ‘নুরুল আনোয়ার’ গ্রন্থে تَعَارُضْ  (অসঙ্গতি বা বিরোধ) শীর্ষ আলোচনায় উল্লেখিত আছে وَالْمُثْبِتُ اَوْلى مِنَ النَّافِىْ অর্থাৎ স্বীকৃতি জ্ঞাপক প্রমাণ অস্বীকৃতি নির্দেশক প্রমাণ হতে অপেক্ষকৃত উত্তম। যে সমস্ত তাফসীরের উদ্ধৃতি আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি, সে গুলোতে যেহেতু বেশীরভাগ প্রমাণই স্বীকৃতি সূচক, কাজেই উহাই গ্রহণযোগ্য। অধিকন্তু স্বয়ং হাদীছ ও সু্প্রসিদ্ধ উলামায়ে উম্মতের উক্তিসমূহ দ্বারা এর তাফসীর করে আমি দেখাবো যে এমন কোন অনুপরমাণূ নেই, যা হুযুর পুর নুর (সাল্লাল্লাহু অলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর জ্ঞানানুভুতিতে আসেনি, এবং আমি এ গ্রন্থেরই পেশ কালাম শীর্ষক অধ্যায়ে উল্লেখ করেছি যে, কুরআনের হাদীছ ভিত্তিক তাফসীর অন্যান্য তাফসীর সমূহ থেকে উন্নত। ‍সুতরাং, হাদীছের সমর্থনপুষ্ট তাফসীরেই অধিকতর গ্রহণযোগ্য হবে। এও উল্লখ্যে যে, যে সকল তাফসীরকারকكُلُّ شَيْئٍ এর তাফসীরে আহকামে দ্বীনকে বোঝাতে চেয়েছেন, তারাওতো অন্যান্য বিষয় বা বস্তুর সম্পর্কীয় জ্ঞানের অস্বীকৃতির কথা বলেননি। সুতরাং, আপনারা অস্বীকৃতির কথা কোথা থেকে আবিষ্কার কলেন? কোন বিষয়ের উল্লেখ না করলে যে সে বিষয়ের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়, এ কথা বলেন কিভাবে? কুরআন শরীফে আছ- تَقِيْكُمَ الْحَرَّ  তোমাদের কাপড় তোমাদেরকে উত্তাপ থেকে রক্ষা করে। এরূপ উক্তি থেকে কি একথা বোঝা যাবে যে, কাপড় আমাদেরকে শীত থেকে রক্ষা করে না? এ কথাতো কুরআনে উল্লেখ করা হয়নি। অধিকন্তু, দ্বীন বললেও সবকিছুকে বোঝায়। জগতে এমন কি বিষয় আছে, যার উপর দ্বীনের আহকাম হালাল-হারাম ইত্যাদি প্রযোজ্য হয় না? ঐ সকল মুফাসসিরতো এ অভিমতই ব্যক্ত করেছেন যে দ্বীনি ইলম পরিপূর্ণতা লাভ করেছে একথা বললে সব কিছুর জ্ঞানকে বোঝানো হয়।
৩) বিলকীস ও অন্যান্যদের কাহিনীতে যে كُلُّ شَيْئٍ  বলা হয়েছে, সেখানে এমন আলামত বা লক্ষণ মওজুত আছে, যার ফলে একথা পরিষ্কাররূপে প্রতীয়মান হয় যে, كُلُّ شَيْئٍ  দ্বারা রাজত্বের কাজ কারবার সম্পর্কীয় প্রত্যেক কিছুই বোঝানো হয়েছে। সেখানে উক্ত শব্দ দ্বারা এ ব্যবহারিক অর্থের দিকে নির্দেশ করা হয়েছে। কিন্তু এখানে এমন কি লক্ষণ আছে, যে কারণে শব্দের আসল অর্থ বাদ দিয়ে তার ব্যবহারিক অর্থই করা যাবে?
আরও লক্ষ্যণীয় যে, কুরআন করীম সেখানে হুদহুদ পাখীর উক্তিকে নকল করেছে মাত্র । হুদহুদ বলেছিল وَاُوْتِيْتْ مِنْ كُلِّ شَيْئٍ   অর্থাৎ বিলকিসকে প্রত্যেক কিছুই দেয়া হয়েছে। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা এ খবর দেননি । হুদহুদের ধারণা ছিল যে বিলকিস সারা দুনিয়ার সবকিছুই পেয়ে গেছেন। কিন্তু এখানে মুস্তফা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছে- تِبْيَا نً لِكُلِّ شَيْئٍ  (প্রত্যেক কিছুর সুস্পষ্ট বিবরণ সম্বলিত)। হুদহুদ ভুল বলতে পারে, কিন্তু আল্লাহর কালামতো ভুল হতে পারে না। হুদহুদতো আরও বলেছিল وَلَهَا عَرْشٌ عَظِيْمٌ  (তাঁর এক বিরাট আরশ আছে) তাহলে বিলকিসের সিংহাসন কি আরশ আযীমই ছিল? বস্তুতঃ ‍কুরআনের অন্যান্য আয়াত থেকেও প্রতীয়মান হয় যে, كُلُّ شَيْئٍ  দ্বারা এখানে জগতের সবকিছুকেই বোঝানো হয়েছে, কুরআনেই ইরশাদ হয়েছেঃ

وَلَا رَطْبٍ وَّلَا يَابِسٍ اِلَّفِىْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ

(অর্থাঃ আর্দ্র শুষ্ক এমন কোন জিনিস নেই, যা লওহে মাহফুজে বা কুরআনে করীমে নেই।
এ ছাড়া সামনে উল্লেখিত বিভিন্ন হাদীছ, উলামা ও মুহাদ্দীনের উক্তি থেকেও এ কথার জোরালো সমর্থন পাওয়া যাবে যে জগতের প্রত্যেক কিছুর জ্ঞান হুযুর পুরনুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে দান করা হয়েছিল।
আমি ইনশাআল্লাহ হাযির-নাযির শিরোনামের আলোচনায় বর্ণনা করবো যে মৃত্যুর ফিরিশতা হযরত আযরাইল (আলাইহিস সালাম) এর সামনে সারা জগৎটাই যেন একটা তালার মত। আর ইবলীস এক পলকে সারা পৃথিবী ঘরে আসে। এ কথা দেওবন্দীগণ স্বীকার করেন যে আমাদের নবী আলাইহিস সালামের জ্ঞান সৃষ্টিকুলের সামগ্রিক জ্ঞান থেকে বেশী। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, হুযুর আলাইহিস সালামের সমগ্র সৃষ্টির জ্ঞান রয়েছে। আমি পঞ্চ বিষয়ের জ্ঞান علوم خمسه শীর্ষ আলোচনায় হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) ও তাকদীর লিখায় নিয়োজিত ফিরিশতা জ্ঞান সম্পর্কে আলোকপাত করবো, যা দ্বারা বোঝা যাবে যে গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চ ভিষয়ের জ্ঞান তাদেরও রয়েছে। যেহেতু হুযুর আলাইহিস সালাম সমস্ত সৃষ্টিকূল থেকে বেশী জ্ঞানী, কাজেই হুযুর আলাইহিস সালাম যে এসব বিষয়ের জ্ঞান বরং তার চেয়ে অধিক জ্ঞানের অধিকারী একথা মেনে নিতে হবে বৈ কি। আমাদের দাবী সর্বাবস্থায় প্রতিষ্ঠিত।
وَلِلهِ الْحَمْدُ (আল্লাহ যাবতীয় প্রশংসার অধিকরী) 

-সূত্রঃ জা’আল হক ১ম খন্ড

If anyone has any objections to our content, please email us directly: abswer@yahoo.com
Ask me on WhatsApp!

Post a Comment

Assalamu Alaikum Wa Rahmatullah
Greetings!
Provide your feedback.
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.