নবীগণ নিষ্পাপ (কুরআনী আয়াতসমূহ দ্বারা প্রমান)
নবীগণ যে নিষ্পাপ, তা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত, বিশুদ্ধ হাদীছসমূহ, উম্মতের ঐক্যমত ও আকলী দলীলসমূহ দ্বারা প্রমাণিত আছে। একমাত্র সে অস্বীকার করতে পারে, যে মন মানসিকতার দিক দিয়ে অন্ধ।
কুরআনী আয়াতসমূহ :
(১) আল্লাহতা’আলা শয়তানকে বলেছেন- اِنَّ عِبَادِىْ لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطنٌ (ওহে) ইবলীস, আমার বিশিষ্ট বান্দাদের উপর তোমার কোন কর্তৃত্ব নেই।)
(২) শয়তান নিজেই স্বীকার করেছিল- وَلَاُغْوِيَنهُمْ اَجْمَعِيْنَ اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلِصِيْنَ (হে মওলা, তোমার বিশিষ্ট বান্দাগণ ব্যতীত বাকী সবাইকে বিপথগামী করবো।) এতে বোঝা গেল যে নবীগণ পর্যন্ত শয়তান যেতে পারে না। তাই সে তাঁদেরকে না পারে বিপথগামী করতে, না পারে কুপথে পরিচালনা করতে। তাহলে তাঁদের থেকে গুনাহ কিভাবে প্রকাশ পেতে পারে? আশ্চর্যের বিষয় নবীদেরকে মাসুম স্বীকার করে শয়তান তাদেরকে বিপথগামী করার থেকে নিজের অপারগতা স্বীকার করছে। অথচ এ যুগের ধর্মদ্রোহীরা তাদেরকে গুনাহগার মনে করছে। বাস্তবিকই এরা শয়তান থেকেও নিকৃষ্ট।
(৩) হযরত ইউসুফ (আঃ) বলেছিলেন- مَاكَانَ لَنَا اَنْ نشْرِكَ بِاللهِ مِنْ شَيْئِ আমরা নবী সম্প্রদায়ের পক্ষে খোদার সাথে শিরক করাটা অশোভনীয়।)
(৪) হযরতশুয়াইব (আঃ) স্বীয় কউমকে বলেছিলেন- مَااُرِيْدَ اَنْ اَخَالِفَكُمْ اِلى مَا اَنْهَا كُمْ (যেটা তোমাদের নিষেধ করি, সেটা নিজে করবো, এ ধরনের ধারণা আমি করি না।) বোঝা গেল যে নবীগণ শিরক ও গুনাহ করার ধারণাও কখনো করেন না। এটাই হচ্ছে নিষ্কলুষতার হাকীকাত।
(৫) হযরতইউসুফ (আঃ) বলেছেন-
وَمَا اُبرى نَفْسِىْ اِنَّ النَّفْسَ لَاَمَّرَهٌ بِاالسُّوْءِ اِلَّا مَارَحِم رَبِّىْ
(আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না। মানুষের মন অবশ্যই মন্দকর্ম প্রবণ। তবে যার প্রতি আল্লাহর দয়া হয়েছে।) এখানে এ রকম বলা হয়নি যে, আমার আত্মা মন্দকর্মপ্রবণ, বরং বলেছেন- সাধারণ আত্মা জনসাধারণকে মন্দকর্মে অনুপ্রাণিত করে। কেবল ওসব আত্মাকে বিপথগামী করতে পারে না, যে গুলোর প্রতি খোদার বিশেষ রহমত রয়েছে। এ গুলো হচ্ছে নবীগণের আত্মা। তাঁদের আত্মা তাঁদেরকে ধোঁকা দিতে পারে না।
(৬) আল্লাহতা’আলা ইরশাদ ফরমান-
اِنَّ اللهُ اَصْطَفَى اَدَمَ وَنُوْحا وال اِبْرَاهِيْمَ وَالَ عِمْرَانَ عَلَى الْعلَمِيْنَ
(আদমকে, নুহকে, ইব্রাহীমের বংশধর এবং ইমরানের বংশধরকে আল্লাহ তা’আলা বিশ্বজগতে প্রাধান্য দিয়েছেন।) এতে বোঝা গেল সমস্ত জগতের মধ্যে নবীগণ শ্রেষ্ঠ। জগতের মধ্যে নিষ্পাপ ফিরিশতাগণও রয়েছেন। আর ফিরিশতাদের বৈশিষ্ট হচ্ছে- لَا يَعْصُوْنَ اللهَ مَااَمَرَ هُمْ তাঁরা কখনও নাফরমানী করেন না। যদি নবীগণ গুণাহগার হন, তাহলে ফিরিশতাগণ নিশ্চয়ই নবীদের উর্ধে স্থান পেতেন।
(৭) আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান- لَايَنَالُ عَهْدِى الظّلِمِيْنَ আমার প্রতিশ্রুতি নবুয়তের সিলসিলা জালিমদের অর্থাৎ ফাসিকদের সাথে সংমিশ্রিত হবে না। এতে বোঝা গেল অনাচার ও নবুয়াত একত্রিত হতে পারে না। কুরআনকরীম নবীদের উক্তি উদ্ধৃত করে ইরশাদ করেছেন-
يَاقَوْمُ لَيْسَ بِىْ ضَلَالَةٌ وَّلكِنِّىْ رَسُوْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعلَمِيْنَ
(হে আমার কউম, আমার কাছে গুমরাহী বলতে কিছু নেই, আমি আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ।) এ আয়াতে لكنى শব্দ থেকে বোঝা গেল যে, গুমরাহী ও নবুয়াত একত্রিত করা যায় না। কেননা নবুয়াত হচ্ছে নূর আলো আর গুমরাহী হচ্ছে অন্ধকার। আলো-অন্ধকার একত্রিকরণ অসম্ভভ।
-সুত্রঃ জা’আল হক ২য় খন্ড-
নবীগণ নিষ্পাপ (হাদীছসমূহ দ্বারা প্রমান)
(১) মিশকাত শরীফের الوسوسة অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে একজন শয়তান অবস্থান করে, যাকে ‘করীন’ বলা হয়। কিন্তু আমার (হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করীন মুসলমান হয়ে গেছে। সে আমাকে সুপরামর্শই দিয়ে থাকে।
(২) একই অধ্যায়ে, আরও বর্ণিত আছে যে, প্রত্যেক শিশুকে জন্মের সময় শয়তান মারে। কিন্তু হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্মের সময় শয়তান ছুঁতেও পারেনি। এ হাদীছদ্বয় থেকে জানা গেল যে উল্লেখিত নবীদ্বয় শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্ত।
(৩) মিশকাত শরীফের কিতাবুল গোসল থেকে জানা যায় যে, নবীদের স্বপ্নদোষ হয় না। কেননা এতে শয়তানী প্রভাব রয়েছে। এমনকি তাদের স্ত্রীগণও স্বপ্নদোষ থেকে পরিত্রাণ প্রাপ্ত।
(৪) নবীগণের হাই আসে না। এতেও শয়তানী প্রভাব রয়েছে। এ জন্য তখন ‘লা হওলা’ বলা হয়।
(৫) মিশকাত শরীফের ‘আলামাতে নবুয়াত’ শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে- (হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বক্ষ বিদীর্ণ করে এক টুকরা মাংশ বের করে ফেলে দেয়া হয় এবং বলা হয় যে, সেটা শয়তানী অংশ। অতঃপর তা যম্ যম্ কুপের পানি দিয়ে ধুয়ে দেয়া হয়। এতে বোঝা গেল (হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আত্মা শয়তানী প্রভাব থেকে পবিত্র।
(৬) মিশকাত শরীফের مناقب عمر শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে- হযরত উমর (রাঃ) যে রাস্তা দিয়ে গমন করেন, তথা হতে শয়তান পালিয়ে যায়। এতে বোঝা গেল, যাঁর প্রতি নবীদের সুদৃষ্টি রয়েছে, তিনিও শয়তান থেকে নিরাপদ থাকেন। তাই নবীদের প্রশ্নই আসে না।
-সুত্রঃ জা’আল হক ২য় খন্ড-
নবীগণ নিষ্পাপ (উলামায়ে উম্মতের উক্তিসমূহ)
নবীগণ যে নিষ্পাপ, এ ব্যাপারে সবসময় উম্মতে মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে ঐক্যমত রয়েছে। শয়তানী দল ছাড়া কেউ এটা অস্বীকার করে না। যেমন শরহে আকায়েদে নসফী, শরহে ফিকহ আকবর, তফ্সীরাতে আহমদীয়া, তফসীরে রূহুল বয়ান, মদারেজুন নাবুয়াত, মওয়াহেবে লাদুনিয়া, শিফা শরীফ, নছিমে রেয়াজ ইত্যাদি কিতাবে এর বিবরণ রয়েছে। তফ্সীরে রূহুল বয়ানে- مَاكُنْتَ تَدْرِىْ مَا الْكِنَب الااية আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে- এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, নবীগণ ওহী প্রাপ্তির আগে মুমিন ছিলেন এবং গুনাহ কবীরা, এমনকি জিল্লতীপূর্ণ সগীরা গুনাহ থেকেও পবিত্র ছিলেন। নবুয়াতের পরেও পবিত্রছিলেন। তফ্সীরাতে আহমদীয়াতে বর্ণিত আছে-اِنَّهُمْ مَعْصُوْمُوْنَ عَنِ الْكُفْرِ قَبْلَ الْوَحِىْ وَبَعْدَهُ بِالْاِجْمَاعِ وَكَذَا عَنْ تَعَمُّدِ الْكَبَائِرِ عِنْدَالْجَمْهُوْرِ
নবীগণ ওহী প্রাপ্তির আগে এবং পরে সর্বসম্মতিক্রমে কুফরী থেকে নিষ্পাপ ছিলেন। অধিকাংশ আলিমদের মতে গুনাহে সগীরা থেকেও পবিত্র ছিলেন। মোট কথা হলো পরলোকগত উম্মতের সর্বসম্মত অভিমতে নবীগণ নিষ্পাপ এবং এটা এত সুস্পষ্ট অভিমত যে এর জন্য অন্যান্য ইবারত উদ্ধৃত করার আদৌ প্রয়োজন নেই।
যুক্তিও বলে যে নবীগণ কুফরী ও পাপ থেকে সদা পবিত্র
(১) কুফরী, হয়তো আকায়েদ সম্পর্কে অজ্ঞতা, কিংবা আত্মার অবাধ্যতা অথবা শয়তানের কুমন্ত্রণায় প্রকাশ পায়। কিন্তু আমি প্রথম অধ্যায়ে প্রমাণ করেছি যে, নবীগণ আল্লাহ ওয়ালা হয়েই জন্ম গ্রহণ করেন, অধিকন্তু তাদের আত্মাসমূহ পাক এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে নিরাপদ। যখন এ তিনটি কারণ অনুপস্থিত, তখন তাদের থেকে কুফরী ও পাপ কিভাবে প্রকাশ পেতে পারে?
مَاكَانَ الِمُؤْمِنٍ وَّ لَامُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهُ اَمْرً ااَنْ يَّكُوْنَ لَهُمُ اَلخِيْرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْ
مَنْ وَقَّرَ صَاحِبَ بِدْعَةٍ فَقَدْ اَهانَ عَلى هَدَمِ الْاِسْلَامِ
وَلَوْ انَّهُمْ اِذْ ظَلَمُوْا اَنْفُسَهُمْ جَاءُوْكَ الاية
-সুত্রঃ জা’আল হক ২য় খন্ড-
Assalamu Alaikum Wa Rahmatullah
Greetings!
Provide your feedback.