জরিপ বিজ্ঞানে ব্যবহৃত কিছু শব্দ ও পারিভাষিক বিশ্লেষণ
বদর: বদর অর্থ শুদ্ধ করা, ভূমি রেকর্ড ও নকশার ভুল-ত্রুটি সংশোধন প্রক্রিয়াকে বদর বলে। আর একাজে নিয়োজিত আমিনকে বলে বদর আমিন।
মৌজা: এটি আরবী শব্দ موضع থেকে গৃহিত, অর্থ- স্থান, এলাকা বা মহল্লা। ভূমি জরীপের একটি ভৌগোলিক ইউনিটকে মৌজা বলে। একটি মৌজা প্রায় একটি গ্রামের সমান বা তারও বেশি। সি.এস জরীপের সময় এক একটি মৌজাকে পৃথক পরিচিতি নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশে মোট মৌজা আছে ৫৮৬০৮ টি। তবে এর মধ্যে ৩৫৬ টি মৌজা এখনো জরীপ করা হয়নি। একটি মৌজার আয়তন কম-বেশি ১ বর্গমাইল পরিমাণ হয়ে থাকে।
মৌজা নকশা: ভূমি জরীপের সময় মাঠে সরেজমিনে জরীপের মাধ্যমে মৌজার প্রতিটি ভূ-খণ্ডকে পরিমাপ করে এর অন্তর্ভুক্ত ফসলসমূহের অবস্থান ও আয়তনসংবলিত যে নকশা প্রস্তুত করা হয় তাকে “মৌজা নকশা" বলা হয়।
তৌজি (Tauzi): ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তীয় প্রথায় ভূমির জন্য কালেক্টরিতে (জেলার রাজস্ব আদায়ের প্রধান অফিস) যে রেজিস্ট্রি বই রাখা হয়, তাকে তৌজি বলে। এতে ভূমির পরিচিতিমূলক একটি নম্বর ব্যবহার করা হত, তাকে তৌজি নম্বর বলে।
জে.এল নম্বর: প্রতিটি থানায় অবস্থিত মৌজাসমূহকে উত্তর-পশ্চিম কোণ থেকে পর্যায়ক্রমে একটি করে ক্রমিক নম্বর দেওয়া হয়। মৌজার এ পর্যায়ক্রমে পরিচিতিমূলক ক্রমিক নম্বরকেই জে.এল নম্বর বলা হয়, যার পূর্ণনাম জুরিসডিকশন লিস্ট নম্বর।
দাগ নম্বর: জরীপকালে জমির নকশা প্রস্তুত করার সময় প্রত্যেকটা প্লটের উপর পরিচিতিমূলক ক্রমিক নম্বর ব্যবহার করা হয়। তাকে জমির দাগ নম্বর বলে। এটি নকশার উত্তর-পশ্চিম কোণ থেকে শুরু হয়ে ক্রমানুসারে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে গিয়ে শেষ হয়।
কিত্তা: দাগের প্রতিশব্দ। কোনো কোনো অঞ্চলে দাগ নম্বরকে কিত্তা নম্বর বলে।
বাটা দাগ/ভাঙ্গা দাগ/ছুট দাগ: জরীপকালে নকশা প্রস্তুত করার সময় উক্ত নকশার প্লটে দাগ নম্বর বসানো শেষ হওয়ার পর ভুলে কোনো দাগ নম্বর ছুটে যাওয়া বা কোনো দাগের ভূমিকে বিভাজনের প্রয়োজনে নকশার মাঝে আরো কোনো দাগ নম্বর সংযোজন করার প্রয়োজন হলে, তখন পরবর্তী সিরিয়ালকে কোনোরূপ পরিবর্তন না করে উক্ত আবিষ্কৃত প্লটে যে নতুন নম্বর দেওয়া হয়, তাকে বাটা দাগ বলে। আর তাতে ভগ্নাংশের সুরতে দুটি নম্বর ব্যবহার করা হয়। ভুলে বাদ পরার সুরতে উক্ত প্লটের পাশের কোনো প্লট নম্বরকে ভগ্নাংশের লব হিসেবে উপরে এবং নকশার সর্বশেষ নম্বরের পরবর্তী কোনো নম্বরকে হর হিসেবে নিচে দিয়ে যেমন, এভাবে ৫০০/৪৩৫৬ লেখা হয়। আর বিভাজনের সুরতে ঐ প্লটের পূর্ব নম্বরকেই লব হিসাবে উপরে লেখতে হয়। বাটা দাগের ক্ষেত্রে সর্বদাই নিচের অংকটি বড় এবং উপরেরটি ছোট হয়। নিচের সংখ্যাটিই মূল নম্বর আর উপরেরটি হল পরিচিতিমূলক। নকশার প্লটটি ছোট হলে অনেক সময় শুধুমাত্র হর অংকটি লেখা থাকে।
সীট: কোনো একটি বড় মৌজার একাধিক নকশা থাকলে প্রতিটি নকশাকে আলাদাভাবে সীট বলে।
খতিয়ান: এটি আরবি শব্দ (خط) অর্থ লিখন শব্দ থেকে উদ্গত। মূলত খতিয়ান ভূমি মালিকের একটি রেকর্ড। বিখ্যাত আইন বিশেষজ্ঞ বিচারপতি লেখক কাজী এবাদুল হকের মতে খতিয়ান হচ্ছে 'জমা-জমির বিবরণ সংবলিত জরীপকালে প্রণীত সরকারি দলিল।' খতিয়ানে জমির দাগ নম্বর, পরিমাণ, প্রকৃতি, খাজনা, প্রজা ও ভূমি অধিকারীর নাম ইত্যাদির বিবরণ লিপিবদ্ধ থাকে। এক কথায়, ভূমির মালিকগণের নাম ঠিকানা, হিস্যা, দাগ নম্বর, ভূমির পরিমাণ, শ্রেণি, খাজনা ইত্যাদি সংবলিত যে তালিকা প্রস্তুত করে ভূমি মালিককে দেওয়া হয়, তাকে খতিয়ান বলে। খতিয়ান রেকর্ড অব রাইটস এর একটি অংশ। সরকারিভাবে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করার পূর্বে খতিয়ানকে পর্চা বা মাঠপর্চাও বলে।
পর্চা/ মাঠ পর্চা: জরীপ চলাকালীন খতিয়ানের যে খসড়া প্রকাশ করা হয় তাকে পুরোপুরি সরকারি গেজেট লাভের পূর্ব পর্যন্ত পর্চা/মাঠ পর্চা/ ডিপি খতিয়ান বলা হয়। আর গেজেটের পর তাকে খতিয়ান বলা হয়।
ডিপি খতিয়ান: ডিপি এটি ড্রাফট পাবলিকেশন এর সংক্ষিপ্তরূপ। অর্থ- খসড়া প্রকাশনা। খতিয়ানকে চূড়ান্তভাবে গেজেট আকারে প্রকাশের পূর্বে জরীপ বিভাগ যে প্রাথমিক পর্চা সরবরাহ করে, তাকে ডিপি খতিয়ান ডিপি পর্চা বা মাঠপর্চা বলে। পর্চাতে কোনো ভুল ধরা পড়লে গেজেটের পূর্বে সেটেলম্যান্ট দপ্তরে এবং গেজেটের পর ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল/আদালতের মাধ্যমে সংশোধন করানো যায়।
পাইথ: রাজশাহী এলাকায় প্রচলিত খতিয়ানের প্রতিশব্দ।
এজমালী: এটি আরবী শব্দ। একাধিক মালিকের শরীকানাকে পরিভাষায় এজমালী বলে। কোনো জমিতে একাধিক মালিকের শরীকানা থাকলে তাকে এজমালী জোত বলে।
তফসীল: কোনো সম্পত্তির দলিলে বর্ণিত ঐ সম্পত্তির মৌজা, জে. এল নং, তৌজি নং, খতিয়ান নং, দাগ নম্বর, জমির পরিমাণ ও চৌহদ্দি সংবলিত বিবরণীকে তার তফসীল বলে।
ভায়া দলিল: কোনো জমিনের বর্তমান মালিকের পূর্বেকার সকল দলিলকে ভায়া দলিল বলা হয়।
ভায়া দলিল: কোনো জমিনের বর্তমান মালিকের পূর্বেকার সকল দলিলকে ভায়া দলিল বলা হয়।
আর ও আর: রেকর্ড অব রাইটস এর সংক্ষিপ্ত রূপ। দলিল, পর্চা/ খতিয়ান, ম্যাপ ইত্যাদিকে একত্রে রেকর্ড অব রাইটস বা সংক্ষেপে ROR বলে।
ইন-সিটু: ভুমি জরীপের সময় সরেজমিনে রেললাইন, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, ইলেক্ট্রিক গ্রীড, লাইনের পোস্ট, মাইলফলক/কিলোমিটারফলক, পাকা ইমারত, পুরনো গাছ ইত্যাদি যেসব স্থায়ী জিনিস নকশায় চিহ্নিত করে দেখানো হয়, তাকে সার্ভে ইন-সিটু বলে।
এডটেড স্টেশন: সরেজমিনে কোনো ভূমির সঠিক সীমানা নির্ধারণের জন্য কোনো একটি স্থান (আনুমানিক সঠিক) মেনে নিয়ে সেখান থেকে মাপ শুরু করা হয়। এই মেনে নেওয়া স্থানকে বলা হয় এডপ্টেড স্টেশন। সঠিক এডপ্টেড স্টেশন নির্বাচনের জন্য প্রাচীন কোনো আলামত অথবা কোনো সম্ভাবনাময় স্থানকে তিন দিকের মাপ মিলিয়ে যাচাই করে নির্ণয় করা যেতে পারে। এডপ্টেড স্টেশন সঠিক হলে, সীমানা নির্ধারণও সহজ ও সঠিক হবে ইনশাআল্লাহ।
ডিমার্কেশন: সঠিক এডপটেড স্টেশন নির্ণয় করে মেপে-জোকে কোনো প্লটের প্রকৃত অবস্থান নির্ধারণ করাকে ডিমার্কেশন বলে।
খারিজ বা নামজারী (মিউটেশন): ভূমি ব্যবস্থাপনায় খারিজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খরিদা বা ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিকে বর্তমান মালিকের নামে আলাদাভাবে নামজারী করে জমা ধার্য করলে তাকে খারিজ বা নামজারী বলে।
পরগনা: (এটি একটি ফারসি শব্দ- এ) এক বা একাধিক মৌজা নিয়ে একটি মহাল হয়। কয়েকটি মহাল নিয়ে একটি ইউনিট হয় যাকে পরগনা বলা হয়। পরগনা ছিল জমিদারী প্রথায় একটি বৃহৎ ইউনিটের নাম। অর্থাৎ, জমিদারী প্রথায় মৌজার সমষ্টিকে মহাল এবং মহালের সমষ্টিকে পরগনা বলা হত।
চাকলা: একাধিক পরগনায় বিস্তীর্ণ জমিদারি এলাকাকে চাকলা বলা হত। চাকলার মধ্যস্বত্বভোগীদের চাকলাদার বলা হত। কোনো কোনো এলাকায় তাদের ভূঁইয়া বলা হত।
ভিটি: এমন উঁচু জমি যাতে বাড়ী-ঘর করা যায়।
পতিত: অনাবাদী ফেলে রাখা জমিকে পতিত জমি বলে।
লায়েক পতিত: যে জমিতে ফসল করা যায়, কিন্তু তা না করে পতিত রাখা হয়েছে।
ডোবা: ব্যবহৃত ক্ষুদ্র জলাশয়।
নালা: যে সরু পথ দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হয় তাকে নালা বা ড্রেন বলে।
হাওর: বিস্তীর্ণ ফসলি ভূমি জলমগ্ন হলে তাকে হাওর বলে।
বাওড়: নদী তার চলমান গতিপথ পরিবর্তন করে অন্য পথে প্রবাহিত হলে পূর্ব পথের স্রোত বন্ধ হয়ে যে বিশাল জলাশয় সৃষ্টি হয় তাকে বাওড় বলে।
বিল: ঐ জলাশয় ভূমি যেখানে সারাবছর পানি থাকে।
গোপাট: গবাদিপশু চলাচলের পথ।
বাইদ: কৃষি নিচু জমিকে বাইদ বলে। এটিকে নাল জমিও বলা হয়। বাইদ এবং নাল দুটি পরস্পর প্রতিশাদ।
চান্দিনা ভিটি: হাট-বাজারের ভিটি এলাকাকে চান্দিনা ভিটি বলে।
পালাম: বসতবাড়ী সংলগ্ন সবজির জন্য ব্যবহৃত উঁচু ভিটি জমি।
নজর: প্রজাকর্তৃক জমি পত্তনী গ্রহণের সালামী।
মিরা: মুসলিম উত্তরাধিকারে হস্তান্তরযোগ্য স্থায়ী প্রজাস্বত্ব।
মৌরাশ: মুসলিম উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভূমিস্বত্ব।
মোকারাবী: যে খাজনা কোনো হিসাবের ভিত্তিতে ধরা হয় নাই।
রাজস্ব: রাজ্যের অংশ বা খাজনা।
তাকাভী ঋত: বাদশাহী আমলে জনসাধারণকে প্রদত্ত সুদমুক্ত ঋত।
খিরাজ: এটি আরবী শব্দ। অর্থ- কর/ খাজনা, কোনো প্রজা কর্তৃক ভূমি দখল বা দখলিয় ভূমি ব্যবহারের জন্য উক্ত প্রজা কর্তৃক ল্যান্ডলর্ডকে প্রদেয় খাজনা / টেক্স।
লাখেরাজ: এটি আরবী শব্দ খিরাজ এর সাথে লা যোগ করা হয়েছে। অর্থ খেরাজ বা খাজনা হীন (ভূমি)। অর্থাৎ নিষ্কর ভূমিকে বলা হয় লাখেরাজ।
বাদশাহী লাখেরাজ: মুসলিম বাদশাহ বা সম্রাট কর্তৃক ধর্মপরায়ণ, জ্ঞানী ও বিদ্বান ব্যক্তিদের ভরণপোষণের জন্য প্রদত্ত নিষ্কর ভূমি।
অবাদশাহী লাখেরাজ: মুসলিম বাদশাহর অনুমোদন ছাড়া জমিদার কর্তৃক প্রদেয় নিষ্কর ভূমি।
মহাত্রাণ: (Land given for a Religious purpose) ধর্মকার্য সমাধানার্থে প্রদত্ত নিষ্কর ভূমি।
রেহান: ভূমি দায়বদ্ধক্রমে যে টাকা কর্জ আনা হয় তাকে রেহান বলে।
ল্যান্ডলর্ড: (Land Loard) নন-এগ্রিকালচারাল টেন্যান্সী অ্যাক্ট (১৯৪৯) এর ২ ধারার (৩) অনুচ্ছেদে ল্যান্ডলর্ড এর অর্থ হল, এমন কোনো ব্যক্তি, যার অধীনে কোনো অকৃষি প্রজা (টেন্যান্ট) রয়েছেন।
পেটি জরীপ: ক্ষুদ্র জরীপ। দেশব্যাপী বড় আকারের জরীপ ছাড়াও কোনো সমস্যার দরুন যেমন, মামলা-মোকাদ্দমা সংক্রান্ত ঝামেলা এড়াতে বা নদী ভাঙ্গনের পর নতুন চর সৃষ্টি হলে, ঐ নির্দিষ্ট এলাকার জন্য যে জরীপ করা হয়, তাকে পেটি জরীপ এবং তার নকশাকে পেটি নকশা বলা হয়। এ জরীপ খুব একটা নির্ভরযোগ্য হয় না।
দিয়ারা জরীপ: দিয়ারা শব্দটি দরিয়া থেকে। দরিয়া বা নদী পার্শ্ববর্তী চর এলাকার জরীপকে দিয়ারা জরীপ বলে। দিয়ারা জরীপ কোনো তালুকে হলে তাকে দিয়ারা তালুক বলে।
তালুকদার: জমিদারী প্রথায় ঝারঝোপ পরিষ্কারের মাধ্যমে যে সম্পত্তি আবাদ করা হত, তাকে তালুক আর তালুকের মালিককে বলা হত তালুকদার। আবাদ করার পর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত তালুক জমির খাজনা দিতে হত না।
পরিত্যক্ত সম্পত্তি: ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ চলাকালীন যারা পাকিস্তানের পক্ষে ছিল, যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তাদের অনেকেই স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি ফেলে রেখে অন্যত্র চলে যায় বা কোথাও আত্মগোপন করে। সরকার এ সকল সম্পত্তিকে এবাগুন প্রপার্টি বা পরিত্যক্ত সম্পত্তি ঘোষণা করেন।
অর্পিত সম্পত্তি বা শত্রু সম্পত্তি: পরিত্যক্ত সম্পত্তির মতোই ১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ চলাকালে যারা সম্পত্তি রেখে এদেশ থেকে পালিয়ে ভারত চলে যায়, তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাদের সম্পত্তিকে শত্রু সম্পত্তি বা এনিমি প্রপার্টি ঘোষণা করে। যার অপর নাম দেওয়া হয় অর্পিত সম্পত্তি বা ভেসটেড প্রপার্টি। এসব সরকারি মালিকানা সম্পত্তি যা ১ নম্বর খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে কিছু সম্পত্তি জনগণের মালিকানায় দেওয়া হয়। তাই সরকারি মালিকানা অর্পিত সম্পত্তিকে, 'ক' তফসীলভুক্ত এবং জনমালিকানা অর্পিত সম্পত্তিকে 'খ' তফসীলভুক্ত করা হয়।
খাসজমি: সরকারি মালিকানাধীন জমিকে খাস জমি বলা হয়। আর খাস জমি সাধারণত ১ নং খতিয়ানে রেকর্ড করা হয়।
জায়গির: সম্রাটদের কর্তৃক সেনাবাহনী/উচ্চপদস্ত সরকারি কর্মকর্তাগণের বেতনের পরিবর্তে প্রদত্ত বাদশাহী লাখেরাজ অনুদানকে জায়গির বলা হত সম্রাট বা বাদশাহর প্রয়োজনে লাগানো সৈন্যদেরকে জায়গিরদার হিসেবে রাখা হত।
নাজারত: মসজিদ পরিচালনার ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রদত্ত বাদশাহী লাখেরাজ/নিষ্কর ভূমি।
চর্চা জরীপ: চরের জরীপ
এওয়াজ: পরস্পরের মধ্যে সমপরিমাণ বা সমমূল্যের জিনিস বা ভূমির অদল বদল করাকে এওয়াজ বলে।
পাট্টা দলিল/কবুলিয়াত: জমিদারগণ তাদের ভূমি বিক্রয়ের অধিকারী ছিলেন। জমিদারগণ যে দলিলের মাধ্যমে এরূপ সম্পত্তি হস্তান্তর করতেন তাকে কবুলিয়াত বলে। এগুলো অরেজিস্ট্রী হয়ে থাকে।
পর্তাল: অর্থাৎ যাচাই করা। কোনো নকশার মান যাচাই করা বা কোনো আমিনের জরীপকৃত জায়গা সীট তার ঊর্ধ্বতন আমিন কর্তৃক যাচাই করাকে পর্তাল বলে।
চেরাগী: চেরাগ অর্থ বাতি। মসজিদ বা মাজারে রীতিমতো বাতি জ্বালানোর জন্য কাউকে প্রদত্ত নিষ্কর ভূমি।
রায়ত: দখলি স্বত্ববিশিষ্ট প্রজা। জমিদারদের অধীনস্ত চাষিদের দখলের ভিত্তিতে রায়ত বলা হত।
কোর্ফা রায়ত/কোল-রায়ত: ভিটাবাড়ি সম্পর্কে কোনো রায়তি জোতদার হতে বার্ষিক খাজনার বিনিময়ে বন্দোবস্ত নিলে তাকে কোর্ফা রায়ত বা কোল-রায়ত বলে।
দর রায়ত: নাল জমি কোনো রায়তি জোতদার হতে বার্ষিক খাজনার বিনিময়ে বন্দোবস্ত নিলে তাকে দর রায়ত বলে।
কিসমত: সাধারণত মৌজার অংশকে কিসমত বলে।
খানাপুরী: প্রাথমিক স্বত্বলিপি। এটি রেকর্ড-অব-রাইট তৈরীর প্রথম ধাপ। খসড়া ও খতিয়ানের কলম বা ঘর পূরণ করাই এর কাজ।
খাইখন্দক: ডোবাগর্ত, খাল, নালা ইত্যাদি চাষের অযোগ্য ভূমিকে খাইখন্দক বলে।
গর বন্দোবস্তি: যে জমির কোনো বন্দোবস্ত দেয়া হয়নি।
চাকরান: জমিদার বাড়ির কাজকর্ম নির্বাহ করণার্থে প্রজাকে ভোগদখল করার জন্য যে জমি দেয়া হয়, তাকে চাকরান বলে।
চটান: বাড়ি সন্নিকটস্থ উচ্চ পতিত স্থানকে চটান বলে।
চৌহদ্দি: সীমানা (Boundery)।
জবর দখল (Adverse Possession): জোরপূর্বক দখল
জমা (Jote): এক বা একাধিক ভূমির জন্য একত্রে যে খাজনা দেয়া হয় তাকে এক একটি জমা বা জোত বলে।
জমাবন্দ (Rent Roll): খাজনার তালিকা।
জোত (A from of tenancy): এক প্রকার প্রজাস্বত্ব।
জজিরা: নাব্য নদীতে যে দ্বীপ উঠে তাকে জজিরা বলে।
ট্রেক: নদী ভগ্নস্থান ভরাট হয়ে যে পয়স্তি উৎপন্ন হয়, তাকে ট্রেক বলে।
তসদিক (Attestation, official testimoney): প্রমাণ।
তামাদি (Limitation): খাজনা আদায় করার নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম হলে তাকে তামাদি বলে।
তহশিল (Collection): খাজনাদি আদায়ের নিমিত্ত নির্দিষ্ট এলাকাকে তহশিল বলে।
তালবানা (process fee): সমন জরির সময় পিয়নকে প্রদত্ত ফিস।
তলববাকি: বকেয়া খাজনা আদায়ের কিস্তি।
দশসালা বন্দোবস্ত (Decennial settlement): দশ বছরের মেয়াদে বন্দোবস্ত দেয়াকে দশসালা বন্দোবস্ত বলে।
ডহর/দাহর (Path): পথ।
গং: দিগর বা গয়রহ অর্থাৎ অন্য সকল (others)
জং: (জওজিয়াত) স্বামী।
আং: (আহলিয়ে) স্বামী।
দোং: (দোপ্তর) পিতা।
পিং: পিতা।
সাং: (সাকিন) গ্রাম।
মং: (মবলগে) মোট।
মোয়াজি: মোট ভূমির পরিমাণ।
দরবস্ত (Entire): সমুদয়।
মালংচর (Sand bank): বালুচর।
দেগিচর: যে সকল বালুচর সাধারণ জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় তাকে দেগিচর বলে।
দাখিলা (Rent receipt): খাজনা রসিদ।
নকশা (Maps plan): ম্যাপ/নকশা বলতে অঞ্চল দ্রাঘিমা নির্ণয় করে ভূমির অবিকল প্রতিচ্ছবিকে বুঝায়।
নথি (Record): রেকর্ড। নকশা ও খতিয়ান মিলে নথি/রেকর্ড হয়।
নজর: সেলামি।
পত্তন: সাময়িক বন্দোবস্ত।
পত্তনি: যা পত্তন বা সমায়িক বস্তোবস্ত দেওয়া হয়েছে।
বাঁটওয়ারা (Partition): বণ্টন।
বন্দোবস্ত: পত্তন।
বায়না নামা: (contract for sale) বিক্রয় চুক্তি।
হিস্যা (share): অংশ, শেয়ার।
মাল: সম্রাট আকবরের সময় নির্ধারিত খাজনা এবং সেস যোগ করে যে মোট রাজস্ব আদায় করা হত, তাকে মাল বলা হত।
নোয়াবাদ: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর যে সমস্ত জমি আবাদ করা হত, তাকে নোয়াবাদ বলা হত। এই নতুন আবাদকৃত ভূমি জমিদারদের ইজার দিয়ে নোয়াবাদ জোত সৃষ্টি করা হত।
হাওলাদার: ইংরেজরা রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবন এলাকাকে ২০০ হতে ৫০০ বিঘা আকারে ভাগ করে ২৫ বছরের জন্য ইজারা দিত। সেই ইজারামূলে স্বত্বাধিকারীকে হাওলাদার বলা হত।
প্রজা/টেন্যান্ট (Tenant): টেন্যান্ট বা প্রজার অর্থ হল কোনো ব্যক্তি যিনি সরকার কিংবা অন্যজনের অধীনে ভূমি দখল করেন (অধীনস্ত ভূমি দখলকার) অথবা বিশেষ চুক্তি ব্যতীত ঐ ভূমির জন্য এই ব্যক্তির পক্ষ হতে (উপরস্ত ব্যক্তি) খাজনা প্রদানের জন্য দায়ী থাকেন।
কালেক্টর: কালেক্টর এর অর্থ হল কোনো জেলার কালেক্টর এবং ডেপুটি কমিশনার (জেলা প্রশাসক) এবং এই আইন অনুসারে কালেক্টরের সমুদয় বা যে কোনো দায়িত্ব পালন করার জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত এরূপ অন্যান্য কর্মকর্তাগণও অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
রেভিনিউ অফিসার: ১৯৫০ সনের জমিদারী উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ২ ধারা (২৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রেভেনিউ অফিসার এর অর্থ হল, যাকে গভর্নমেন্ট এই অ্যাক্ট অথবা এর আওতাধীনে প্রণীত কোনো বিধিসমূহ অনুসারে রেভেনিউ অফিসারের সমুদয় বা যে কোনো দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য নিয়োগ করেন।
চাকরান: জমিদারদের সেবক যেমন- পাইক, পেয়াদা, নাপিত, ধোপা, বেহারা, পাচক ইত্যাদি চাকর শ্রেণির কাজের লোকদের মজুরির পরিবর্তে যে নিষ্কর জমি ভোগ করতে দেয়া হত।
নানকর: সিলেট ও আসাম অঞ্চলে জমিদারগণ চাকর শ্রেণির লোকদের কাজের মজুরির পরিবর্তে যে নিষ্কর জমি দান করতেন তাকে নানকর বলা হত।
বেঞ্চ মার্ক (Bench mark): যে নির্দিষ্ট স্বারক বিন্দুর এলিভেশন জানা আছে তাকে বেঞ্চ মার্ক, সংক্ষেপে বি.এম বলে।
আবওয়াব: আবওয়াব অর্থ নির্ধারিত খাজনার অতিরিক্ত কর (সেস)। সরকার ভূমির মূল খাজনা বৃদ্ধি করার পরিবর্তে নির্ধারিত খাজনার উপর নির্দিষ্ট হারে যে অতিরিক্ত সেস আদায় করার অনুমতি দিতেন তাকে আবওয়াব বলা হত।
ঢোল সহরত: (proclamation by beating drum) কোনো ক্রোক, নিলাম, ইস্তেহার বা দখলী পরওয়ানা সরেজমিনে ঢোল পিটাইয়া জারি করাকে ঢোল শহরত বলে।