সরলপ্রাণ মানুষ যখন কোন বাতিল ও মিথ্যার বাহ্যিক চাকচিক্যপূর্ণ আয়োজনের গোলকধাঁধার আবর্তে সঠিক দিশা খুজে বের করতে হিমশিম খায়, তখন সচেতন সত্যপন্থীদের উপর ওয়াজিব (অপরিহার্য) হয়ে যায় বাতিলের পরিচয় তুলে ধরে সরলপথের দিকে মানুষকে আহবান করা। অন্যথায় একদিকে হাদীসে পাকের নূরানী ভাষায় সত্য বলার ক্ষেত্রে নীরবতা অবলম্বনকারী বোবা শয়তান এর অশুভ পরিণতির উপযোগী হতে হয়, অন্যদিকে যাদের উদ্দেশ্যে ওই সত্যপথ দেখানো হয় তাদেরও ঈমানী দায়িত্ব হয়ে যায় নিজেদের খোদাপ্রদত্ত বিবেক বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে ওই সত্য পথের আহবানে সাড়া দেওয়া।
ঢাকার টঙ্গীতে তাবলীগ জামাত তাদের ইজতেমা (সমাবেশ) এর আয়োজন করে আসছে প্রাথমিক পর্যায়ে সেটা ওই জামাত ও ওই মতবাদীদের মহা সমাবেশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হত। পরবর্তীতে ইসলামী শব্দের ব্যাবহার ও আখেরী মুনাজাত এর আয়োজনের ফলে দেশের অন্যান্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণও তাতে শরীক হতে থাকে। (যদিও ওই জামাতের অন্যতম মুরব্বী চট্রগ্রামের মুফতী ফয়যুল্লাহ সাহেব জামাতবন্ধী হয়ে হাত তুলে মুনাজাত করার ঘোর বিরোধী। তিনি সেটা বিদআত ও নিসিদ্ধ বলে ফতোয়া দেন)। বিদেশ থেকেও কিছু লোক ওই ইজতিমায় শরীক হয় বলে প্রচার করা হয়। বস্তুতঃ ওই মেহমানরা হয়তো একই মতবাদের প্রচারক নতুবা ওই জামাতের প্রচারকদের দ্বারা প্রভাবিত ও আমন্ত্রিত। ব্যাপক প্রচারণা ও ব্যবস্থাপনার কারণে ওই ইজতিমা ক্রমশঃ বাড়তে থাকে। এ সুবাদে তারা সেটাকে এক পর্যায়ে হজ্বের সাথে তুলনা করতে লাগল এবং হজ্বের পর মুসলমানদের বৃহত্তম জমায়েত ইত্যাদি বিশেষণ দিয়ে ব্যাপকতর প্রচারে লিপ্ত হল কিন্তু তা সচেতন মুসলমানদের দৃষ্টি ও শ্রবনকে বিদ্ধ করল। তারা এবং দেশের বিবিন্ন প্রচারমাধ্যমে এ ধরনের অমূলক তুলনার সম্যলোচনা করল। ফলে ২০০৬ সাল থেকে তুলনামুলক বিশেষণ বাদ দিয়ে সেটাকে বলা হয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বৃহত্তম সমাবেশ ও মানবতার মহামিলন ইত্যাদি।এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে দেশের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মহামান্য প্রধানগন আপন আপন ক্ষমতায় থাকাকালে তাবলীগ জামাতের আবেদনের ভিত্তিতে টঙ্গীর বিরাট , ভু-খন্ড তাদেরকে প্রদান করেছেন আর উভয় দলই ইসলামের জন্য তাদের অবদানের তালিকায় এদের প্রতি প্রদর্শিত বিরাট বদান্যতাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে থাকে। ক্রমশঃ প্রাত্যেক ক্ষমতাসীন সরকারের আন্তরিকতা আরো ব্যাপক হতে থাকে তাছাড়া বিটিবি এবং দেশের কিছু পত্র পত্রিকা ইত্যাদির প্রচারণা, সরকারের বিশেষ ব্যবস্তাপনা, মহামান্য রাষ্টপ্রদান ও মাননীয় সরকার প্রধান, সম্মানিত বিরোধী দলীয় প্রদান ও রাজীনৈতিক নেতৃবৃন্দের ওই মুনাজত এ শরীক হওয়া ইত্যাদি কারণে টঙ্গীর জমায়েতের পরিসর ক্রমশঃ বিগত বছরগুলোকেও ছড়িয়ে যাচ্ছে। অবশ্য, এ সম্পর্কে দেশের প্রচার মাধ্যমগুলোর বদান্যতায় অনেকে বিস্তারিতভাবে চেনেছেন সব মিলিয়ে এখন সেটা তাদের ভাষায় বিশ্ব ইজতিমা।
উল্লেখ্য, প্রায়শঃ তাবলীগ জামাতের জন্মস্তান ভারত থেকে আগত দিল্লীর কেন্দ্রীয় তাবলীগ জামাতের সদস্য ও শীর্ষ মুরব্বী মুনাজাত পরিচালনা করেন অংশগ্রহণকারীরাও একযোগে আ-মীন বলেন। অনেকে কান্নাকাটিও করেন বৈ-কি। এখানে আমার বক্তব্য হচ্ছে- একদিকে সরকার তো তার দায়িত্ব পালন করেছে আর সরলপ্রাণ মুসলমানরাও অন্তত এক বড় জমায়েতে মুনাজাত করাকে একটি বিরাট ধর্মীয় কাজ মনে করছেন, অন্যদিকে এটা অত্যান্ত দুঃখের সাতে আশঙ্কাও করা যাচ্ছে যে তাবলীগ জামাতের চতুর্থা ও দেশের মুসলমানদের সরলতা, সর্বপরি সচেতন সুন্নী মুসলমানদের নীরবতা ওই তাবলীগ জামাতের আসল পরিচয় ও উদ্দেশ্যকে এক গাঢ় আড়ালে দ্রুত ঢাকা দিতে যাচ্ছে কিনা। আর এ আড়ালের সুবাদে তারাও এ দেশকে সহসা ওহাবীরাষ্টে পরিণত করার সুযোগ নিতে যাচ্ছে কিনা তদুপরি, বর্তমানে দমিত ও গা-ঢাকা দেওয়া জঙ্গি খারেজী (জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদ ইত্যাদি) অদুর ভবিষ্যত এক পর্যায়ে গিয়ে আরো মারাত্মক আকার ধারণ করতে যাচ্ছে কিনা তাও ভেবে দেখার সময় এসেছে।
তাই আমি সচেতন সুন্নী ওলামা ও মুসলমানদের পক্ষ থেকে এ তাবলীগ জামাত ও তাদের মূল উাদ্দেশ্য এবং এ জামাতের এ পর্যন্ত কর্মকান্ডের ফলাফল সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করার চেষ্টা করব যাতে ইজতিমার বিশালতা ও মুনাজাত এর আড়ম্বরতায় মুগ্ধ হয়ে এদেশের মুসলমানগন তাদের আসল পরিচয় ভুলে না বসেন। আমি আমার ঈমানী দায়িত্ব টুকু পালন করতে চাই সেটার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া বা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন যারা তাদেরকে নির্বিচারে ইসলামী জামাত মনে করেন বিশেষভাবে তারা এবং সাধারণভাবে অন্যরা।
তাবলীগ জামাতের গোড়ার কথা।
এ কথা সুস্পষ্ট যে ভারতের সাইয়্যিদ আহমদ ব্রেলভী ও মৌলভী ইসমাঈল দেহলবী সৌদিয়া থেকে এ উপমহাদেশে ওহাবী মতবাদ সর্বপ্রথম আমদানি করার পর ভারতে নাদওয়াতুল ওলামা ও দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা ইত্যাদি ওহাবী মতবাদের গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ দেওবন্দ মাদরাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হলেন- মৌং মুহাম্মদ কাসেম নানুতবী। আর মৌং আশরাফ আলী থানভী মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী এবং মৌং খলীল আহমদ আন্বেটবী প্রমুখ ছিলেন এ উপমহাদেশে ওই মতবাদ প্রচারের পুরোধা। এ মৌং আশরাফ আলী থানভী সাহেবের অন্যতম প্রধান শীষ্য ছিলেন মৌং ইলিয়াস সাহেব এ মতবাদ প্রচারের জন্যই তাবলীগ জামাত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ জামাত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন যে, তাবলীগ জামাতের কর্মপদ্ধিতি হবে তার নিজের উদ্ভাবিত কিন্তু প্রচারের বিষয়বস্তু ও শিক্ষা হবে তার পরম শ্রদ্ধেয় ওস্তাদ মৌং আশরাফ আলী থানভীর।
[তাবলীগী জামাআত খত্বরনাক কৃত মাওলানা এরশাদ আল কাদেরী ভারত]
এখন দেখুন মৌং আশরাফ আলী থানবী সাহেবের শিক্ষা কি? তার আক্কিদা ও শিক্ষা হচ্ছে অবিকল সমস্ত দেওবন্দী আলিমদের আক্বীদা ও শিক্ষা। আর এ আক্বীদা ও শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের একমাত্র উদ্দেশ্যেই মৌং ইলয়াস সাহেব কায়েম করেছেন তাবলীগের ছয় উসূল। গোটা তাবলীগ জামাতই এ ছয় উসূল প্রতিষ্ঠা করে বেড়ায়। টঙ্গীর তথাকথিত বিশ্ব ইজতিমায় ছয় উসূল ও তাদের বাস্তবায়ন নিয়ে চিল্লাবদ্ধ মুসল্লীদের উদ্দেশে হিদায়াতী (নিদ্যেশনামূলক) বয়ান দেওয়া হয়।
[দৈনিক পূর্বকোণ, ২৯ জানুয়ারী ২০০৬ সংখ্যা ইত্যাদি।
উল্লেখ্য ওই ছয় উসূলের ইসলামের পঞ্চবুনিয়াদ থেকে নেয়া হয়েছে মাত্র দুটি। যথা- ১. কালেমা ও ২. নাময। আর বাকী ৪ টা হচ্ছে ৩.ইকরামুল মুসলিমীন,৪. তাসীহ-ই নিয়্যাত (উদ্দেশ্য ঠিক করা)।
আর মৌং আশরাফ আলী থানেভীসহ দেওবন্দী দের আক্বীদা ও শিক্ষা হচ্ছে-
১. আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন।
[ফতোয়া-ই- রশীদিয়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৯, কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী]
২. আল্লাহ আগে জানেন না বান্দা কি কাজ করবে। বান্দা যখন কাজ সম্প্ন করে নেয় তখনই আল্লাহ তা জানতে পারেন।
[তাপসীর-ই- বুলগাতুল হায়রান পৃষ্ঠা ১৫৭-৫৮, কৃত মৌং হুসাইন আলী দেওবন্দী]
৩. শয়তান ও মালাকুল মাওত এর জ্ঞান হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার চেয়ে বেশি।
[বারাহীন-ই ক্বাতিআহ পৃষ্ঠা- ৫১ কৃত খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]
৪. আল্লাহর নবীর নিকট নিজের পরিণতি এবং দেয়ালের পিছনের জ্ঞানও নেই।
[বারাহীন-ই ক্বাতি আহ পৃষ্টা ৫১, কৃত খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]
৫. নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তায়ালা তেমনি জ্ঞান দান করেছেন যেমন জ্ঞান জানোয়ার পাগর এবং শিশুদের নিকট রয়েছে।
[হিফজুল ঈমান পৃষ্ঠা-৭ কৃত মৌং আশরাফ আলী থানভী দেওবন্দী]
৬. নামাযে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার প্রতি শুধু খেয়াল যাওয়া গরু গাধার খেয়ালে ডুবে যাওয়া অপেক্ষাও মন্দতর।
[সিরাতে মু্স্তাকিম পৃষ্ঠা-৮৬ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
৭. রাহমাতুল্লীল আলামীন (সমস্ত বিশ্বের জন্য রহমত) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার খাস উপাধি নয় নবীজী ছাড়া অন্যন্য বুযুর্গকেও রাহমাতুল্লিল আলামীন বলা যেতে পারে।
[ফতোয়া-ই রশীদিয়া ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা-১২ কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী]
৮. খাতামুন্নাবিয়্যিন অর্থ আখেরী বা শেষনবী বুঝে নেওয়া সাধারন লোকদের খেয়াল মাত্র জ্ঞানী লোদের মতে এ অর্থ বিশুদ্ধ নয়। হুযুর আকরামের যুগের পরও যদি কোন নবী পয়দা হয় তবে হযররত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার শেষ নবী হওয়ার কোন ক্ষতি হবে না।
[তাহযীরুন্নাছ পৃষ্ঠা-৩ ও ২৫৪ কৃত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মৌং কাসেম নানুতবী]
৯. নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেওবন্দের আলেমদের সাথে সম্পর্কের সুবাদে উর্দু শিখতে পেরেছেন।
[বারাহীন-ই ক্বাতিয়াহ, পৃষ্ঠা ২৬ কৃত মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]
১০. নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার সম্মান শুধু বড় ভাইয়ের মতই করা চাই।
[তাক্বভিয়াতুর ঈমান পৃষ্ঠা-৫৮ কৃত মৌং ঈসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
১১. আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমকক্ষ কোটি কোটি পয়দা করতে পারেন।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা ১৬ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
১২. নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মরে মাটিতে মিশে গেছেন।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা-৫৯ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
১৩. নবী প্রতিটি মিথ্যা থেকে পবিত্র ও মাসুম হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।
[তাক্বভিয়াতুল আকাঈদ পৃষ্ঠা ২৫ কৃত মৌং কাসেম নানুতবী]
১৪.নবী রাসূল সবাই অকেজো।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা-৬২৯ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী]
১৫. নবীর প্রশংসা শুধু মানুষের মতই কারো বরং তা অপেক্ষাও সংক্ষিপ্ত কর।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা ৬১ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
১৬. বড় মাখলুক অর্থাৎ নবী আর ছোট মাখলুক অর্থাৎ অন্যসব বান্দা আল্লাহর শান বা মর্যাদার সামনে চামার অপেক্ষাও নিকৃষ্ট।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা ১৪ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলবী ওহাবী]
১৭. বড় অর্থাৎ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর ছোট অর্থাৎ অন্যসব বান্দা বেখবর ও অজ্ঞ।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা-৩ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
১৮. নবীকে তাগুত (শয়াতান বলা জায়েয।
[তাফসীর-ই বুলগাতুল হায়রান পৃষ্ঠা-৪৩ কৃত মৌং হুসাইন আলী ওয়াভচরান ওয়ালা]
১৯. নবীর মর্যাদা উম্মতের মধ্যে গ্রামের চৌধুরী ও জমিদারের মত।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা-৬১ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
২০. যার নাম মুহাম্মাদ কিংবা আলী তিনি কোন কিছুই করতে পারেন না।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা-৪১ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
২১. উম্মত বাহ্যিকভাবে আমলের মধ্যে নবী থেকেও বেড়ে যায়।
[তাহযীরুন্নাছ পৃষ্ঠা-৫ কৃত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মৌং কাসেম নানুতভী]
২২. দেওবন্দী মোল্লা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পুলসেরাত হতে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন।
[তাফসীর-ই বুলগাতুল হায়রান পৃষ্ঠা-৪৩ কৃত মৌং হুসাইন আলী ওয়াভচরান ওয়ালা]
২৩. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আশরাফ আলী রাসুলুল্লাহ আর আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সায়্যিদিনা ওয়া নবীয়্যিনা আশরাফ আলী বলার মধ্যে সান্ত্বনা রয়েছে কোন ক্ষতি নেই।
[রিসালা-ই ইমদাদ পৃষ্ঠা-৩৫ সফর-১৩৩৬ হিজরি সংখ্যা]
২৪. মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করা তেমনি যেমন হিন্দুরা তাদের কানাইয়্যার জন্মদিন পালন করে।
[বারাহীন-ই ক্বাতিয়াহ পৃষ্ঠা-১৪৮ কৃত মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]
২৫. আল্লাহর সামনে সমস্ত নবী ও ওলী একটা নাপাক ফোটা অপেক্ষাও নগণ্য।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা-৫৬ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
২৬. নবীকে নিজের ভাই বলা দুরস্ত।
[বারাহীন-ই ক্বাতিয়াহ পৃষ্ঠা-৫৬ কৃত মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী দেওবন্দী]
২৭. নবী ও ওলীকে আল্লাহর সৃষ্টি ও বান্দা জেনেও উকিল এবং সুপারিশকারী মনে করে এমন মুসলমান সাহায্যের জন্য আহবানকারী ও নযর নিয়াযকারী মুসলমান আর কাফির আবু জাহল শির্কের মধ্যে সমান ।
[তাক্বভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা-৭-২৭ কৃত মৌং ইসমাঈল দেহলভী ওহাবী]
২৮. দরূদ ই তাজ অপছন্দনীয় এবং পাঠ করা নিষেধ।
ফযাইলে দরূদ শরীফ পৃষ্ঠা-৯২ ফাযাইলে আমল তথা তাবলীগী নেসাব থেকে পৃথক্বৃত]
২৯. মীলাদ শরীফ মিরাজ শরীফ ওরস শরীফ খতম শরীফ চেহলামে ফাতিহাখানি এবং ঈসালে সাওয়াব সবই নাজায়েয ভুল প্রথা বিদআত এবং কাফির ও হিন্দুদের প্রথা।
[ফতোয়া-ই রশীদিয়া ৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা-৯৩-৯৪, কৃত মৌং রশদি আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী]
৩০. প্রসিদ্ধ কাক খাওয়া সাওয়াব।
[ফতোয়া-ই রশীদিয়া ৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা-১৩০ কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী]
৩১. হিন্দুদের হোলী দেওয়ালীর প্রসাদ ইত্যাদি জায়েয।
[ফতোয়া-ই রশীদিয়া ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা-১৩২ কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী]
৩২. ভাঙ্গী চামারের ঘরের রুটি ইত্যাদির মধ্যে কোন দোষ নেই যদি পাক হয়।
[ফাতোয়া-ই রশীদিয়া ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা ১৩০ কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী]
৩৩. হিন্দুদের সুদী টাকায় উপার্জিত অর্থে কূপ বা নফকূপের পানি পান করা জায়েয।
[ফতোয়া-ই রশীদিয়া ৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা ১১৩-১১৪ কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী]
নাঊযুবিল্লাহ সুম্মা নাউযু বিল্লাহ মিনহা।
এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে তাবলীগ জামাতের আক্বীদা ও আমল দেওন্দী ওহাবীদের আক্বীদা ও আমলের সাথে মোটেই বিরোধপূর্ণ নয় বরং এক ও অভিন্ন।
এসব আক্বিদা ও আমলকে তাবলীগ জামাত তা ছয় উসূলের মাধ্যমে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য তৎপর। টঙ্গীর ইজতিমার প্রধান লক্ষ্যও এটাকে আরো ব্যাপক করা।
২০০৬ সালের তাবলীগী ইজতিমার খবরে প্রকাশ ইজতিমা প্যান্ডেলের উত্তর দিকে স্থাপিত তাশকীলের কামরায় নতুন করে বিভিন্ন মেয়াদের চিল্লায় তালিকাভুক্ত মুসল্লীদের স্থান দেওয়া হয়েছে। তালিকাভুক্ত জামাতীদের বিভিন্ন খেত্তা থেকে তাশকীলের কামরায় আনা হয় এবং জামাতবন্দী করা হয়। তালিকাভুক্ত হয়েছেন (২য় দিনে) প্রায় ছয় হাজার। চুড়ান্তভাবে এলাকা ভাগ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব মুসল্লীকে কাকরাইল মসজিদ থেকে জামাতবন্দী করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে পাঠানো হবে।
[দৈনিক পূর্বকোন,-২৯ জানুয়ারী ২০০৬]
সুতরাং তাবলীগ ও তাদের ইজতিমা সম্পর্কে নিম্বলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি মনযোগ দেওয়া জরুরি মনে করি-
প্রথমতঃ যে কোন আমল ক্ববুল হবার পূর্বশর্ত হচ্ছে বিশুদ্ধ আক্বীদা। আর এ বিশুদ্ধ আক্বীদা হচ্ছে একমাত্র আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এর আক্বাইদ। ভ্রান্ত আক্বাইদ পোষণ করলে কোন আমলই আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হয় না।
দ্বিতীয়তঃ ইসলামের একমাত্র সঠিক রূপরেখা হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়েতের সম্পূর্ণ বিপরীত। বস্তুতঃ তাদের আক্বীদা ও আমল ওই খারেজী মতবাদেরই অনুরূপ, যারা পবিত্র হাদিসের ভাষায় ইসলামী নামের ভ্রান্ত ৭২ বহাত্তর দলের মধ্যে সর্বপ্রথম দল। [সিহাহ ও শরহে মাওয়াক্বিফ ইত্যাদি]
তৃতীয়তঃ ওহাবী তাবলীগপন্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ সরকারের অধীনে পরিচালিত বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড এর পাঠ্যক্রম অনুসরণ করেনা তারা অনুসরণ করে ভারতের দেওবন্দ মাদরাসার পাঠ্যাক্রম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতি।[দৈনিক ইনকিলাব এ প্রকাশিত ক্রোড়পত্র]
উল্লেখ্য আহলে হাদীসের ড. গালিব শায়খ আবদুর রহমান সিদ্দীকুর রহমান বাংলাভাই প্রমুখ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত তাদের সংগঠনগুলোর সদস্যরা হয়তো এসব খারেজী মাদরাসায় শিক্ষাপ্রাপ্ত নতুবা তাবলীগপন্থী। (বিটিভিতে প্রচারিত অনুতাপ কারীদের কেউ কেউ স্বীকারও করেছে যে তারা তাবলীগপন্থী)।
তাছাড়া আহলে হাদীস সম্প্রদায়টি মূলতঃ ওহাবীদের একটি অংশ। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে আহলে হাদীসের লোকেরা মাযহাব মানেনা। অন্যান্য আক্বীদা ও আমল প্রায় এক ও অভিন্ন। সুতরাং তাবলীগ জামাতের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে প্রকারান্তরে ওই সব ধর্মের নামে বিশৃঙ্খলাবাদীদের ক্ষমতাবৃদ্ধির আশঙ্কাও উড়িয়ে দেবার মত নয়।
চতুর্থতঃ এদেশে সুন্নী মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ ওহাবীরা নয়। কিন্তু এসব ওহাবী ক্বওমী তাবলীগীরা সংখ্যালুঘু সুরভ ঐক্য বাহ্যিক বেশ ভূয়া জামাতবন্দিতা ও সুচতুরতা সর্বোপরি একই মতবাদী বিদেশীদের পৃষ্ঠপোষকতা (যেমন- বর্তমান সৌদিয়া প্রভাবিত আরবীয়রা) এবং অব্যাহত কর্মতৎপরতার মাধ্যমে তাদের অবস্থানকে উল্লেখযোগ্য পর্যায়ের বলে প্রদর্শণ করে আসছে। এরই পরম্পারায় এরা প্রাগ একাত্তরকালীন সময়ে পাকিস্তানী হানাদারদের ছত্রছায়ায় কোন ভুমিকায় ছিল তা হয়তো দেশবাসী বিভিন্ন কারণে ভুলে যাচ্ছে বিগত জোট সরকারের সাথে অংশীদারিত্বের সুবাদে তারাই সুন্নী মুসলমানদের উপর নানাভাবে আঘাত হানতে আরম্ভ করেছিল বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। হযরত শাহ জালাল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মাযারে ওরসে মুনাজাত চলাকালে বোমা মেরে যা ইরীন হত্যা ওই মাযার এবং চট্রগ্রামের হযরত বায়েজীদ বোস্তমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মাযারের পুকুরে বিষ প্রায়োজ করে মাছ ইত্যাদি হত্যা করা এরই প্রকৃষ্ঠ দৃষ্টান্ত বৈ-কি। (তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পানা সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি।
পঞ্চমতঃ তাবলীগী ইজতিমার এ কয়েক বছরের জমায়েতকে তারা মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইসলামী জমায়েত বলে চমক লাগাতে চাচ্ছে অথচ পাকিস্তানের মুলতানে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত সুন্নী তাবলীগ দাওয়াহ-ই ইসলামীর জমায়েত এটার চেয়ে বড় বলে জানা গেছে। সে দেশের কোন কোন পত্রিকা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষায় প্রতি বছর সেখানে প্রায় ৪৫ লক্ষাধিক মুসলমানের জমায়েত হয় বলে জানা যায় যদিও পাকিস্তানে সরকার কিংবা খোদ দাওয়াত-ই ইসলামীর (সবুজ পাগড়িধারী সুন্নী তাবলীগ জামায়াত) পক্ষ থেকে সেটার ব্যাপকভাবে প্রচারটুকুও করা হয় না।
ষষ্ঠতঃ বিশ্বের কয়েকটা দেশের নিছক ওহাবী তাবলীগীদের কিছু লোকের উপস্থিতির কারণে এ ইজতিমাকে বিশ্ব ইজতিমা হজ্বতুল্য জমায়েত ইত্যাদি বলার পক্ষে যুক্তি অগ্রহণযোগ্য। দেশ বিদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী খাটি সুন্নী নবী ওলীগণের প্রকৃত আশেক ভক্ত সুন্নী পীর মাশাইখ ও তাদের ভক্ত মুরীদান এবং মাযারভক্ত মুসলমানরা এ তাবলীগ জামাত এবং ওহাবী খারেজীদেরকে তাদের জঘন্য আক্বীদাও কর্মকাণ্ডের কারণে মোটেই পছন্দ করেন না বরং মানুষের ঈমান আক্বীদা এমনকি বিভিন্ন কারণে দেশ ও জাতির শান্তি সমৃদ্ধির পথে হুমকি মনে করেন তা সরেযমীনে তদন্ত বা জরীপ চলালে সুস্পষ্ঠভাবে বুঝা যাবে। তদুপরি একটি সুন্নী মতাদর্শ বিরোধী সম্পদায়ের কর্মকাণ্ডকে ক্রমশঃ দেশের জাতীয় কর্মসূচীতে পরিণত করার মত বদান্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদেরকে উৎসাহিত করার ফলে ক্ষমতাসীন সরকার দেশের বৃহত্তম সুন্নী জনগোষ্ঠীর বিগভাজন হচ্ছে কিনা তাও সরকারের ভেবে দেখা দরকার কারণ এ তাবলীগী ওহাবীদের উত্থানকে দেশের সুন্নী মুসলমানগণ এক অশুভ সঙ্কেত বলে মনে করেন এ সঙ্কেত কখনো বাস্তবরূপ ধারণ করলে তা কারো জন্য মঙ্গলময় হবে না বলা যায় বিভিন্ন যুক্তির ভিত্তিতে ওই টঙ্গীতে ইজতিমাস্থলকে সব মুসলমানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য কোন কোন মহল দাবী তুলেছেন বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গঃ উল্লেখ্য যে এভাবে তারা নিজেরদের পকৃত পরিচয় গোপন করতে গিয়ে একতরফাভাবে এমনি প্রচারণ চালিয়ে এসেছে যে এখন তাদের আসল পরিচয় তুলে ধরলে অনেকের নিকট অবিশ্বাস্য মনে হবে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে যে এমন জামাত ও জামাতের মুরব্বীদের এ ধরনের জঘন্য আক্বীদা থাকতে পারে উদাহরণস্বরূপ তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মৌং ইলয়াসের শিক্ষাগুরু ও অনুকরনীয় বুযুর্গ এবং উপমাহদেশে গাটা ওহাবী সম্প্রদায়ের নিকট বরণীয় ব্যাক্তি তাদের হাকীমুল উম্মত মৌং আশরাফ আলী থানভী সাহেবের কথা ধরুন। ওহাবীরা প্রচার করেছে তিনি বড় বুযুর্গ ব্যাক্তি ছিলেন। তার নামে রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন বহু কিতাব পত্রও তিনি লিখেছেন। কিন্তু যখনই বলা হবে যে তিনি তার লিখিত হিফযুল ঈমান এ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জ্ঞানকে জানোয়ার পাগল ও শিশুদের জ্ঞানের সাথে তুলনা করে কুফরী করেছেন তাকে আলা হযরত ইমাম শাহ আহমদ রেজা ব্রেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং হেরমাঈন শরীফাঈনের ৩৩ জন আলিম তার এবং আরো কয়েকজন দেওবন্দী আলিমের কুফর প্রমাণিত করে এ ফতোয়া জারী করা সত্ত্বেও তিনি তার কুফরী বাক্যকে প্রত্যাহার করে ঈমানের পথ অবলম্বন করেননি বরং তার মৃত্যুর পর দেওবন্দী ওহাবীরাও তার ভুল স্বীকার করেননি তখন হয়তো অনেকে আতকে ওঠবেন আর দেওবন্দী ভাবধারার ওহাবী তাবলীগীরা বলে বেড়াবেন সুন্নীরা তাদের মুরুব্বীকে কাফের বলছেন ইত্যাদি।
এখানে একটি কথা বিশেষভাবে রক্ষণীয় যে ওহাবী তাবলীগী দেওবন্দীরা তাদের মুরব্বীদের কুফরীকেও মেনে নিয়ে তাদের পক্ষে প্রচারণ চালানোর যতই বাহ্যিক চাকচিক্যপূর্ণ আয়োজন করুক না কেন উপমহাদেশের সুন্নী মুসলমানগণ তাদের মিষ্টি কথায় ভুলেনি ভুলবেও না বরং তাদের ও তাদের মুরব্বীদের কুফরী ও গোমরাহীপূর্ণ আক্বীদাগুলো প্রত্যাহার করে নিয়ে তাওবা পূর্বক আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতাদর্শ অবলম্বন না করা পর্যন্ত তাদের সাথে কোনরূপ আপোস করবেন না করতেও পারেন না। আর এ জন্য কোন বিবেকবান মানুষ সুন্নীদেরকে দায়ীও করবেন না। কারণ ধর্মে বিভ্রান্তি ছাড়ানোর জন্য ওই ওহাবী দেওবন্দীরাই দায়ী সুন্নীগণ এ ক্ষেত্রে তাদের ঈমানী দায়িত্ব পালন করেন মাত্র।
সপ্তমতঃ প্রসঙ্গতঃ সচেতন সুন্নী কর্ণধারবুন্দেন ঈমান দায়িত্ব পালন ও দেওবন্দী ওহাবীদের হটকারিতা প্রসঙ্গে আলোচনা করার প্রয়াস পেলাম। বারতে ওহাবী মতাবাদ প্রচারের প্রাথমিক পর্যায়ে মৌলভী ইসমাঈল দেলভী মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর বিতর্কিত পুস্তক কিতাবুত তাওহীদ এর ভাবানুবাদ তাক্বভিয়াতুল ঈমান প্রকাশ করে বিশেষতঃ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমকক্ষ থাকা সম্ভব বলে প্রচার করে খাতামুন্নাবিয়্যিন ইত্যাদি গুণাবলী দ্বারা গুণান্বিত আরো কেউ আত্মাপ্রকাশ করাও সম্ভব বলে ফেললো তখন আহরে সুন্নাতের ওলামা-ই কেরাম বিশেষ করে খাতেমুর হুকামা আল্লামা মুহাম্মদ ফযলে হক খায়রবাদী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাদের ওই ভুল ও ঈমানবিধ্বংসী দৃষ্টিভঙ্গির খণ্ডন করেছেন লিখিত ও মৌখিকভাবে। তবুও না ইসমাঈল দেহলভী তার কথা প্রত্যাহার করেছে,
তাছাড়া মীর্যা গোলাম আহমদ ক্বাদিয়ানী ভণ্ড নবূয়্যতের দাবিদার হয়ে মুরতাদ হল। মুসলমানরা একবাক্যে তাকে ধিক্কার দিল। এ দেশের সুন্নীদের সাথে ওহাবীরাও তাকে কাফির-মুরতাদ বলার ক্ষেত্রে সুর মিলানো তারা সেটাকে রাজনৈতিক ইস্যু করে ক্বাদিয়ানীদের অমুসলমান ষোষণা করার দাবিও করেছে। অথচ ইতোপূর্বে তাদেরই মুরব্বী দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মৌং কাসেম নানুতভী কোরআনী আয়াতের খাতাম শব্দের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আমাদের নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পরে কোন নবী আসলে নবীজির শেষনবী হবার মধ্যে অসুবিধা নেই বলে ফতোয়া দিয়ে ওই গোলাম আহমদ ক্বাদিয়ানীর জন্য পথ খুলে দিয়েছেন। দেওবন্দী মুফতী মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী আল্লাহর পক্ষে মিথ্যা বলা সম্ভব বলে ফতোয়া দেন। মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জ্ঞানকে পশু শিশু ও পাগলের জ্ঞানের সাথে তুলনা করেছেন। বস্তুতঃ এসব মন্তব্য যে যথাক্রমে আল্লাহ ও তার হাবীবের শানে জঘন্য বেআদবী হবার কারণে নিশ্চিত কুফর তা বিবেকবান মাত্রই বলতে পারে।
ইমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে মিল্লাহ শাহ ই বেরেলী ইমাম আহমদ রেযা খান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাদের ওই সব মুন্তব্য ও আক্বীদা গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছেন। শতাধিকবিষয়ের বিশারদ সহস্রাধিক গ্রন্থ পুস্তকের রচয়িতা অদ্বিতীয় ফিক্বহাশাস্ত্রবিদ আলা হযরতের দৃষ্টিতেও ওই সব মন্তব্য নিশ্চিত কুফর বলে সাব্যস্ত হলে তিনি প্রত্যেকের নিকট জবাব চিঠি লিখেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন তাদেরকে সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনরূপ জবাব কিংবা অনুশোচনা পত্যাহারের মনোভাব না পেয়ে বরং হঠকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ১৩২০ হিজরিতে আল মুতামাদ আল-মুন্তাক্বাদ প্রণয়ন করে মীর্যা ক্বাদিয়ানী মৌং কাসেম নানুতভী ,মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী , মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী এবং মৌং আশরাফ আলী থানভীর উপর ওই সব মন্তব্যের ভিত্তিতে কুপরের ফতোয়া আরোপ করলেন। (এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ প্রণীত হয় আল মুতামাদ আল মুস্তানাদ নামে)।
অষ্ঠমতঃ সর্বোপরি টঙ্গীর ইজতিমার সফর করে যাওয়া তাদের মুরব্বীদের ফতোয়া অনুযায়ীও হারাম এবং অবৈধ। কারণ, তাবলীগ জামাত-এর উৎসপুরুষ হলেন মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী। এ ইবনে আব্দুল ওহাবের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক গুরু হলেন ইবনে তাইমিয়্যাহ। দেওবন্দী আমিরগণও ইবনে তহাইমিয়্যার চিন্তাধারার সমর্থক। ইবনে তাইমিয়্যার মতে, তিন মসজিদ ব্যাতীত অন্য কোথাও এমনকি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বরকতময় যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সপর করা যাবে না। তারই অনুসরণে মৌং আব্দুর রহীম ওহাবী তার সুন্নাত ও বিদআত এর মধ্যে লিখেছেন নবী করিম এর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবেনা যেতে চাইলে মসজিদে নববীর যিয়ারত বা তাতে নামায পড়ার উদ্দেশ্যেই যেতে হবে। ওহাবীপন্থী যেমন- মি. মওদূদী ওহাবী প্রমুখ খাজা গরীবে নাওয়াজ ও হযরত সালার-ই মাসঊদের মাযারে যাওয়াকে জঘন্য পাপ বলে ফতোয়া দিয়েছে অথচ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওযা ই পাকের যিয়ারত সম্পর্কে হাদীস শরীফে বহু ফযীলত বর্ণিত হয়েছে পবিত্র ক্বোরআনে নবীজির দরবারে যাওয়ার মহা উপকার এরশাদ হচ্ছে। বিশ্বের ইমামগণ পর্যন্ত নবীপাক এবং ওলীগণের রওযা ও মাযার যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করেছেন। কিন্তু টঙ্গীর উদ্দেশ্যে সফর করার তাতে হাজ্বীদের মত অবস্থান করার এবং তাদের চিল্লাগুলোয় যোগদান করে জামাতবন্দী হয়ে ওহাবিয়্যত প্রচার করার পক্ষে শরীয়তের কোন প্রমাণ তো নেইই বরং উল্টো তাদের মুরব্বীদের ফতোয়া কঠোরভাবে নিষেধই পাওয়া যায়। সহীহ হাদীস শরীফে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন ইয়া কুম-ওয়া-ইয়া-হুম (তোমরা তাদের কাছে যেওনা তাদেরকে তোমাদের কাছে আসতে দিওনা)। অথচ এ ইজতিমা আসলে তাবলীগীরা তো আছেই তাদের সঙ্গে সরলপ্রাণ মুসরমানগণ জরুরি কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে ওদিকে ধাবিত হয়। অফিস-আদালত, এমনকি হাসপাতাল-ক্লিনিকের কাজ-কর্ম পর্যন্ত ব্যাহত হয়। সরকারকে ব্যাস্ত থাকতে হয়, তাদেরকে সামাল দিতে। রেল কর্তৃপক্ষ ঠিকমত ভাড়া পায় কিনা তাও সন্দেহপূর্ণ।
পরিশেষে, কারো নিছক বাহ্যিক অবস্থা দেখে ভুলে না গিয়ে তার মূল ও প্রকৃত অবস্থার খোজ-খবর নিয়ে পা বাড়ানোই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। অন্যথায়, মহাক্ষতির সম্মুখীন হওয়া অনিবার্য। উপরিউক্ত বর্ণনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট হর যে, তাবলীগ জামাত ও তাদের ইজতিমার বাহ্যিকরূপ যা-ই হোক না কেন তাদের মূল হচ্ছে ওহাবী খারেজীর মতবাদ অনুসরণ। তাদের আসার উদ্দেশ্যেই হচ্ছে এ দেশে ওহাবী মতবাদ প্রচার করা। এ মতবাদ সুন্নী মতাদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই তাদের ইজতিমা ও মুনাজাতেরও কোন গুরুত্ব নেই। ইসলামে তাবলীগ বা অমুসলমানদের নিকট ধর্মপ্রচার এবং তালীম বা দ্বীনের বিসয়াদির শিক্ষাদানের গুরুত্ব আছে সুতরাং এ তাবলীগ ও তা‘লীমের প্রসার উভয় জগতের কল্যাণ বয়ে আনবে যদি ইসলামের সঠিক রূপরেখার (সুন্নী মতাদর্শের) প্রচারণা ও শিক্ষা দেওয়া হয়। সুখের বিষয় যে, মাওলানা ইলিয়া আত্ত্বার ক্বাদেরী রেজভী সাহেব দাওয়াত-ই ইসলামী প্রতিষ্ঠা করে মুসরমানদের এ চাহিদা পূরণ করেছেন। সবুজ পাগড়ী তাদের বিশেষ চিহ্ন। সুন্নাতের অনুসরণ তাদের ভূষণ। তাই, এ বিকল্প। আসুন আমরা যেন সবসময় সুন্নী মতাদর্শের উপরই অটল থাকতে পারি। আল্লাহ পাক তাওফ্বীক্ব দিন আ-মী-ন্।
সুত্রঃ সুন্নীবার্তা
WhatsApp Channel
Join Now
Telegram Group
Join Now