আমাদের সাইটের নতুন আপডেট পেতে এ্যাপ্স ইন্সটল করে রাখুন Install Now!

মসজিদের আলোকসজ্জা করার প্রমাণ (Evidence of mosque lighting)

Join our Telegram Channel!

সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে আবহমান কাল থেকে এ নিয়ম চলে আসছে যে, তারা সব সময়ই ছাওয়াব ও কবরে আলো হাসিল করা জন্য বিশেষ করে রামাদ্বান শরীফ অথবা শবে ক্বদরে এবং খতমে কুরআনের দিন মসজিদগুলোতে বেশ ঘটা করে আলোকসজ্জা করে থাকে। মসজিদগুলোকে সুন্দর সুসজ্জিত করে।  ওহাবীদের মসজিদগুলো জাঁকজমকহীন ও নিস্প্রভ থাকে। তাদের মসজিদ আলোকিত ও সুসজ্জিত করার তাওফীক হয় না। ওহাবীরা মুসলমানদের এ ছাওয়াবের কাজকে বিদআত ও হারাম এমনকি শিরক পর্যন্ত বলে থাকে। তাই প্রথম পরিচ্ছেদে এ মাসআলা সমূহের প্রমাণসহ আলোচনা করা হল। পাঠকদের থেকে ইনসাফের প্রত্যাশা আর রাব্বুল আলামীনের নিকট কবুলের আশা করছি।

মসজিদের আলোকসজ্জা করার প্রমাণ

মসজিদের সব সময় আলোকসজ্জ করা বিশেষতঃ রামাদ্বান মাসে বিশেষ করে শবে কদরে কিংবা কুরআন শরীফ খতমের দিন আলো ঝলমলে করা উত্তম ইবাদত। যা অত্যন্ত ছাওয়াবের কাজ।
১নং আল্লাহ রাব্বুল ইযযত কুরআনুল করীমে ইরশাদ করেন-

اِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ أَمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاَخِرِ

নিশ্চয়ই আল্লাহ পাকের মসজিদ গুলোকে তারাই আবাদ করে যারা আল্লাহ তা’আলা  এবং কিয়ামত উপর ঈমান রাখে।
মুফাসসিরীনে কিরাম বলেছেনে, মসজিদগুলোতে নামাযের জামাআত কায়িম করা মসজিদগুলোকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ভালো ভালো চাটাই, বিছানা ইত্যাদি বিছানো আলোকসজ্জা করা ইত্যাদি মসজিদ আবাদির অন্তর্ভূক্ত।
তাফসীরে রূহুল বায়ান বলছে- সুলায়মান (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মসজিদে বায়তুল মুকাদ্দাসে ‘কিবরীতে আহমার’ (লাল বাতি) দ্বারা আলোকসজ্জা করতেন, যার আলোতে অনেক মাইল পর্যন্ত মহিলারা সুতা কাটাতো।
এ আয়াত  দ্বারা বুঝা  গেল মসজিদগুলোতে জাঁকজমক ও আলোকসজ্জা করা ঈমানের নিদর্শন। সুস্পষ্ট ব্যাপার হলো মসজিদগুলোতে নিস্প্রভ ও আবাদহীন রাখা কাফিরদের নিদর্শন।
(২) ইবনে মাজাহ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাদ্বি.) থেকে বর্ণনা করেন –

قَالَ اَوَّلُ مَنْ اَسْرَجَ فِى الْمَسَاجِدِ تَمِيْمُ الدَّارِىْ

তিনি বলেন, যিনি সর্বপ্রথম মসজিদে বাতি জ্বালিয়েছেন তিনি হলেন সাহাবী হযরত তামীম আদদারী (রাদ্বি.)।
এ হাদিস দ্বারা বুঝা গেলো যে মসজিদে আলোকসজ্জা করা সহাবীর সুন্নাত।
স্মতর্ব্য যে হুযুর আনওয়ার (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সময়কালে বাতি জালানোর সাধারণ রেওয়াত ছিলো না। জামাআতের সময় খেজুর গাছের লাকড়ী জালিয়ে আলোকিত করা হতো। সে ক্ষেত্রে  হযরত তামীম আদদারী (রাদ্বি.) বাতি জ্বালিয়েছেন।
(৩) আবূ দাউদ হযরত উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনা (রাদ্বি.) থেকে বর্ণনা করেন-
তিনি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে মসজিদে বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে হুকুম দিন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করলেন, ঐ মসজিদে যাও এবং সেখানে নামায পড়ো। ঐ সময়ে শহরগুলোতে যুদ্ধ বিগ্রহ চলছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যদি তুমি সেখানে পৌঁছতে ও নামায পড়তে না পারো তাহলে সেখানে তৈল পাঠিয়ে দাও। তা দ্বারা চেরাগ জালানো হবে। এ হাদিস থেকে কয়েকটি মাসআলা জানা গেলো।
প্রথমত: মসজিদে বায়তুল মুকাদ্দাসে নামায পড়ার জন্য সফর করা সুন্নাত। হুযুর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিরাজে যেখানে সমস্ত নবীকে নামায পড়িয়েছেন। স্বয়ং হুযুর আনওয়ার (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং সকল পয়গাম্বর (আলাইহিমুস সালাম) সফর করে সেখানে নামায পড়তে গিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত: মসজিদে বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রচুর বাতি জালানো হত। যেমন ক্বানাফিল (বাতিসমূহ) বহুবচন হিসেবে ব্যবহার করার দ্বারা জানা গেল।
তৃতীয়ত: মসজিদে আলো জালানো সেখানে নামায পড়ার মতোই। অর্থাৎ তা অত্যন্ত উত্তম ইবাদত এবং ছাওয়াব এর কাজ।
চতুর্থত: মসজিদে বাতি জ্বালানোর জন্য দূর থেকে তৈল পাঠানো সাহাবায়ে কিরামের সুন্নাত।
(৪) মুহাদ্দিস ইমাম রাফিঈ হযরত মুআয বিন জাবাল (রাদ্বি) থেকে বর্ণনা করেন-

قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ بَنى لِلهِ  مَسْجِدًا بَنِىَ اللهُ لَهُ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ وَمَنْ عَلَّقَ فِيْهِ قَنْدِيْلا صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُوْنَ اَلْفِ مَلَكٍ حَتَّى يَنْطَفِىْ ذلِكَ الْقَنْدِيْلُ

নবী করীম (সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন  যে ব্যাক্তি আল্লাহ তায়ালার জন্য মসজিদ তৈরী করবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করবেন। আর যে ব্যক্তি মসজিদে একটি বাতি জ্বালাবে তার জন্য সত্তর হাজার ফিরিশতা দু’আ করতে থাকবেন যতক্ষন ঐ বাতি নিভে না যায়। যানা গেল মসজিদ আলোকিত করা সত্তর হাজার ফেরেশতার দুআ নেয়ার মাধ্যম।
(৫) ইবনে বুখারী হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রাদ্বি.)  থেকে বর্ণনা করেন-

قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ عَلَقَ فِىْ مَسْجِدٍ قَنْدِيْلًا صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُوْنَ اَلْفِ مَلَكٍ حَتَّى يَنْطَفِىَ ذلِكَ الْقِنْدٍيْلُ

তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, যে ব্যাক্তি মসজিদে একটি বাতি লাগাবে তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা দু’আ করবেন যতক্ষন পর্যন্ত ঐ বাতি নিভে না যায়।
বুঝা গেল যেমনিভাবে মসজিদে বাতি জালানো ছাওয়াব তেমনিভাবে মসজিদে প্রদীপ তৈল অথবা বাতি দেওয়াও ছাওয়াব। চাই একটি হোক কিংবা অনেক।
(৬) মুহাদ্দিস ইবনে শাহীন হযরত আবূ ইসহাক হামদানী  থেকে বর্ণনা করেন-

قَالَ خَرَجَ عَلِىُّ بْنَ أَبِىْ طَالِبِ فِى أَوَّلِ لَيْلَةٍ مِنْ رَمْضَان وَالْقَنَادِيْلَ تَزْهَرُ وكِتَابُ اللهِ يتْلِى فَقَالَ نَوَّرَ اللهُ لَكَ يَا اِبْنَ الْخَطَّابِ فِىْ فَبَرِكَ كَمَا نَوَّرْتَ مَسَاجِدَ اللهِ تَعَالَى بِالْقُرْانِ

তিনি বলেন, হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাদ্বি.) রামাদ্বানের প্রথম রাতে মসজিদে নববীতে আগমন করলেন তখন মসজিদে নববীতে প্রদীপগুলো ঝলমল করছিলো এবং কুরআনে করীমের তিলাওয়াত চলছিলো। তখন তিনি বললেন হে উমর ইবনে খাত্তাব (রাদ্বি.) আল্লাহ তায়ালা আপনার কবরকে আলোকিত করুন, যেমনিভাবে আপনি মসজিদকে কুরআনে তিলাওয়াতের সময় আলোকিত করেছেন।
(৭) ইমাম বুখারী কিছু সংখ্যক মুহাদ্দিস থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আমিরুল মু’মিনীন আলী (রাদ্বি.) থেকে  তাদের কাছে এ রিওয়ায়াত পৌঁছে যে,

أَنَّهُ قَالَ نَوَّرَ اللهُ قبَرَ عُمَرَ كَمَا نَوَّرَ عَلَيْنَا مَسَاجِدَنَا

তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা হযরত উমর (রাদ্বি.) এর কবরকে আলোকিত করে দিন যেভাবে তিনি আমাদের মসজিদগুলোকে আলোকিত করেছেন।
শেষের এ বর্ণনাগুলো দ্বারা বুঝা গেল যে, রামাদ্বান শরীফে মসজিদে আলোকসজ্জা করা হযরত উমর (রাদ্বি.) এর সময় প্রচলিত। সম্মানিত সাহাবায়ে কিরাম এ ব্যাপারে কোন আপত্তি করিননী। বরং হযরত আলী মুরতাদ্বা )রাদি.( এ ব্যাপারে তাঁর জন্য  দু’আ করেছেন।  এটাও বুঝা গেল যে মসজিদ আলোকিত করার দ্বারা কবরও আলোকিত হবে ইনশাআল্লাহ। এ জন্য এখন যে ব্যক্তি মসজিদ আলোকিত করতে বাধা দিচ্ছে সে পরোক্ষ ভাবে সাহাবায়ে কিরামের সুন্নাতের উপর আপত্তি করছে। এ আলো জ্বালানোর বিরুদ্ধবাদীরা নিজেদের কবরকে অন্ধকারময় করে দিচ্ছে।
(৮) রব তাআলা এসব বিরুদ্ধবাদি সম্পর্কে ইরশাদ করেন-

وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ أنْ بُّذكِرَ فِيْهَا امْمُهُ وَسَعى فِيْ خَرَ ابِهَا

তার চেয়ে বড় যালিম কে যে ব্যাক্তি  আল্লাহ তায়ালার মসজিদগুলোতে আল্লাহর যিকর থেকে বাধা দেয় আর এর ক্ষতি করার চিন্তা করে।
এ আয়াতে ঐ সব লোকদেরও নিন্দা রয়েছে যারা মসজিগুলোতে নামায, আল্লাহর যিকর, কুরআন তিলাওয়াত না’ত খানী ইত্যাদি থেকে বাধা দেয়। এবং ঐ সব লোকেরও নিন্দা করা হয়েছে যারা মসজিদে চাটাই বিছানা বিছানো, আলো জ্বালানো ইত্যাদি থেকে বাধা দেয়। কারণ মসজিদের আবাদী তথা পরিচর্যার মধ্যে এসব রয়েছে।
বিবেকেরও চাওয়া যে বর্তমান সময়ে মসজিগুলো সাজানো, সব সময় কিংবা বিশেষ বিশেষ সময়ে আলোকসজ্জা করা উওম। কেননা আমরা বর্তমান আমাদের আবাসস্থলগুলোকে সাজানো-গোছানো রাখি।
বিয়ে-শাদি ইত্যাদি অনুষ্ঠানে উদার হস্তে আলোকসজ্জা করে থাকি, বিল্ডিংগুলো সাজাই। যদি আমাদের ঘর-বাড়ি  সুসজ্জিত ও আলোকসজ্জিত করা যায়, তাহলে আল্লাহর ঘর যা সকল ঘরের চেয়ে উত্তম, কেন সুসজ্জিত করা যাবেনা? মানুষের মনে মসজিদের মহত্ত ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এসব করা প্রয়োজন। 

-সুত্রঃ জা’আল হক ৩য় খন্ড

Follow us WhatsApp Channel!
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.